প্রাণের ৭১

জামাতি প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হওয়ার আগে সচেতনতায় নিজের মস্তিষ্ক ও বিবেককে জাগ্রত করুন।

স্বাধীবতার ৪৭ বছর পর এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে ডঃ কামাল হোসেনকে নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জোর প্রচারণা চালাচ্ছে যে, তার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশ সংবিধানের রচয়িতা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে এবং গনতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধে নেমেছেন। তাই, এবারের সংগ্রাম দ্বিতীয়বার স্বাধীনতার জন্য কিন্তু তিনি যাদের সাথে জোট বেধেছে সেই দলে যেমন আছে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি জামাত ইসলাম আর তাদের পৃষ্ঠপোষক বা দোসর ক্যান্টনমেন্টের ব্যারাকে সংগঠিত দল বিএনপি ও কিছু পতিত শক্তির রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যাদের বেশিরভাগই যেকোন পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে পূর্বের ধারাবাহিকতায় জামানত বাজেয়াপ্ত হবার সম্ভাবনা শতভাগ নিশ্চিত বলা যায়।

আজকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ও তার ইনবক্সে ইনবক্সে একটা মেসেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে যে,
↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓ ↓
#রেডিও তে(২৫ই মার্চ)স্বাধীনতার ঘোষনা দিল কে??
উঃ- মেজর জিয়াউর রহমান।
#দেশের পতাকা পরাধীন বাংলায় প্রথম উত্তোলন করল কে????
উঃ- আ.স.ম আব্দুর রব।
#সম্মুখে শত্রু সেনার সাথে যুদ্ধ করে উপাধী পাইলো কে???
উঃ- কাদের সিদ্দিকি,উপাধী ছিলো “বংঙ্গবীর”।
#স্বাধীন দেশের সংবিধান রচিয়তা কে???
উঃ- ড. কামাল হোসেন।
#যুদ্ধে সবচেয়ে অবদান কোন পত্রিকার???
উঃ- ব্যারিষ্টার মঈনুলের পিতার পত্রিকা “ইত্তেফাক”।
#যুদ্ধে কোন ডাক্তারের অবদান বেশি???
উঃ- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুদ্ধের সময় তাহলে আওয়ামীলীগ কি করলো??? যে দল সারাদিন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বইল্লা গলা ফাটায়, মুক্তিযুদ্ধে তাদের কর্মকান্ড কি ছিলো???

কথাগুলো বেশ চমকপ্রদ ও তথ্য বহুল পরিচিত স্লোগান কিন্তু যে কথাগুলো সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে তা হলোঃ
প্রথমতঃ স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল ২৬ তারিখ মধ্যরাতের পর স্বয়ং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠে এবং সেজন্য ২৬ তারিখ বাংলাদেশের 🇧🇩 স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। কিন্তু ইতিহাস স্বাক্ষী যে, বঙ্গবন্ধুর পঠিত স্বাধীনতার ঘোষণা বাক্যটি অখ্যাত একজন মেজর পাঠ করেছিলেন ২৭ তারিখ সকাল দশটার পরে। যেসব মূর্খরা জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে জাবর কাটতে মুখিয়ে আছে তেনারা চাইলে পড়তে পারেন। লিংকঃ http://eurobarta24.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b…/

৭৫ সালের পটপরিবর্তনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারপরিজনসহ হত্যার পর বাংলাদেশের গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও পাল্টে যায়। কারণ, আগষ্টের হৃদয়বিদারক ঘটনার পর জাতির ক্রান্তিকালীন সময়ে যেসব জাতীয় নেতারা হাল ধরতে পারতো তাদেরকেও ৩রা নভেম্বর জেলখানার মতো নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ভিতরে পৃথিবীর নৃশংসতম ঘটনার জন্ম দিয়ে কুচক্রী সেনাপ্রধান জিয়ার সহযোগিরা হত্যা করে তাদের নিরাপদ রাজত্ব কায়েম করে। এরপর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক ক্যু সংগঠিত করে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে চার হাজারের অধিক মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার মাধ্যমে খুনী জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইন্ডেমিনিটি রুল জারি করে এবং ন্যক্কারজনক অপরাধের পুরুস্কার স্বরূপ সেইসব বেঈমান কুলাঙ্গারদের বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দিয়ে পাঠিয়ে দেন।

যুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের একজন বেতনভুক কর্মচারী যে কিনা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৭শে মার্চ সকাল সাড়ে দশটায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর লিখিত এবং ঘোষণাকৃত বাণীটি পাঠ করেই নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে। অথচ তাদের বাপদাদার দেশ পিয়ারী ফাঁকিস্তানের জেনারেল কর্তৃক আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরী কিসিঞ্জার ও সিআইএ’র কাছে নিশ্চিত করেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চ রাত আড়াইটার দিকে খুব কম ফ্রিকোয়েন্সীর রেডিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে এবং এটা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ পরাধীন বাংলায় দেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেছিলেন কে?
উত্তরঃ আ স ম আঃ রব। যা অস্বীকার করার উপায় নেই এবং ইতিহাস তার সাক্ষী। তারপরও ভদ্রলোককে রাজনীতির ময়দানে সকলেই অসময়ের রব বলে সম্বোধন করেন। তারমানে, তিনি বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে সরব থাকেন যা আশির দশকে বঙ্গবন্ধুর হত্যা পরবর্তীতে দেখা গেছে। দেশের সব জনপ্রিয় দলগুলো যখন স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের আন্দোলনে জড়িত ছিল তখন এই অসময়ের রব সাহেব বেশ কিছু নাম সর্বস্ব দলের জোট করে প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহন করে সংসদে বিরোধী দলের নেতার আসন গ্রহণ করেছিলেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন এবং সারা পৃথিবীর বুকে তিনিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যে বিরোধী দলের নেতা হয়েও সরকার পতনের সাথে সাথে পালিয়ে বেঁচে ছিলেন। অতএব, স্বাধীনতার সংগ্রামে তার অতীত গৌরব বা অর্জন যাই থাকুক না কেন তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে বলা চলে।

তৃতীয়তঃ শত্রু সেনার সাথে যুদ্ধ করে উপাধী পাইলো কে???
উঃ- কাদের সিদ্দিকি,উপাধী ছিলো “বংঙ্গবীর”। হ্যাঁ, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং তার এই অবদান অবনত মস্তকে জাতি চিরদিন গর্বের সাথে স্মরণ করতে পারতো কিন্তু একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সেনানী কাদের সিদ্দিকীর সাথে তার বর্তমানের কার্যক্রম মেলালে আপনি একজন বাঘকে নয় বরং ছুঁচো গোছের প্রাণীর অদ্ভুত মিল পাবেন। আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের পর তিনি কৃষক শ্রমিক লীগ নামে একটা দল তৈরী করলেও কখনোই বঙ্গবন্ধু কন্যা ও দেশবাসীর বিরাগভাজন হননি। তারপরও তার অর্থলোভী মনোভাবের পরিচয় দিয়ে তিনি নিজ কোম্পানির নামে সরকারি কাজ নিয়ে ব্রিজের কন্টাকটরের আড়ালে ব্রিজ তৈরি না করেই যাবতীয় সরকারি অর্থ আত্নসাৎ করে বড়লোক হতে চেয়েছেন যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শুধু এখানেই তিনি থেমে থাকেননি বরং একাত্তরের এই বীরযোদ্ধা অর্থের বিনিময়ে সমস্ত বিবেকবোধের বিসর্জন দিয়ে সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামাতের পত্রিকায় কলাম লিখে ও দিগন্ত টিভিতে উপস্থিত হয়ে একের পর এক টকশোতে বিতর্কিত তথ্য হাজির করে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং এর সবকিছুই করেছেন জামাতের অর্থকে হালাল করতে। তিনি নিজে দুর্নীতিবাজ হওয়ায় আজ হুংকার ছেড়ে বলতে পারেন নির্বাচনের পরদিনই আরেকজন দুর্নীতির অভিযোগে জেলে থাকা নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাবেন। এক্ষেত্রে, দেশের আইন-আদালত এবং তার আইনি প্রক্রিয়া কোন ফ্যাক্টর না বরং তার দম্ভোক্তি বা ইচ্ছার প্রতিফলন বড় নির্ণায়ক।

চতুর্থতঃ স্বাধীন দেশের সংবিধান রচিয়তা কে???
উঃ- ড. কামাল হোসেন। উত্তরটা আপাত দৃষ্টিতে ঠিকই আছে কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে- তিনি সংবিধান প্রণীত কমিটির সভাপতি হিসাবে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞের একজন সদস্য ছিলেন মাত্র কিন্তু তিনি কখনোই সংবিধান রচয়িতা নয় বরং সংবিধান রচয়িতাদের মধ্যে একজনের ভূমিকা পালন করেছেন। নিজেকে সংবিধানের মালিক দাবিদার এই মহান ব্যক্তির অতীত আমলনামা ঘাটলে দুর্গন্ধ ছাড়া তেমন উজ্জ্বলতা প্রকাশ পায়না বলা চলে। ২৫ শে মার্চ রাতে ধানমন্ডির বত্রিশ নাম্বার রোডের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আলোচনা শেষে তাদের উপর নির্দেশ ছিল যে, সবাই যেন পালিয়ে ইন্ডিয়া চলে যায় এবং মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করে কিন্তু পালানোর পথে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ এবং ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলামকে গাড়িতে রেখে বাড়িতে জরুরী একটা কাজ আছে বলে নেমে যান। কথা ছিল নির্দিষ্ট কাজ সেরেই তিনি তাদের সাথে যোগ দিবেন কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থেকেও তাকে না পেয়ে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ এবং ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলাম ইন্ডিয়ার পথে রওয়ানা দেন। কথিত আছে, ডঃ কামাল হোসেন বাড়ির নাম করে সরাসরি রমনা থানায় হাজির হয়ে নিজের নিরাপত্তা দাবী করে বলেন তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া না হলে মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলতে পারে। তাই, তাকে আটক করে পরবর্তীতে নিরাপদে পাকিস্তান পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং তিনি সেখানে তার জাদরেল আইনজীবি শশুরের সাথে আইন প্রাকটিস করেছেন যা জেনারেল মিট্টা খা নামের একজন পাকিস্তানি জেনারেল তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। এও কথিত আছে যে, বঙ্গবন্ধুর ফাঁসী দেবার আয়োজনে তাকে ততকালীন পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক সরকার রাজসাক্ষী করার কথা ছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য অভিযানে দ্রুত দেশ স্বাধীন হওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিলে কৌশলে পাকিস্তানি গোয়েন্দাবাহিনী আইএসআইএস তাকে বঙ্গবন্ধুর বহনকারী বিমানে রাজবন্দী হিসাবে চালান করে দেয় যাতে তাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে দেশে আসলে তাকে আওয়ামী নেতৃত্ব ডঃ কামাল হোসেনের বিতর্কিত ভূমিকার কথা বললেও তিনি দয়াপরবশ হয়ে বিষয়টার গুরুত্ব না দিতে সবাইকে বলে দেন এবং তাকে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু নিজ আসন তাকে উপহার দিয়ে সংসদে বসার সুযোগ করে দেন যা কমবেশি সবাই জানেন। ৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি করলে তাকে সেই কমিটির সভাপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু নিয়োগ দেন কিন্তু ডঃ কামাল হোসেন এতটাই অকৃতজ্ঞ যে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ততকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকলেও তিনি এবিষয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। এমনকি লন্ডনে থাকার সময় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থকরা আন্তর্জাতিক বিবৃতি দান ও একটা কমিটিতে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

গণজাগরণ মঞ্চের সময় রাজাকারদের বিচারে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লেও ডঃ কামাল হোসেনের কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি তার বাড়িতে বসবাসরত ইহুদি বংশোদ্ভূত ডেভিড বার্গম্যান নামে তার মেয়ে জামাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ও বিতর্কিত করতে জামাতের টাকায় দেশে বিদেশে লবিং করার পরও তিনি চুপ থেকেছেন যদি অর্থের উৎস বন্ধ হয়ে যায়?
আজকে বড়বড় নীতিবাক্য বেচে খাওয়া এই ভদ্রলোক এর আগে বিতর্কিত এশিয়া এনার্জি নামক বিদেশী কোম্পানীর পক্ষে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা লড়েছিলেন যাতে দেশের ক্ষতি হলেও নিজের পকেট ডলার ভরে ওঠে। তারপরও যদি আপনার মনে হয় তিনি জাতিকে উদ্ধার করতে নেমেছেন তাহলে ভুল করবেন এটুকুন নিশ্চিত বলা যায়। কথিত আছে, উনি সবসময় লাগেজ গুছিয়ে রাখেন এবং টিকিট কনফার্ম থাকায় কখন উড়াল দেন তা বলা মুস্কিল। তাই জামাত পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় হোঁচট খেলে নিশ্চিত তিনি বিমান ধরবেন বলা যায়।

পঞ্চমতঃ সবচেয়ে অবদান কোন পত্রিকার???
উঃ- ব্যারিষ্টার মঈনুলের পিতার পত্রিকা “ইত্তেফাক”। হ্যাঁ, সাংবাদিক মানিক মিয়া ও তার পত্রিকা ইত্তেফাক আওয়ামী লীগের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করলেও বাবার অবদানে ছেলে আলোকিত হয় কিনা তা একজন সচেতন পাঠক মাত্রই বিবেচনা করবেন বলে অনুরোধ রইলো। সাংবাদিক মানিক মিয়ার ছেলে হওয়ায় ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ও তার ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিশেষ স্নেহ করতেন কিন্তু এই মইনুল হোসনের ভূমিকার জন্য মানিক মিয়ার কুলাঙ্গার সন্তান হিসাবে ব্যরিষ্টার সাহেব আখ্যায়িত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মইনুল হোসেন ইত্তেফাকে কলাম লিখে স্বস্তি প্রকাশ করেন এবং একটি রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু করেন। বড়ভাইকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এমনকিছু করেননি তা বলাই বাহুল্য। এমনকি লোক দিয়ে ভাইকে গুলি করতে গিয়ে ইত্তেফাক অফিসের ভিতর সাংবাদিক খুন করিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইত্তেফাক কারখানা পুড়িয়ে দিলেও সিআইএ’র সহযোগিতায় পাকিস্তানের কাছে মোটা অংকের ক্ষতিপূরণও আদায় করে নিয়েছেন। এছাড়া শিবিরের সম্মেলনে গিয়ে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণার ভিডিওটি কমবেশি সবাই দেখেছেন বলেই মনে হয়। অতএব, তাকে কিভাবে জাতির প্রতি ডেডিকেটেড রিপ্রেজেন্ট করবেন হে পাঠক?

ষষ্ঠতঃ যুদ্ধে কোন ডাক্তারের অবদান বেশি???
উঃ- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
হ্যাঁ, ডাক্তার সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকারের যে হাসপাতালে চিকিৎসা সহযোগিতা দিয়েছেন সেই হাসপাতালের একজন সংগঠক ছিলেন সাজেদা চৌধুরী যাকে ইদানিং বিতর্কিত করতে জামাতের পেইড এজেন্টরা রাজাকার বলে প্রচার করছে। জাফরুল্লাহ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকার জন্য বঙ্গবন্ধুর নিকট থেকে যুদ্ধাহত পঙ্গু চিকিৎসায় গঠিত গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন যা ছিল বিদেশী সহায়তায় গঠিত একটি হাসপাতাল যা পঙ্গু রোগীর চিকিৎসা সেবা ও পুনর্বাসনে ভূমিকা রাখবে কিন্তু ৭৫এর পটপরিবর্তনের সাথে সাথে ডঃ জাফরুল্লাহ সাহেব বিতর্কিত স্বৈরশাসক জিয়ার কাছ থেকে সমর্থনের বিনিময়ে পুরো ট্রাস্টের মালিকানা নিয়ে নিলেন। আজকে তার বিতর্কিত ভূমিকা ও সময়ে সময়ে টকশোতে বিতর্কিত বক্তব্য জাতিকে বিভ্রান্ত করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। তিনি কোন তথ্য নিশ্চিত করা ছাড়াই বিতর্কিত মন্তব্য করতে সিদ্ধহস্ত। এমনকি জাতির গর্ব সেনাবাহিনী সম্পর্কেও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে ক্ষমা প্রার্থনা করে পার পেয়েছেন। তাছাড়া, তার তথ্য বিকৃতির প্রচেষ্টা ধরিয়ে দিলেই কখনো বয়সের দোহাই আবার কখনও স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে পার পেতে চেষ্টা করেন কিন্তু নতুন প্রজন্ম তার চরিত্রের স্বরূপ ধরে ফেলেছে। তাই, পুরনো আমলনামা কচলিয়ে লাভবান হওয়ার বদলে যতই কচলাইবেন ততই পস্তাইবার সম্ভাবনা বাড়বে বৈ কমবেনা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যুদ্ধের সময় তাহলে আওয়ামীলীগ কি করলো??? যে দল সারাদিন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বইল্লা গলা ফাটায়, মুক্তিযুদ্ধে তাদের কর্মকান্ড কি ছিলো???

যে দলের নেতার নামে একটা যুদ্ধ চললো এবং যাদের সাহসী নেতৃত্বে একটা দেশ স্বাধীন হলো সেই দল যুদ্ধের সময় কি করলো বলা চিংকু বাম, জামাতের পেইড এজেন্ট এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠী কি ইতিহাস সম্পর্কে নূন্যতম একটুও ভেবে দেখেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ কাদের দ্বারা সংগঠিত হল?
তাহলে, একটু তর্কের খাতিরে বলাই বাহুল্য যে, সত্তরের নির্বাচনে যে সকল আওয়ামী লীগ নেতা জয়লাভ করেছিল তাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং থেকে পরিকল্পনা সবকিছুর আয়োজন চলছিল এবং প্রত্যেকটি সেক্টরে তারা সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ভারতীয় সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় রাজি করানো থেকে অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যসহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রবাসী সরকারের সমর্থন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠনের সাথে লিয়াজোঁ রক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তাছাড়া মুজিব বাহিনী সহ বিভিন্ন বাহিনীতে আওয়ামী লীগ কর্মী ও সমর্থক গোষ্ঠী যোগ দিয়ে সরাসরি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। অথচ, সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠন জামাত শিবিরের অনুসারী ও পৃষ্ঠপোষক বিএনপির নব্য রাজাকার গোষ্ঠী প্রশ্ন তুলছে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে সারাদিন গলা ফাটায়, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান কি?
আরে আওয়ামী লীগের যদি মুক্তিযুদ্ধে কোন অবদান নাই থাকে দেশটা কি তোদের বাবারা এমনি এমনিতেই স্বাধীন করে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল?
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তোর বংশপরিচয়ের ইতিহাস জেনে নিস পেয়ারী পাপীস্তানের শাবককূল। কারণ, ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর তোদের ৯৫ হাজার অস্ত্রধারী বাবা আত্মসমর্পণ করে পৃথিবীর বুকে ইতিহাস তৈরী করেছিল যা এতো বৃহৎ আকারের সৈন্যবহর নিয়ে আত্মসমর্পণ কোনদিনই হয়নি। ডিসেম্বর আসলেই তোদের বাপদাদার আমলনামা জাহির হয় বলে চেতনা চেতনা বলে চিৎকার করে পরাজয়ের ব্যাথাটা ভুলতে মলম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়িস কিন্তু জেনে রাখিস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের হাত ধরে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জন্ম ইতিহাস সমুন্নত থাকবে আপন মহিমায় গৌরবের বীরত্বগাঁথা কাব্যে।

প্রিয় নান্না-মুন্না প্রজন্ম ও ছাগুস সম্প্রদায় যতই কাঁঠাল পাতা চিবানি দিয়ে জাবর কাটুক না কেন তাতে কোন লাভ হবেনা। নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম এখন আর বোকার স্বর্গে বাস করে না বরং আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার সাথে সাথে নিজেদের জন্ম ইতিহাস তথা একুশের ভাষা আন্দোলন, ছয়দফা, উনসত্তরের গণভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধের সোনালী ইতিহাস ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এবং কার কি ভূমিকা সবই জানে। এই প্রজন্ম এটাও জানে যে,

একজন রাজাকার চাইলেও কখনো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করতে পারবেনা কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা তার অতীত ইতিহাস ভুলে গেলে এবং নিজের বিতর্কিত ভূমিকার জন্য অবশ্যই রাজাকার বিবেচিত হবে।

মোয়াজ্জেম হোসেন তারা
লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট
ফ্রান্স






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*