প্রাণের ৭১

নুসরাত হত্যা: দুই হাজার টাকায় ৩টি বোরকা কেনেন মাদ্রাসাছাত্রী মণি

দুই হাজার টাকায় ৩টি বোরকা কেনেন মাদ্রাসাছাত্রী কামরুন্নাহার মণি বলে জানিয়েছেন নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম।

রোববার ফেনীর আদালতে শাহাদাত রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দেন। এছাড়া এই মামলার আরেক আসামি নুরুদ্দিনও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে ওই দুই আসামি প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, ৪ এপ্রিল কারাগারে গিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর তারা ৫ এপ্রিল মাদ্রাসার পাশের পশ্চিম হোস্টেলে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রাফিকে পুড়িয়ে মারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন ৬ এপ্রিল তারা এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগে থেকেই কেরোসিন কিনে আনেন শাহাদাত। তিনি ৭০ টাকা দিয়ে এক লিটার কেরোসিন কেনেন। তিনি দোকানদারকে পলিথিনে কেরোসিন দিতে বললে দোকানদার তাকে সন্দেহ করে।

তখন শাহাদাত বলেন, লাকড়িতে আগুন ধরানোর জন্য কেরোসিন লাগবে। পরে তাকে কেরোসিন দেয় দোকানদার। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজন পুরুষের জন্য তিনটি বোরকা দরকার ছিল। পপির বান্ধবী কামরুন্নাহার মণিকে দুই হাজার টাকা দেয়া হয় বোরকা কেনার জন্য। তিনি তিনটি বোরকা এনে শাহাদাতকে দেন। তিনটি হাতমোজাও তিনি সংগ্রহ করেন। এগুলো সংগ্রহ করার পর তারা শেল্টার হাউসের (ঘটনাস্থল) তিন তলার ছাদে রেখে আসেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা মাদ্রাসার শেল্টার হাউসের ছাদে থাকা টয়লেটে ওতপেতে থাকেন। কেরোসিন ও ম্যাচও সেখানে রেখে আসা হয়। আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে তারা উম্মে সুলতানা পপিকে দিয়ে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে নিয়ে আসেন। এরপর নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।

জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন শামীম জানান, এ ঘটনার সময় নুরুদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরও পাঁচজন গেটে পাহারায় ছিল। নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর শামীম দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে তিনি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ফোনে বিষয়টি জানান।

রুহুল আমিন বলেন, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।

নুরুদ্দিন জানিয়েছেন, তার সঙ্গে অধ্যক্ষ সিরাজের ভালো সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তার নির্দেশে তারা পরিকল্পনা করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঘটনার সময় তিনি ভবনের নিচে ছিলেন। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও অধ্যক্ষ সিরাজের ভাগ্নি পপি গিয়ে নুসরাতকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যান।

নুরুদ্দিন জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ সিরাজ নানা সময়ে ছাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের যৌন হয়রানি করতেন।

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে এনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি।

এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*