প্রাণের ৭১

পাপিয়াকে নিয়ে বারিধারায় চাঁদা নিতে যান সাবেক এক এমপি

রাজধানীর বারিধারার একটি বাড়িতে পাপিয়ার সঙ্গে যান এক সাবেক নারী এমপি। বহুল আলোচিত বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার নতুন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে পাপিয়াকে নিয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এক সংসদ সদস্যকে বারিধারার এক বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকি দিতেই সেদিন ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন যুব মহিলা লীগের ওই দুই নেত্রী।

সেদিনের ঘটনায় বাড়ির মালিকের পক্ষে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান গ্রুপ ফোর জিডি করেছিল। জিডিতে ওই বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, চাঁদা আদায় ও অনেক অপকর্মে পাপিয়ার সঙ্গে যেতেন যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও সাবেক একজন সংসদ সদস্য। নেপথ্যে কারিগর ছিলেন দলের পদধারী আরেক নেত্রী। এদিকে ভিডিওতে থাকা সাবেক এমপি ও যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে অনুমতি চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনুমতি পেলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের আরও কয়েকজন নেত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তাভাবনা চলছে বলেও সূত্রের তথ্য। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া গত ২৫ ডিসেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডে বারিধারার ওই বাড়ির সামনে এসে থামে সাদা রঙের বিলাসবহুল জিপ। কিছুক্ষণ পরই গাড়ির দুই পাশ দিয়ে নামেন পাপিয়া ও ওই সাবেক নারী সংসদ সদস্য। মিনিট পাঁচেক গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গ্রুপ ফোর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর গাড়ি থেকে শাড়ি পরা আরেক নারী নেমে আসেন। এরপর কয়েকজন নারী ও পুরুষ সঙ্গে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করেন তিন নারী। গেটের সামনে সঙ্গীদের রেখে তিনজনই প্রবেশ করেন বাড়ির ভিতরে। এর বেশ কিছু সময় পর দুজনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় ওই বাড়ি থেকে।

ফের রিমান্ডে পাপিয়ার দুই সহযোগী : রাজধানীর বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়ার দুই সহযোগীকে ফের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইন রিমান্ডের এ আদেশ দেন। আসামিরা হলেন নরসিংদী সদরের ১১২/১ পূর্ব ব্রাহ্মণদি এলাকার ইউসুফ খন্দকারের ছেলে মো. সাব্বির খন্দকার ও গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার ভদুন পুবাইলের শেখ আশফাকুর রহমানের মেয়ে শেখ তায়িবা নুর। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সাইরুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে জঘন্যতম অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। তাদের বিভিন্ন অসামাজিক অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আসামিরা সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্য হয়ে অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, চোরাচালান, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল-বেদখলসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া আসামিরা অবৈধভাবে আয়ের মধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জন করেছেন। তাই আসামিদের আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আরও রিমান্ড প্রয়োজন। এদিকে নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মো. মফিজুর রহমান সুমন ওরফে মতি সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, আসামিরা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও স্বল্পশিক্ষিত নারীদের প্রলোভনের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত ও ব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য করে অর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এ ছাড়া আসামিরা গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে গত বছর ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর এবং চলতি বছর ৫ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হোটেলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটসহ আরও দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। ভাড়া বাবদ আসামিরা ২ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৭ টাকা বিল পরিশোধ করে, যা আসামিদের দৃশ্যমান আয় ও ব্যয়ের সঙ্গে চরম অসঙ্গতিপূর্ণ। এর আগে পাপিয়া ওরফে পিউসহ ওই চারজনকে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সে সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল নোট, ৩১০ ভারতীয় রুপি, ৪২০ শ্রীলঙ্কান রুপি ও সাতটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে যে আয় করতেন, তা দিয়ে হোটেলে বিল দিতেন কোটির টাকার ওপরে। ওয়েস্টিনের ওই প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ইন্দিরা রোডে পাপিয়াদের দুটি অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান

চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট ও কিছু বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করার কথা জানায় র‌্যাব। পরে পাপিয়াসহ গ্রেফতার চারজনকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়। জাল মুদ্রা উদ্ধারের ঘটনায় ওই থানায় একটি মামলা করা হয়, যেখানে চারজনকেই আসামি করা হয়।

 

এ ছাড়া অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় আরও দুটি মামলা করা হয় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*