প্রাণের ৭১

পরিবার ও জাতির কল্যাণে মিত্যব্যয়ি হওয়ার বার্তা দেয় বিশ্ব মিতব্যায়িতা দিবস: মোহাম্মদ হাসান

আজ বিশ্ব মিতব্যায়িতা দিবস। ১৯২৪ সাল থেকে বিশ্ব পালন করে আসছে দিবসটি।

“ছোট ছোট ব্যয় সমদ্ধে সাবধান হও। একটি ছোট ছিদ্র মস্তো বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে “। বিজ্ঞানি ফ্রাকলিনের এ মন্তব্যের খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে। বাস্তবতায় অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই, বরং সমাজ, পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না।

মিতব্যায়িতা প্রসঙ্গে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, “আর তোমরা খাবে ও পান করবে, কিন্তু অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।” প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করার মাধ্যমে মানুষ যেমন সীমা লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হয় তেমনি সমাজে এর কুপ্রভাব বিস্তার লাভ করে। এর ফলে মানুষ ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। এ বিষয়টি মানুষকে মিতব্যয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “বলেছি, আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং এতে সীমালংঘন করো না, তা হলে তোমাদের ওপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসে সে ধবংস হয়ে যায়। (সুরা ত্বহা : আয়াহ ৮১)।

“বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস” মূলত মিতব্যয়ি হওয়ার আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। এই দিনে পরিবার ও জাতির কল্যাণে সকলকে মিত্যব্যয়ি হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। দিবসটির উদ্ভব হয় ১৯২৪ সালে। সেই বছর ইতালির মিলানে বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেসের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটি পালন শুরু হয়। সেই থেকে সঞ্চয় ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী-সামজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখ কোটি টাকা। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন ১৭ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ অপচয় করে কোটি কোটি টাকার খাবার, আর এর মাশুল দিতে হয় পথের পাশের মানুষগুলোকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মিতব্যয়িতা মানে হলো ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম বা আয় বুঝে ব্যয়। ব্যয়ের ক্ষত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনও মিতব্যয়িতার অর্থ। ইসলাম অপব্যয় এবং কৃপণতার ব্যাপারে সতর্ক করে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছে বারবার। শুধু একদিন নয়, সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান।

ইসলামে মিতব্যয়কে তাগিদ দিয়ে উৎসাহিত করলেও কৃপনতাকে ভৎসনা করেছে। সুরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ বলেন, “তুমি বদ্ধমুষ্ঠি হওয়া থেকে বিরত থাক এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ে যেয়ো না;যদি তা হও তবে তুমি তিরস্কৃত ও অনুতপ্ত (নিঃস্ব) হয়ে পড়বে”।মিতব্যয়িতার মাধ্যমে মানুষ সফলতা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিতব্যয়িতার অভ্যাস তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিতব্যয়িতা অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধনী বানিয়ে দেবেন, আর যে ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত খরচ করবে, আল্লাহ তাকে গরিব বানিয়ে দেবেন।” পরিশেষে…অর্থ খরচের তিনটি অবস্থা কার্পণ্য, মিতব্যয় ও অপব্যয়। কার্পণ্য ও অপব্যয়কে ইসলামে নিন্দা জানিয়েছে আর মিতব্যয়কে উৎসাহিত করেছে। এ কারণে মিতব্যয় মধ্যম পন্থা ও উত্তম কাজ। আর অপব্যয় ও কার্পণ্য উভয়টাই নিন্দিত স্বভাব ও গোনাহের কাজ।যারা ইসলামের বিধান পালন করে থাকে তারা অপব্যয় ও কার্পণ্যকে পরিহার করে মিতব্যয়ী হয়। সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে মিতব্যয়িতার প্রতি উৎসাহ করতে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ তুলে ধরে বলেছেন, “তোমরা যদি প্রবহমান নদীর ঘাটেও বসে থাক তবুও পানির অপচয় কর না।” আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অপচয় ও কৃপণতা পরিহার করে মিতব্যয়ী হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দয্য মানুষের মাঝে তুলে ধরার মানসিকতা সকলের মাঝে জাগ্রত হউক। বিশ্ব মিতব্যায়িতা দিবসে সকলের জন্য শুভ সুন্দর নিরাপদ আগামী কামনা।

সূত্রঃ মিতব্যয়ীতা বিষয়ে বিভিন্ন প্রকাশনা।
লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*