প্রাণের ৭১

গাড়ি ভাঙ্গছিলো কে?

সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের তৃতীয় দিন। বেলা ১১টা। আন্দোলনরত একদল ছাত্র ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ ও বাসের লাইসেন্স পরীক্ষা শেষে মিছিল করে কেবলই সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে এসেছে। তারা সেখানে স্বাধীন পরিবহনের একটি বাসের চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল। শাহবাগের দিক থেকে আসা বাসটিতে আগে থেকেই সাদা ইউনিফর্ম পরা কিছু ছাত্র ছিল। তারাই গাড়িটি কারওয়ান বাজার সিগনালে থামায়। গাড়িটি চালাচ্ছিল ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর। তার কোনো লাইসেন্স না থাকায় ছাত্ররা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা নেমে যান, আমরা গাড়ির কিছু করব না। এই গাড়ি নিরাপদ না।’
গাড়িটি তখন ঘিরে ছিল স্কুলের নীল পোশাক পরা প্রায় দুই-আড়াই শ ছাত্র। হঠাৎ ইউনিফর্ম ছাড়া সাদা টি-শার্ট পরা এক যুবক ইট নিয়ে গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে ফেলে। তড়িঘড়ি করে ছাত্ররা তাকে ধস্তাধস্তি করে আটকায়।
পুলিশ তখন সার্ক ফোয়ারা চত্বরে দাঁড়িয়ে দেখছিল।
ছাত্ররা ভাঙচুরকারী যুবককে পাকড়াও করে দূরে দাঁড়ানো পুলিশের কাছে নিয়ে যায়। ছাত্ররা বারবার বলিছল, ‘তুই গাড়ি ভাঙলি ক্যান? আমরা কি ভাঙচুরের আন্দোলন করতেছি?’। তারা যুবকটিকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
এ প্রতিবেদকের জিজ্ঞাসার জবাবে যুবকটি নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেন। পুলিশের হাতে থাকা যুবকটির সঙ্গে এই প্রতিবেদকের যে কথাবার্তা হয়:
প্রশ্ন: আপনি কে, আপনার পরিচয় বলেন।
যুবক: আমি হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ছাত্র।
প্রশ্ন: আপনি ঢাকায় এসেছেন কেন?
উত্তর: গাজীপুরে ভুটের (ভোট) কাজে আসছি।
প্রশ্ন: কার ভোটের কাজে?
উত্তর: আমার ভুট।
প্রশ্ন: গাজীপুরে কিসের ভোট আপনার? আপনার বাড়ি তো হবিগঞ্জে বললেন।
উত্তর: আমার কাজে, মানে কলেজের কাজে।
প্রশ্ন: আপনি কোনো দল করেন?
উত্তর: ছাত্রলীগ।
প্রশ্ন: কোন ইউনিট, কোন শাখা?
উত্তর: হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ।
প্রশ্ন: আপনার ইউনিটের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির নাম বলেন।
উত্তর: আমার নাম নাঈম আহমেদ নাঈম। আমার নেতার নাম সাঈদুর রহমান।
প্রশ্ন: তিনি কি সভাপতি?
উত্তর: জি।
কথা বলার সময় বারবার হাত ঝাপটা দেওয়ায় পুলিশ তাঁকে হাতকড়া পরায়। এরপর পুলিশ নাঈম আহমেদ পরিচয়ে দেওয়া যুবকটিকে টানতে টানতে আরেক দিকে নিয়ে যায়। আর ছাত্ররা মিছিল করে চলে যায় শাহবাগের দিকে।
তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় হবিগঞ্জ ছাত্রলীগ জেলা কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ছাত্রলীগের এ নেতা শাহ নাঈম নামের কর্মীর কথা স্বীকার করেন। তবে নাঈম আহমেদ নাঈমের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

বাসস






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*