প্রাণের ৭১

জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে কক্সবাজার খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বিশ্বে এই প্রথম

মোহাম্মদ হাসানঃ বিশ্বের বৃহত্তর সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য যাতে পর্যটকরা উপভোগ করতে পরে সে লক্ষ্যে কক্সবাজারকে বিশ্বের উন্নত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা । আর এ লক্ষে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আজ ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০০ পরিবারকে ফ্লাট হস্তান্তরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে গণভবন থেকে ফ্ল্যাট হস্তান্তর কাজের উদ্বোধন শেষে উপকারভোগীদের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে চার হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার ফ্ল্যাট পাবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ছয়শটি পরিবারকে আজ ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপকূলবাসীকে বেশি করে গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে বিশ্বে ইতিহাস গড়ল টানা তৃতীয় মেয়াদের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে সরকার গঠন করে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে এবার। আর আজ তিনি উদ্বোধন করলেন স্বপ্নের সেই ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’, জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে এমন কোনো প্রকল্প বিশ্বে এই প্রথম।

আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৬০০ পরিবারের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছেন শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে হস্তান্তরের জন্য ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি অত্যাধুনিক ভবন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই ২০টি ভবনের নাম চূড়ান্ত করেছেন— ১) দোঁলনচাপা, ২) কেওড়া, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কোরাল, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) বাকখালী, ১৯) ইনানী ও ২০) সাম্পান।

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪০৯টি পরিবার কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পাড়ায় আশ্রয় নেয়। সেখানে সরকারি খাস জমিতে তারা বসবাস করছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে ফের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে ওই এলাকায়। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সফর করেন তিনি। কক্সবাজারের কুতুবদিয়অ পাড়া এলাকাও ঘুরে দেখেন তিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অসহায়ত্ব দেখে ব্যথিত হন। এসব মানুষের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কী করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে থাকেন।

এদিকে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করার পর থেকেই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণে কুতুবদিয়া পাড়া এলাকাটি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। অথচ ওই এলাকাতেই বসবাস করে আসছিলেন ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুচ্যুত চার হাজার ৪০৯টি পরিবার। সার্বিক বিবেচনায় এই জনগোষ্ঠীর জন্য খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ অগ্রাধিকার পাওয়া উদ্যোগের অন্যতম এটি। ঘূর্ণিঝড়ে ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলোকে যেন ফের উদ্বাস্তু হতে না হয়, সেটি নিশ্চিত করতেই তিনি প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছে ১৩৯টি পাঁচ তলা ভবন এবং একটি ১০ তলা ভবন। সুউচ্চ এই ভবনটির নাম হবে শেখ হাসিনা টাওয়ার। সবগুলো ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কুতুবদিয়া পাড়ায় বসবাসকারী ৪৪০৯টি পরিবারের সবগুলো এখানে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১৮০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার জনগোষ্ঠীদের পুনর্বাসনের এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমি। প্রকল্পটির সুরক্ষার জন্য নৌবাহিনীর মাধ্যমে মাটি ভরাট ও বেড়ি বাঁধ নির্মাণের কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মূল শহরের সঙ্গে প্রকল্প এলাকার সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরী ঘাট এলাকায় বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯৫ মিটার ব্রিজসহ সংযোগ সড়ক।

প্রকল্পটিতে চলাচলের সুবিধার্থে বহুমুখী যাতায়াত ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে জেটিঘাট থেকে অফিস ও কৃষ্টের দোকান থেকে সালেহ আহমেদ কোম্পানি পর্যন্ত এইচবিবি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে আলহাজ জয়নাল আবেদীন সংযোগ সড়ক। এর মধ্যে কিছু কাজ এখনো শতভাগ শেষ হয়নি। ৪৪০৯টি পরিবারের নিরাপদ পানির সংস্থানে ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের মাধ্যমে। প্রকল্পটির আওতায় পাম্প হাউজ ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করা হবে।

খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্থাপন করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। বিনোদনের জন্য রয়েছে পার্ক। স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আবার পুনর্বাসন হবে যেসব পরিবারের, তাদের অধিকাংশই মৎস্যজীবী। ফলে তাদের জীবিকার জন্য আধুনিক শুঁটকি পল্লি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আধুনিক নগরায়ন পরিকল্পনায় এই পল্লী স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প হবে কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় একটি পর্যটন এলাকা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*