প্রাণের ৭১

কবি গুরুর কথা সেদিন মিথ্যে হলেও তোমার বাঙালি আজও মানুষ হতে পারেনি পিতা!: মোহাম্মদ হাসান

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বরে প্রথম রেলগাড়ি চলেছিলো বর্তমানের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে, থেমেছিলো কুষ্টিয়ায় জগতি রেলস্টেশনে। আর ২০২০ সালের নভেম্বরে রেল নতুন বার্তা দিলো এক ঘন্টারও কম সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে পৌঁছে দিবেন।

৯০ এর দশক থেকে টিভির পর্দায় বিজ্ঞাপনে শ্রদ্ধেয় আবুল হায়ত বলতেন, “বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভাবতে বেশ ভালোই লাগে”। যাপিত জীবনে প্রথম যখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছি তখন মেঘনা ও দাউদকান্দির দুই ফেরী ডিঙ্গিয়ে রাজধানীতে পৌঁছেই দেহখানি ন্যূজ হয়ে পড়েছিলো। সেই যে সকালে দুই খানা রুটি খেয়ে বেড়িয়ে গাড়িতে বসেছি তাবাদে চলতি পথে খিরা বা শশা, চানাচুর, ছাড়া কিছুই না। রাত ৭/৮ ঘটিকায় শরীরটা বেয়াড়া হওয়াতো স্বাভাবিক। দিনে দিনে ফেরী ব্রীজ হলো, শরু রাস্তা থেকে দুই লেনের ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক আজ চার লেনের। আগামীতে ৬-৮ লেনের পথে। এখন ৪ঘন্টায় অনায়াসে চট্টগ্রাম থেকে রাজধানীতে পৌঁছা যায়। ঐ যে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে আর এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনের তাগিদে আকাশযানে নয় ট্রেনে চেপে পৌঁছা যাবে এক ঘন্টারও কম সময় মাত্র ৫৫ মিনিটে ভাবতে বেশ ভালোই লাগছে।

নকশা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। উচ্চগতির এ রেলসেবা চালু হলে ৬ ঘণ্টা নয়, ননস্টপে মাত্র ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়া যাবে।
ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে এবং দিনে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে। এর জন্য একজন যাত্রীর ২ হাজার টাকার মতো ভাড়া গুনতে হবে। রুট ম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তাবিত রেলপথে মোট ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম।

যদি এসব স্টেশনে ৩ মিনিট করে থামে তাহলে আরও ১৮ মিনিট সময় বেশি লাগবে। সেক্ষেত্রে ৭৩ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছানো যাবে। আর যদি না থামে তাহলে ৫৫ মিনিটেই চট্টগ্রাম টু ঢাকা।

বর্তমানে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব দাঁড়ায় ৩২১ কিলোমিটার। উচ্চগতির ট্রেনের জন্য ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা রুটটি ব্যবহার করা হবে না, সরাসরি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ তারপর কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে বুলেট ট্রেন। এক্ষেত্রে ৯৪ কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হবে ট্রেনটির। অর্থাৎ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের ৩২১ কিলোমিটারের যে রেলপথ রয়েছে। তাতে উচ্চগতির রেলপথটি আগের রেলপথের চেয়ে প্রায় ৯৪ কিলোমিটার কম হবে। এক্ষেত্রে উচ্চগতির রেলপথ দাঁড়াবে ২২৭ কিলোমিটার।

রেলের সেকাল ১৮৬২ সালের কথা; ১৫ নভেম্বরে প্রথম রেলগাড়ি চলেছিলো বর্তমানের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে, থেমেছিলো কুষ্টিয়ায় জগতি রেলস্টেশনে।

১৮২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জর্জ স্টিফেনসনের আবিষ্কৃত বিশ্বের প্রথম স্টিম ইঞ্জিন রেলের যাত্রা শুরু হয়। “লোকোমোশান” নামের সেই ট্রেনটি ব্রিটেনের স্টকটন থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরের ডালিংটন পর্যন্ত গিয়েছিলো, প্রথম চালক ছিলেন জর্জ স্টিফেনসন নিজেই। ওই সময়টাতে বিশ্বজুড়েই যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রেলপথের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে। ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকা ভারতও এদিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলো না। রাজনৈতিক ও ভৌগলিক সুবিধা এবং বাণিজ্যিক স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ব্রিটিশ সরকার সেই সময়েই ভারতে রেলপথ স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলো।

কয়েক বছর পর ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল পেনিনসুলার রেলওয়ে নামক কোম্পানির নির্মিত প্রথম যাত্রীবাহী বাষ্পচালিত ট্রেন ইঞ্জিন ভারতীয় উপমহাদেশে যাত্রা শুরু করে। মুম্বাইয়ের বোরিবন্দর থেকে থানে পর্যম্ত ৩৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় ৪০০ জন যাত্রী নিয়ে। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৮৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেলপথ চালু করার মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রথম রেলপথের সূচনা হয়। এরপর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতার শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত ব্রডগেজ (৫ ফুট ৬ ইঞ্চি) রেলপথ চালু করে।

শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত যে রেলপথ চালু করা হয়েছিলো, সেটাকে সেই বছরেই বর্ধিত করে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার (সাবেক নদীয়া) জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ করা হয়। তারপর ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পশ্চিম বাংলার গেদে–বাংলাদেশের দর্শনা সীমান্ত পার হয়ে সরাসরি ট্রেন এসেছিলো বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জগতি পর্যন্ত।

তবে বিশ্ব এগিয়ে চলছে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমরা বাঙালি রবী ঠাকুরের মানুষ হতে পেরেছি!
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতিরা পিতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথকে বলেছিলেন, ” কবি গুরু তোমার কথা মিথ্যা হয়েছে, আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে “। বাঙালি মানুষ হয়েছে কি না জানিনা তবে শত ষড়যন্ত্র, নাশকতা ডিঙ্গিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা পরিপূর্ণ হচ্ছে তাঁরই যোগ্য তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। আর অকপটে মূখ ফসকে বেড়িয়ে আসে, ” পিতা তুমিও সত্য বলনি, তোমার বাঙালি আমরা এখনো মানুষ হতে পারিনি”!

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
তথ্যসূত্রঃ মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেইজ ও সংগৃহীত।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*