প্রাণের ৭১

ধর্ষণ: নূরদের গ্রেপ্তার দাবিতে অনশনে ঢাবির সেই ছাত্রী

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরসহ ধর্ষণ মামলার আসামি ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে অনশনে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি স্টাডিজ বিভাগের সেই ছাত্রী।

 

ধর্ষণের মামলা দায়েরের দুই সপ্তাহ পরেও আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে তিনি এই কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তার কয়েকজন সহপাঠীকেও সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়। আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওই ছাত্রী।

 

অনশনে বসে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আজ খুবই অসহায়। শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচারের জন্য আমাকে অনশন কর্মসূচিতেও যেতে হল। ধর্ষকরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

 

“হাসান আল মামুন ও নুরুল হক নূরসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমার অনশন অব্যাহত থাকবে।”

 

 

গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ, অপহরণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চরিত্রহননের অভিযোগে নুরুল হক নুর ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন এই ছাত্রী।

প্রথম মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুনকে, যিনি এতদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগকে।

 

এছাড়া নুরুল হক নুরসহ সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ও কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকে আসামি করা হয়।

 

ওই ছাত্রীর ভাষ্য, একই বিভাগে পড়া এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। এ অভিযোগেই তিনি লালবাগ থানার মামলাটি দায়ের করেন।

 

আর কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহারে বলা হয়, ধর্ষণের ওই ঘটনার পর ওই শিক্ষর্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে নাজমুল হাসান সোহাগ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। সুস্থ হওয়ার পর মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওই তরুণী। তখন সোহাগ তাকে ‘সহযোগিতার আশ্বাস’ দেন এবং মামুনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে সদরঘাট হয়ে ‘লঞ্চে করে চাঁদপুরে’ নিয়ে যান।

 

 

 

কিন্তু চাঁদপুরে মামুনকে না পেয়ে ওই ছাত্রীর সন্দেহ হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে লঞ্চে সোহাগ তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।

এজাহারে বলা হয়, এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই তরুণী নুরুল হক নূরের সঙ্গে দেখা করেন। নূর তাকে প্রথমে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানি করার’ হুমকি দেন।

 

এরই মধ্যে মামলার বাকি তিন আসামি নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ রটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

 

ওই ছাত্রী মামলা করার পর তা ‘ষড়যন্ত্র’ দাবি করে বিক্ষোভ করে নুর-রাশেদদের নেতৃত্বাধীন ছাত্র অধিকার পরিষদ। পাশাপাশি হাসান আল মামুনকে পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

 

তবে এরপরেও সাইবার বুলিং চলতে থাকায় পরে শাহবাগ থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রী।

 

এরপরেও আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হননি এবং তাকেই নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনে ন্যায়বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই ছাত্রী। অন্যথায় আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*