প্রাণের ৭১

চকরিয়ায় গরু চুরির অপবাদে মা মেয়েকে বেঁধে এলাকা ঘুরিয়ে পিটালেন ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল

মোহাম্মদ হাসানঃ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির অপবাধ দুই নারীকে বেঁধে নির্যাতন করে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল জনসম্মুখে। সেই চিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বিভিন্ন লোক বিভিন্ন রকমের পোষ্ট করছেন। অনেকে বলছে বৃদ্ধার মেয়েকে বিয়ে করতে না পরায় হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম পরিকল্পিত ভাবে তাদের উপর গরু চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, চকরিয়া বা হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির ঘটনা নতুন নয়। ২০১৮ সালের আগস্টে গরু চুরি করে নেয়ার সময় ৫ জন কে আটক করা হয়েছিলো।

সেদিন ১৭ আগস্ট শুক্রবার সকালে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের মইক্যাঘোনা পাড়ার নুরুল আজিমের বসতবাড়ির উঠান থেকে দুটি গরু চুরি করে পিকআপে করে পালাচ্ছিল চোরের দল। পিকআপ ভ্যানটি এক কিলোমিটার দূরে আলীপুর এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় জনতার সন্দেহ হয়। এ অবস্থায় গরুবোঝাই পিকআপ ভ্যানটিসহ আটক করা হয় পাঁচজনকে।

আটককৃতরা হলো চকরিয়া উপজেলার বেতুয়া বাজারের নয়াপাড়ার আবদুস সালামের ছেলে সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাহুলী এলাকার মো. রফিকের ছেলে মো. জসীম উদ্দিন, শিকলবাহা এলাকার নুর আলমের ছেলে মো. নেজাম উদ্দিন, একই এলাকার মো. জাফরের ছেলে মোহাম্মদ হৃদয় ও মো. ইউনুছের ছেলে ওবাইদুল হক সোহেল। এ ছাড়া এ সময় মইজ্যারটেক এলাকার আলমগীর মাঝির ছেলে মো. জসীম উদ্দিন পালিয়ে যায়।

একই বছর ৩ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর চারটার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন থেকে একটি গরুর বাছুর চুরি করে বড়ইতলী আভ্যন্তরীন সড়কে সিএনজি অটোরিকশায় তোলার সময় স্থানীয় জনতা রোড ব্যারিক্যাড দিয়ে দুই চোরকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করেন।

আটককৃতরা হলো,বড়ইতলী ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়া এলাকার জমির উদ্দিন এর ছেলে আরমান,অপরজন হারবাং ইউনিয়নের মসজিদ মুড়া এলাকার জয়নাল আবেদীন এর ছেলে মোঃ মানিক।

এরপর ২০১৯ সালে চকরিয়ায় গরু চোর সিন্ডিকেট চুরির ধরন পাল্টিয়েছে। আগে জীবিত চুরি করে নিয়ে গেলেও এখন গরু জবাই করে নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিয়ে গরুর মাংস নিয়ে যায়

এ ঘটনা ঘটেছে চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পাহাড়তলী গ্রামের নির্জন পাহাড়ী এলাকায়।
জানা যায়, ২৬ অক্টোবর শনিববার রাতে পূর্ব কাকারা গ্রামের মোহাম্মদ হোছেনের পুত্র মোসলেহ উদ্দিনের দুইটি ও নুরুল কবিরের পুত্র মোহাম্মদ ইউনুছের একটি গরু এবং পাহাড়তলীর শফি উল্লাহর পুত্র আলী আহমদের একটিসহ মোট চারটি গরু চুরি হয়। চোরেরা চিরিংগা মানিকপুর সড়কের আমান উল্লাহর ঘোনা নামক স্থানে গিয়ে চারটি গরু পা বেঁধে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু গরুগুলো গাড়িতে তুলতে ব্যর্থ হয়ে আলী আহমদের এক লাখ টাকা মূল্যের গরুটি জবাই করে নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিয়ে গরুর মাংস নিয়ে পালিয়ে যায়। গরুর মালিকেরা গরু খুঁজতে গিয়ে তিনটি গরু পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করলেও একটি গরু জবাই করে নাড়িভুঁড়ি ফেলে পুরো মাংস নিয়ে যাওয়ার আলামত খুঁজে পায়।

একই বছর ২ আগস্ট চকরিয়ায় দুটি বসতবাড়ির গোয়াল ঘর থেকে চারটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। পরে গরু মালিক ও পুলিশ খোঁজাখুঁজির পর পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের কদ্দাচোরা এলাকার জনৈক জাফরের খামারের পার্শ্ববর্তী বিল থেকে শুক্রবার ভোররাত ৫টার দিকে চুরি হওয়া দুটি গরু উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ খামারের অদূরে চোর দলের ফেলে যাওয়া একটি নাম্বারবিহীন মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। এদিকে চুরি হওয়া আরও দুটি গরু উদ্ধারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখলে চোরের দল পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের ইলিশিয়া বাজারের পূর্বপার্শ্বে সড়কের উপর গাছের সাথে গরু দুটি বেঁধে ছটকে পড়লে পরে গরুর মালিক গিয়ে গরু দু’টি উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। শুক্রবার ভোররাতে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের খোঁনারজুম এলাকার মাস্টার রফিক উদ্দিন ও প্রবাসী জয়নাল আবেদীনের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে এ গরু চারটি চুরির ঘটনা ঘটে।

গত ডিসেম্বরে দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় গরু চোরেরা বেপরোয়া চকরিয়ায় আতঙ্কে খামারি-গৃহকর্তা শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, চকরিয়ায় বেপরোয়া এখন গরু চোর সিন্ডিকেট। উপজেলার পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের খামারি ও গৃহস্থালী সদস্যরা প্রতিনিয়ত গরু চোর আতঙ্কে ভোগে। বেশিরভাগ গরু চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নেয় না। গুটিকয়েক মালিক মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার কসাইপাড়ার আবু তাহের নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি চোরাই গরু উদ্ধার হয়। তবে অভিযুক্ত আবু তাহের পলাতক রয়েছে। সোমবার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বাইন্যারকূমের মনজুর আলমের গোয়াল ঘর থেকে গরুটি চুরি হয়। গরু চুরির ব্যাপারে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এখন গরু চোররা নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। আগে চোরাই গরু অন্য এলাকায় নিয়ে বিক্রি করলেও এখন পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে জবাই করে গরুর মাংস গ্রামে ও বাজারে বিক্রয় করছে। গত মাসে থানায় পৃথক দুটি গরু চুরি মামলা হয়। দুটি চুরির ঘটনায় ৬টি গরু চুরি হলেও উদ্ধার হয় দুটি। চোরের দল দুটি অন্যত্র বিক্রয় করলেও অপর দুটি জবাই করে গ্রামীণ বাজারে বিক্রয় করেছে। উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটিতেও গরু চোরের গড়ফাদার হিসেবে নাম উল্লেখ করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। যেকোন উপায়ে অসহায় মানুষের শেষ সম্বল গরু যাতে চুরি না হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

উপরোক্ত ঘটনা গুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে ঐ এলাকায় গরু চুরি হর হামেশায় হয়ে আসছে তবে এযাবত গরু চুরির অভিযোগে কোন নারীর নাম আসেনি। কেউ কখনো বলেও নি। তাছাড়া নারী তাও মা-মেয়ে গরু চুরি করবে বিষয়টি কেমন ঠেকে।

তারপরও যদি কোন নারী চোর শনাক্ত হলেও তাকে যথাযথ পক্রিয়ায় আইনের আওতায় নেয়া যেত। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ কাউকে শারীরিক নির্যাতন করার এখতিয়ার নেই সেখানে চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম কিভাবে এই মধ্যযুগীয় কায়দায় এহেন কান্ড ঘটালেন তা সচেতন মহলের বোধগম্য নয়। তবে সকলে এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর আইনের আওতায় আসুক এই চাওয়া সকলের।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*