প্রাণের ৭১

ইনফেকটিভ টনসিল চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

টনসিল হলো মুখগহ্বরের দুটি লিম্ফনোড গ্লান্ড, যা মুখ গহবরের পিছনে জিহবার গোড়াই গলার উপরের অংশে অবস্থিত। এগুলি সাধারণত রোগ প্রতিরোধে কাজ করে বলে অনুমান করা হয়। এরা ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুকে বের করে দিয়ে দেহকে সংক্রমণের হাত থেকে প্রতিরোধ করে। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া (স্ট্রেপটোকক্কাস) অথবা ভাইরাল ফ্লুর কারণেও টনসিল আক্রান্ত হতে পারে।
টনসিল পদাহের কারণসমূহ-
১। কোল্ডনেস বা ঠাণ্ডা লাগাজনিত ও শীতকালীন আবহাওয়া।
২। স্যাঁতস্যাতে স্থানে বসবাস, কাজ, এবং অবস্থান করা।
৩। অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান।
৪। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়া।
টনসিল প্রদাহের উপসর্গসমূহ : গিলতে কষ্ট হওয়া, জিহবা ও কর্ণমূলে ব্যথা, জ্বর এবং ঠাণ্ডালাগার অনুভূতি হওয়া, মাথা ব্যথা, গলায় ব্যথা ও ক্ষতবোধ, চোয়াল এবং গলায় স্পর্শকাতরতা, গলার দুই পাশের গ্রন্থি বা লিম্ফনোড বড় হয়ে যাওয়া, গলায় সাদা বা হলুদ দাগ থাকতে পারে, গলা খুশখুশ করে আক্ষেপিক কাশি, শিশুদের মধ্যে ক্ষুধামন্দাভাব দেখা দিতে পারে, নিঃশ্বাস নিতে ফেলতে সমস্যা, টনসিল ফুলে খুব বড় হলে খাবার খেতে বা পান করতে সমস্যা হতে পারে।
টনসিল প্রদাহের জটিলতা :
* ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী টনসিল প্রদাহ ফুলে থাকা।
* দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসনালীতে প্রতিবন্ধকতা, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
* খেতে বা গিলতে সমস্যা হওয়া।
* কথা বার্তায় জড়তা বা অস্বাভাবিকতা।
* ক্রনিক কর্ণমূল প্রদাহ।
* হার্টের কপাটিকার রোগ।
* ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস। এ ছাড়াও স্কারলেট ফিভার, বাতজ্বর এবং বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগও হতে পারে।
টনসিল ডায়াগনোসিস :
১। কফ কালচার করলে সংক্রমণকারী জীবাণু সম্পর্কে জানা যায়।
২। CBC-তে সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়তি পকাশ পায়।
৩। ফিজিক্যাল এক্সজামিন করে।
টনসিল প্রদাহে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথি এদেশের জনপ্রিয় চিকিৎসা ব্যবস্থা। বিবিসির তথ্য মতে, দেশের পায় ৬০ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। সম্পূর্ণ লক্ষণ সংগ্রহের মাধ্যমে, স্বতন্ত্র ওষুধ নির্বাচন করে অবশ্যই টনসিল প্রদাহ আরোগ্য করা সম্ভব। নির্ভুল ও সঠিক চিকিৎসার জন্য রোগীর অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারে সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। টনসিল প্রদাহ আরোগ্য করে এমন কিছু সহায়ক হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল-
Baryta Carb- প্রত্যেকবার ঠাণ্ডার পর টনসিল প্রদাহ হলে, খাবার গিলতে গেলে গলায় অস্বস্তি অনুভব হলে, গলায় প্লাগের মতো বেদনা অনুভূত হলে। ক্রনিক টনসিল চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরি ওষুধ।
Belladonna- তরুণ বা এলংইট টনসিল প্রদাহসহ জ্বর, টনসিল প্রদাহসহ উজ্জ্বল লাল দেখায়। গিলার সময় মনে হয় গলা খুবই সাং হয়ে গেছে। রক্ত সঞ্চয়ের লক্ষণ। তরল খাবার খেতেই বেশি খারাপ অবস্থা হয়। ডান টনসিল বেশি আক্রান্ত হলে।
Alumen- ক্রনিক টনসিল প্রদাহ হওয়ার প্রবণতা, গলায় শ্লেষ্মাজমা, কথা বলা এবং তরল খাবার গ্রহণের সময় গলা ক্ষত এবং শুষ্ক বোধ, গলার উভয় পাশে খুবই শুষ্কতা অনুভব করা।
Hepar Sulph- গিলতে সমস্যা সহ দীর্ঘস্থায়ী টনসিল প্রদাহ, গলায় মাছের কাঁটা থাকার মতো অনুভূতি, গলা সেলাই মতো অনুভূতি যা কান পর্যন্ত বিস্তৃত।সামান্য ঠান্ডায় টনসিল প্রদাহ।
Calcaria Phos মধ্য কর্ণের প্রদাহসহ দীর্ঘস্থায়ী টনসিল প্রদাহ, গলা ব্যথা গিলার সময় অনেক বৃদ্ধি পায়। শিশুদের ঘনঘন টনসিল প্রবণতা দূর করতে ইহা অত্যন্ত কার্যকর।
Calcaria Carb- ভালভু বড় হয় এবং টনসিল প্রদাহ হয়, গিলার সময় মনে হয় গলা সংকুচিত হয়েছে। ব্যথা গলা থেকে কান পর্যন্ত বিস্তৃত। শীতকালীন টনসিল প্রবণতা। রোগী শীতকাতুরে ও মোটাসোটার ধাতু।
Baryta Iod- টনসিল বড় হয়ে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্ধন এবং টনসিলের কাঠিন্যভাব তৈরি হয়, লিম্ফনোড বা লসিকানালী গ্রন্থি ফোলা, এটা পায়ই পুঁজ তৈরিতে বাধা দেয়।
Apis Mel- গিলার সময় কাঁটাবিধামতো ব্যথা জ্বালা, মুখ এবং গলায় শুষ্কতা, টনসিল লাল এবং টনসিলে অনেক পদাহ, তাপ বা গরম পানীয়ে বাড়ে, ঠাণ্ডা বা ঠাণ্ডা পানীয়ে ভাল অনুভব করে।
Silicea- গভীর ক্ষত ও পুঁজ প্রবণতা, এমনকি পচা ঘা বা গ্যাংগ্রিন হয়, টনসিল ফুলে গলাধকরণে বাধা তৈরি করে, টনসিল প্রদাহ, গ্রন্থিতে পুঁজ তৈরি হয়, যা সহজে আরোগ্য হয় না, গলায় পিন থাকার মতো অনুভূতি, যাতে কাশি ঘটায়, গলার বাম পাশে বেশি আক্রান্ত হয়।
Lachesis- টনসিল প্রদাহের জন্য অনেক ভালো ওষুধ, টনসিলে পুঁজ তৈরি হয়, টনসিল ফোলে যায়, ডান পাশের প্রদাহ প্রবণতার সঙ্গে বাম পাশের টনসিলে অনেক বাড়ে, গলাধকরণে অক্ষমতা, সজোরে দমবন্ধ হয়ে যায়।
Lac can- টনসিলের ঘনঘন পাশ পরিবর্তন, ক্ষত বা কালশিটে খুবই উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে, পুঁজ তৈরি হয় ডানে থেকে বামের টনসিলে, বা এপাশ-ওপাশ পরিবর্তন, বা উভয় টনসিল সমানভাবে প্রভাবিত, পায় গলার পিছনের অংশ ফোলে যায়।
Psorinum- ক্রনিক টনসিল প্রদাহ, সাব ম্যাক্সিলারি ড়ুন্থি বা উপ-চোয়াল গ্রন্থি ফোলে, গলা জ্বলে, মনে হয় গলা পুড়ে গেছে এমন অনুভূতি, লালা গিলতে গেলেও ব্যথা, টনসিলে আলসার বা ক্ষত, এ ঔষধ শীতকালীন টনসিল চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। এতে ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি গরমে উপশম আছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*