প্রাণের ৭১

ধর্মীয় উৎসবের নামে মানুষে মানুষে বিভক্তি বন্ধ হওয়া উচিত

ধর্মীয় উৎসবের নামে মানুষে মানুষে বিভক্তি বন্ধ হওয়া উচিত।
প্রিন্স বাজার শারদীয় উৎসব উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সাথে সাথে গরুর মাংসের ওপর ছাড় দেওয়াই দেখলাম সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতার লোকজনের সাথে সাথে আমাদের দেশীয় মুক্তমনা দাবীদার ফেসবুকীয় কুলিন কূলও দেখি কয়েক পদের স্ট্যাটাস আপডেট দিয়ে নিজেকে উচ্চমার্গীয় নেগেটিভ মার্কেটিং এর প্রচারণা চালাচ্ছেন যা দেখে অধম মোটেও অবাক হয়নি। কারণ, আমাদের দেশের মুক্তমনা দাবীদার ফেসবুকীয় কুলিন হিন্দু বা মুসলমান ঐক্য ঠিক রেখেই যারযার পয়েন্টে লেখালিখি করে থাকেন যেখানে নিজের অবস্থান হাস্যকরভাবে উপস্থাপিত হলেও তাদের কিছু যায় আসেনা বরং বৃষ্টি যেদিকে হয়েছে সেদিকে ছাতা ধরতে পারলেই যেন ইজ্জত বেঁচে যায়।

দুদিন আগেও যে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতার লোকটি প্রিন্স বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করতে পারেনি, সেই ব্যক্তিটিও আগামীকাল নিজের ঈমান ঠিক করতে সেখানে বাজার করতে ছুটে যাবে এজন্য যে দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে গরুর মাংসের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রিন্স বাজার কর্তৃপক্ষ নিজেকে সাচ্চা মুসলমান সমাজের উত্তারাধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। তাই, তার ওখানে বাজার করলে একজন মুমিনের সহায়তা করা হবে কিন্তু কেউ খেয়াল করে দেখবেনা যে, প্রিন্স বাজার এর মালিক ও তার ছেলেদের কুকর্ম গুলো। যার বেশকিছু মিরপুর বসবাস কালীন একসময় অধমের জানা ছিল।

আমি যে দেশে থাকি সেই ফ্রান্স এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলিম অধিবাসীদের টার্গেট করে রমজান উপলক্ষে বিশাল মূল্যহ্রাসের ঘনঘটা শুরু হয় একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করতে এবং একেকটা সুপারশপে বিভিন্ন জিনিসের উপর ছাড় দেয়া হয়, যেখানে হালাল সামগ্রীর সাথে সাথে হারাম দ্রব্যেরও ছাড় চলে যা সচক্ষে দেখে হেসেছি। কারণ, এখানে মদ, হুইস্কি বা বেহেশতি শরবতের উপরও বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় যা নিশ্চিত ইফতারের আয়োজনে স্থান পাবেনা কিন্তু সেটা নিয়ে কারোরই মাথাব্যথার উপক্রম হয়না বরং বিধর্মীদের সাথে সাথে অনেক মুসলমানও সেটা ঝুড়ি বোঝায় করে কিনে খায়। যদিও মদ হারাম কিন্তু অনেক মুসলমানের কাছে সেটা উপাদেয়। তাই সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়না বললেই চলে যদিওবা শূকরের মাংস প্রতিটি মুসলমান এড়িয়ে চলে!

ধর্ম যারযার উৎসব সবার বিবেচনায় যেকোনো দ্রব্যের উপর ছাড় বা মূল্যহ্রাস একটা নরমাল বিষয় বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের বিবেচনায় আমরা নিজেদেরকে যতটা ধর্ম দিয়ে চিনেছি ঠিক ততটাই মানুষকে মানুষ ভাবতে পারি না বলে যেকোনো বিষয়ে শোরগোল শুরু করে দিই। কে কোনটা খাবে তা ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার এবং এটাতে যখন হস্তক্ষেপ করা হয় তখনই সেটা দোষের বলে বিবেচিত। যেমন, কোন অনুষ্ঠানে বা উৎসবে কেউ যদি হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের মিথ্যাচার করে গরুর মাংস বা মুসলমানদেরকে শূকরের মাংস খাওয়াই তখনই তা বিচার্য এবং সেই ঘটনায় প্রতিবাদ করা অবশ্যই কর্তব্য।

দেশের আপামর আমজনতার সাথে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক মোল্লাদের মতো একশ্রেণির অধার্মিক মুক্তমনার ভিতরেও সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতা বিরাজমান যা একটা সমাজ ও দেশের জন্য ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আমি তোমাকে পছন্দ করি না তাই আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু বিবেচনায় বেশিরভাগ মানুষ তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে বলেই কিছু তথাকথিত শিক্ষিত ও মুক্তচিন্তার দাবীদার ফেসবুকীয় কুলিন গোষ্ঠী কোনকিছুর বিবেচনা না করেই এমন একপক্ষের হয়ে কাজ করে যাদের জন্য দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে পতিত হয় এবং ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার বর্তায়। এদের লেখালেখির বেশিরভাগ অংশ ছাগুদের রামরাজত্ব কায়েমের পথ বাতলে দেয়।

সাধারণের ধর্ম পালনের সাথে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতার ধার্মিকদের বিস্তর ব্যবধান যা অনেকেই বুঝতে ব্যর্থ হয় বলে একটা সম্প্রদায়ের প্রত্যেককেই সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থী বলে বিবেচনা করে যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। অর্থাৎ, তুমি হয় আমার পক্ষে বা শত্রুর পক্ষের হবে কিন্তু মধ্যপহ্না অবলম্বন করতে পারবেনা। অথচ, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশিরভাগ মানুষই মধ্যপহ্না অবলম্বন করে জীবন ধারণ করে থাকে।

অসাম্প্রদায়িকতার মাঝেই একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে বেঁচে থাকে যা একজন মানুষকে মানুষ ভাবতে শেখায়। জগতের প্রতিটা মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ জাগ্রত হোক এবং ধর্মীয় সহনশীলতার জন্যে পারস্পরিক দোষারোপ বন্ধ হলেই বরং পৃথিবী বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই, ধর্ম যারযার উৎসব হোক সবার জন্য উন্মুক্ত এবং বাঁধাহীন।

মোয়াজ্জেম হোসেন তারা
লেখক,এক্টিভিস্ট
প্যারিস ফ্রান্স

লেখকের ব্যাক্তিগত মতামত






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*