প্রাণের ৭১

কারো উস্কানির ফাঁদে পা দিবেন না : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অশান্তি তৈরির পথ পরিহার করে কারো উস্কানির ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তি পরিহার করার কথা বলে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি স্থায়ী বা চিরস্থায়ী কোনো বন্দোবস্তু না। কোটা পদ্ধতি অপরিবর্তনীয়ও না। সময়ের প্রয়োজনে কোটা পদ্ধতির প্রয়োগ পরিবর্তন হয়েছে। কোটা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, মূল্যায়ন, পুনঃমূল্যায়ন, সংস্কার হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতেই পারে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে তার দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সন্মেলনে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কোটা পদ্ধতি চালু করেনি। বরং শেখ হাসিনার সরকার কোটা পদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি সুস্পষ্টকরণ ও যৌক্তিকিকরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে কোটা পদ্ধতির অনেক সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী-“সকল সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটার কোনো পদযোগ্য প্রার্থীর অভাবে পূরণ করা সম্ভব না হলে সে সকল পদ মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে পূরণ করিতে হইবে”-এ মর্মে ৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে জারিকৃত সরকারি প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা আবারও সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বাস্তব সত্য হলো, মেধা কোটা ৪৫ ভাগ হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই বাস্তব মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৭০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। তাই কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।

মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটার প্রার্থীদেরই সবার সাথে প্রতিযোগিতামূলক লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় উল্লেখ করে হাসানুল হক ইনু বলেন, নারী, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে টেনে তোলার জন্য কোটা প্রথা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।

কোটা পদ্ধতি প্রয়োগে সরকারের এই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও অবস্থানের প্রতিফলন বেশ আগে থেকেই ঘটতে শুরু করে। তা সাম্প্রতিককালের কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে তা দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার মেধা কোটায় নিয়োগ ৭৭.৪০ ভাগ, ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধা কোটায় নিয়োগ ৬৭.৪৯ ভাগ, ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধা কোটায় ৭০.৩৮ ভাগ নিয়োগ লাভ করেছেন। এ ফলাফল বিশ্লেষণে মেধা কোটা ৪৫ ভাগ হলেও বাস্তবে মেধায় গড় নিয়োগ লাভ ৭০ ভাগের বেশি বলেও বলেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না দিলেও বিভিন্ন ব্যক্তি মহল পত্র-পত্রিকা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সকল বক্তব্য দিচ্ছেন তা দেখে মনে হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েই তাদের আপত্তি।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা তাদের গায়ে জ্বালা ধরিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা কোটা পদ্ধতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এমন ভাষায় অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করে চলেছেন যে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অন্যায় করে ফেলেছেন।

ইনু বলেন, দেশের সব নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া-পাওয়া থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের কাছে কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে পারবে না। ওই সকল ব্যক্তি মহল শুধু মুক্তিযোদ্ধাদেরই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও চরম অবমাননাকর কটুক্তি করে চলেছেন।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে গভীর রাতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে ছাত্র-ছাত্রী আহত হওয়া, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগসহ অনাকাঙ্খিত দুঃখজনক সব ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত, মর্মাহত এবং একই সাথে উদ্বিগ্ন বলেও উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধসহ যে সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত হয়েছে তা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ বলে আমরা বিশ্বাস করি না। এ সহিংসতা-নাশকতা-অন্তর্ঘাত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ না। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে যারা দেশে শান্তিও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, যারা জল ঘোলা করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারাই এসব করেছে।”






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*