প্রাণের ৭১

কেন রিয়াল ছেড়ে যাচ্ছেন জিদান?

ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে এখনো সময় লাগছে অনেকের। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলে জিনেদিন জিদানকে আর না–ও দেখা যেতে পারে রিয়াল মাদ্রিদের ডাগআউটে—এমন কিছু আগেও শোনা গেছে। কিন্তু ২৬ তারিখের পরীক্ষায় তো উতরে গেছে রিয়াল। টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন জিদান। এ মৌসুমটা তাই স্বস্তি নিয়ে শেষ করেছিল ক্লাবটির সমর্থক। কিন্তু আজ জরুরি এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে হঠাৎ সবাইকে চমকে দিলেন জিদান। রিয়ালের কোচ হিসেবে আর থাকবেন না এই কিংবদন্তি।
মাত্র আড়াই বছরে ৯টি শিরোপা এনে দিয়েছেন জিদান। এমন সাফল্যও তাঁকে সিদ্ধান্ত থেকে সরানো যায়নি। বিস্মিত ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে পাশে নিয়ে ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন জিদান। নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন কেন প্রিয় ক্লাবের দায়িত্বে আর থাকবেন না—
‘আগামী মৌসুমে আমি আর রিয়াল মাদ্রিদের কোচ থাকব না। এ দলের জয় অব্যাহত থাকা উচিত কিন্তু তিন বছর কাটানোর পর একটা পরিবর্তন দরকার। একটু ভিন্ন কিছু, ভিন্ন এক বার্তা। সব ব্যাপারে ভিন্নভাবে এগোনোর চিন্তা। আমি জানি, এটার সঙ্গে জড়িত সবার জন্য খুব অদ্ভুত এক সময় এটি। কিন্তু আমার মনে হয়, এটাই সঠিক সময়।’
‘এ কারণেই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ক্লাবকে আমি ভালোবাসি এবং সভাপতিকেও। তিনি আমাকে এত বিশাল এক ক্লাবে এনেছেন এবং আমি এ জন্য সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, একটা পরিবর্তন দরকার। তাই আগামী মৌসুমে থাকছি না।’
‘আমি যদিও আগামী মৌসুমে এখানে ম্যানেজার থাকতাম, তাহলে আমাদের জন্য খুব কঠিন হতো কোনো শিরোপা জেতা। এ মৌসুমে কোপাতেই দেখেছেন এটা । ঘরোয়া টুর্নামেন্টের কথা ভুলে যেতে পারেন না আপনি। আপনাকে জানতে হবে কখন থামতে হয়। দলের জন্য এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। আমি কোচিং করে ক্লান্ত না। আমি তিন বছর ধরে ম্যানেজারের দায়িত্বে আছি কিন্তু এ ক্লাব ছাড়ার এটাই সময়।’
‘অবশ্যই আমি ফিরতে পারি। আমি সব সময় এ ক্লাবের কাছেই থাকব, কারণ এটা আমার হৃদয়ের খুব কাছের ক্লাব। অনেকেই বুঝতে চাইবে না কিন্তু এটাই সঠিক সময়। খেলোয়াড়দের জন্যও। আমি কীভাবে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও বেশি চাই? বড় খেলোয়াড়দেরও পরিবর্তন দরকার।’
‘আমরা অনেক কঠিন সময় কাটিয়েছি। মাঝে মাঝে অনেক কঠিন ছিল। কিন্তু সমর্থকদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে এটাও দরকার হয়। কখনো খেলোয়াড়দেরও এটা দেখা দরকার।’
‘আমরা স্কোয়াডের শক্তি বাড়ানো নিয়ে কথা বলেছি এবং নতুন খেলোয়াড় আনা নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এ কারণে আমি যাচ্ছি না। কিন্তু কোচিং করতে চাইলে, এটাও তো কাজের অংশ। পরিবর্তন দরকার। কিন্তু আমি এর মধ্যে জড়াব না। আমি এ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে আসিনি।’
‘কিছুই না। দলের যে চাহিদা, সেটা অনেক চাপ ফেলে। সেদিন (চুক্তি নবায়ন করার কথা বলার দিন) হয়তো এমনটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে আমার ভিন্ন কিছু মনে হয়েছে, মত পরিবর্তন করেছি। আমি সব সময় বলেছি, এ ক্লাবে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে এবং আমার সময় শেষ হয়েছে।’
‘আমি কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করেছি। সৎ থাকার চেষ্টা করেছি, ক্লাবকে গর্বিত করার চেষ্টা করেছি। আমি সব সময় আমার খেলোয়াড়ের সম্মান পেয়েছি এবং এটা ছাড়া কিছু অর্জন করা কঠিন। আমার সিদ্ধান্ত আমার সিদ্ধান্ত। খেলোয়াড়দের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু তিন বছর ধরে এত উচ্চমান ধরে রাখা কঠিন। আমি জন্মগতভাবে বিজয়ী এবং আমি জিততে ভালোবাসি। আমি হারতে অপছন্দ করি। যখনই মনে হয়েছে আমি জিতব না, তখনই মনে হয়েছে পরিবর্তন দরকার। এই খেলোয়াড় কিংবা ওই খেলোয়াড়কে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি নিজেই চলে যাব বলেছি।’
‘আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত হলো যখন আমি খেলোয়াড় হিসেবে রিয়ালে যোগ দিলাম। খেলোয়াড় হিসেবে এখানে আমার শেষটা ভালো হয়েছে এবং কোচ হিসেবেও সেটাই হয়েছে।’
‘আমি সার্জিও রামোসের সঙ্গে খেলেছি এবং সে আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে।’
রিয়ালের হয়ে কোচ জিদানের সাফল্য
ম্যাচ : ১৪৯
জয় : ১০৪
ড্র : ২৯
হার : ১৬
গোল : ৩৯৩
শিরোপা : ৯






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*