প্রাণের ৭১

পুলিশের এসআইয়ের কোপে ক্ষতবিক্ষত ৪ জন, স্ত্রীকে দিয়ে উল্টো মামলা

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বসা পারিবারিক শালিসে প্রতিপক্ষের মা সহ তিন সহোদরকে বীভৎস ভাবে কুপিয়ে জখম করেছে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। বেপরোয়া আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত দুই সহোদর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মাথা, চোয়াল ও ডান হাতের কব্জি কেটে গিয়ে চির পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন আহতদের একজন।

 

গুরুতর আহতরা হলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রং মহল এলাকার মরহুম ডা. আবু তাহেরের ছেলে হাফেজ আবু দারদা (৩৫), আবদুল্লাহ আল নোমান (৩০), কামরুল হাসান, তাদের মা রহিমা আক্তার, তার ছেলের বউ ইয়াছমিন আক্তার।

এএসআই বখতিয়ার বৈরাগীরখীল গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমদের ছেলে। তিনি বর্তমানে উখিয়ার ময়নারঘোনা ক্যাম্পে দায়িত্বরত রয়েছেন। রবিবারও তিনি ক্যাম্পে দিব্যি ডিউটি করেছেন বলে জানিয়েছে তার পারিবারিক সূত্র।

 

 

 

আহতদের মধ্যে, মাথা, চোয়াল ও ডান হাতের কব্জি কেটে গিয়ে চিরপঙ্গুত্বের দিকে যাচ্ছেন হাফেজ আবু দারদা। ঘাড়ের রগের বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে আবদুল্লাহ আল নোমানের। হামলাকারী এএসআই বখতিয়ার উদ্দিন ভুট্টো ও আহতরা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।

 

১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বৈরাগীরখীল এলাকায় সংগঠিত ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রধান করে আহতদের পরিবার মামলা করে। কিন্তু অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা তার স্ত্রী এবং ওই মামলার আসামি রেহেনা পারভিন লিপিকে বাদি বানিয়ে আহতদের আসামি করে থানায় পাল্টা মামলা করেছেন। ফলে ঘটনার ৭দিন অতিবাহিত হলেও আহতদের মামলার প্রধান আসামি এএসআই বখতিয়ার উদ্দিন ভুট্টো গ্রেফতার হননি।

 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এএসআই বখতিয়ারের মামা এবং আহতদের চাচা ছৈয়দুল হক মুরাদ বলেন, পারিবারিক বন্টনের বিরোধীয় জমি নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত শালিস বসে। বৈঠকে দু’পক্ষ তর্ক-বিতর্কে জড়ায়। এক পর্যায়ে আকস্মিক ভাগিনা পুলিশ কর্মকর্তা বখতিয়ার ও জসিম ধারালো কিরিচ হাতে দলবল নিয়ে ভাতিজা হাফেজ আবু দারদা, নোমানদের ওপর হামলা করে। উপস্থিত সবার সামনেই বখতিয়ারের কিরিচের কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আমার ভাতিজারা। আইনের লোক হয়ে বখতিয়ারের এমন কাজ সবাইকে হতবাক করেছে।

 

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন আবদুর রহমান জানান, আবু দারদা ও নোমান নামে চিকিৎসাধীন দু’জনের অবস্থা গুরুতর ছিল, এখন সুস্থের পথে। তবে, আবু দারদার মাথা, চোয়াল ও ডান হাতে কোপানোর জখম মারাত্মক। চিকিৎসায় সেরে উঠলেও ভবিষ্যতে তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন কিনা সন্দেহ আছে।

 

 

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান ঘটনা এবং মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলার ঘটনায় এএসআই বখতিয়ার উদ্দিন ভুট্টোকে প্রধান আসামি করে হামলাকারী ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন আহত আবদুল্লাহ আল আরমান। আর দু’পক্ষের হামলা যেহেতু এএসআই বখতিয়ার তার স্ত্রীকে বাদি করে প্রতিপক্ষকে আসামি পাল্টা মামলা করেছে। উভয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

 

এক ঘটনায় দুটি মামলা নেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওসি বলেন, দু’পক্ষ আত্মীয়। খোঁজ নিয়ে জেনেছি হামলার ঘটনা নোমানরাই শুরু করে। কিন্তু পুলিশ সদস্য বখতিয়ার মারাত্মক ভাবে কুপিয়ে অপরাধ গুরুতর করেছেন। তার শাস্তি অবধারিত। আমি উপর মহলকে লিখিত জানিয়েছি। তার কর্মস্থলে সেই তথ্য পৌঁছালে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে এএসআই বখতিয়ার উদ্দিন ভুট্টোর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ঘটনাটি জেনেছি-বখতিয়ার রাঙ্গামাটি জেলায় কর্মরত। কিন্তু ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে সে ডিউটিতে যুক্ত থাকার কথা নয়। মামলা নথিভূক্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রুজু হবে। তাকে দুটাই মোকাবিলা করতে হবে। ঘটনা প্রমাণিত হলে, সাসপেন্ড হবে এতে সন্দেহ নেই। ঘটনার বর্তমান অবস্থা জেনে তার বিষয়ে আপডেট জানানোর কথা বললেও তিনি আর কথা বলেননি।

ইত্তেফাক






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*