প্রাণের ৭১

এদের হাত ধরে বাংলাদেশে ক্যাসিনো কালচার শুরু

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে। গত রাতে র‍্যাব এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিভিন্ন ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে এবং অন্তত তিনটি ক্যাসিনো সিলগালা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এই ক্যাসিনো কালচার নতুন নয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগই যে এই ক্যাসিনো কালচার শুরু করেছে বলে যেমনটা প্রচার করা হচ্ছে, বাস্তবতা তেমনটাও নয়।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ক্যাসিনো কালচার শুরু করেছিলেন সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ’৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রাদার্স ইউনিয়নে ক্যাসিনো কালচার শুরু হয়েছিল। ব্রাদার্স ইউনিয়নের এই জুয়ার আসরে বিএনপির অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিও যেতেন।

 

ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্যাসিনোর মাধ্যমেই সাদেক হোসেন খোকার উত্থান। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য সে সময় মির্জা আব্বাসও মতিঝিলের ক্লাবগুলো দখল করেন। তখন আরামবাগ ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও ক্যাসিনো শুরু করা হয় মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে।

 

মির্জা আব্বাস আর সাদেক হোসেন খোকাকে অনুসরণ করে মোসাদ্দেক আলী ফালু মোহামেডান ক্লাবেও ক্যাসিনো শুরু করেছিলেন। সেখানে ভিন্নরূপে শুরু করা হয়েছিল হাউজি ব্যবসা।

 

৯১-৯৬ সালে বিএনপির আমলে একমাত্র আবাহনী ছাড়া অন্য সবগুলো ক্লাবেই জুয়া-ক্যাসিনোর বাজার বসানো হয়েছিল। বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতার তত্ত্বাবধানেই এগুলো চলছিল। এরা হলেন সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস এবং মোসাদ্দেক আলী ফালু।

 

বিএনপি চলে যাওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এই ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল বিএনপির হাতেই। পুলিশের নাকের ডগায় বসেই এই ক্যাসিনোগুলো চলেছে। সাদেক হোসেন খোকা তখন এমপি থাকার কারণে কেউ তাকে স্পর্শ করেনি। মির্জা আব্বাসের ক্যাসিনোও চলেছে ঠিকঠাক মতোই। আর মোসাদ্দেক আলী ফালু অনেক প্রভাবশালী হওয়ার কারণে মোহামেডানে হাউজি এবং জুয়ার আসরের পরিধি বেড়েছিল বহুগুণে। মোহামেডান ছাড়াও মোসাদ্দেক আলী ফালু তখন রহমতগঞ্জ ক্লাবও দখল করে নিয়েছিলেন। সেখানেও দেদারসে চলে ক্যাসিনো ব্যবসা।

 

২০০৬ এ বিএনপি পতনের পর ওয়ান ইলেভেন সরকার আসলে এই ক্যাসিনো বাণিজ্য লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সবগুলো ক্লাবেই তখন জুয়ার আসর বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম দুই বছর কোনো ক্যাসিনো ছিল না। এরপর আস্তে আস্তে ধাপে ধাপে ক্যাসিনোগুলো আবার চালু করা হয়।

 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রত্যেকটি ক্যাসিনোর সঙ্গে স্থানীয় থানা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশ আছে। তাদের সাথে আঁতাতের মাধ্যমেই এই ক্যাসিনোগুলো পরিচালিত হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ক্যাসিনোর মালিকদের সুসম্পর্কের কথা সবাই জানতো। এজন্যই এ নিয়ে কেউই মুখ খুলতো না।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*