প্রাণের ৭১

শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিতে যাওয়ার পথে হামলা

পাহাড়ে ব্রাশফায়ারে নেতাসহ নিহত ৫

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে ব্রাশফায়ার চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরো অন্তত আটজন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে বেতছড়ির কেঙ্গালছড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক দলের নেতা লিটন চাকমা জানান, একটি মাইক্রোবাসে করে নানিয়ারচর যাচ্ছিলেন তাঁরা। গাড়িটি বেতছড়ির কেঙ্গালছড়িতে পৌঁছলে একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ ব্রাশফায়ার শুরু করে। এতে গাড়িটি উল্টে সড়ক থেকে ছিটকে পড়ে। এ সময় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে গাড়ির একটি বহর যাচ্ছিল। পরে এলাকাবাসী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচজনের লাশ এবং গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেন।

আহতরা জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে যাওয়া গাড়িবহরে বেশ কয়েকটি চাঁদের গাড়ি, বাস ও মাইক্রোবাস ছিল। মূলত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার গাড়িকে লক্ষ্য করে এই গুলি চালানো হয়।

নিহতরা হলেন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের শীর্ষ নেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা, জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির (এমএনলারমা) মহালছড়ি শাখার সুজন চাকমা এবং সদস্য তনয় চাকমা, সেতু লাল দেওয়ান ও মাইক্রোচালক সজিব হাওলাদার। গতকাল দুপুর পৌনে ২টার দিকে হতাহতদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে সেতু লাল দেওয়ান (৪০) ও মাইক্রোচালক সজিব হাওলাদারের (৩৬) লাশ খাগড়াছড়ি হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আহতদের মধ্যে আটজনকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তির পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত অন্য তিনজনের লাশও পরে খাগড়াছড়িতে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের শীর্ষ নেতা ও সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার লাশও রয়েছে।

আহতরা হলেন দিগন্ত চাকমা (২৮), অর্চিন চাকমা (২৫), অর্জুন চাকমা (২৩), মিহির চাকমা (৩০), জীবন্ত চাকমা (৩০), শান্তি রঞ্জন চাকমা (৩৮), নিহার চাকমা (৫০) ও প্রীতি কুমার চাকমা (৪০)। আহতের মধ্যে নিহার চাকমা ও প্রীতি কুমার চাকমার বাড়ি নানিয়ারচরে। অন্যরা খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

খাগড়াছড়িতে নিয়ে আসা নিহত দুজনের মধ্যে সেতু দেওয়ানের বাড়ি জেলার মহালছড়ির স মিলপাড়া এলাকায়। মাইক্রোচালক সজিব হাওলাদারের গ্রামের বাড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মুসলিমপাড়ায়।

খাগড়াছড়ি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. নয়নময় ত্রিপুরা জানান, আহতদের মধ্যে বেশির ভাগ গুলিবিদ্ধ ও দুর্ঘটনায় আহত। বেশি আশঙ্কাজনক হওয়ায় চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুদর্শন চাকমা হামলার জন্য প্রসিতপন্থী ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন।

ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, হুট করে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইউপিডিএফকে দায়ী করা দুঃখজনক। এতে করে প্রকৃত খুনিরা পার পেয়ে যাবে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সুষ্ঠু তদন্ত করে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন দলটির মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন চাকমা। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে বলেন, শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করার পর তপন জ্যোতি চাকমা বর্মাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য ইউপিডিএফ একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে চলছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে (৫২) গুলি করে হত্যা করা হয়। নানিয়ারচর বাজার থেকে উপজেলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে যাওয়ার সময় দুজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা রূপম চাকমা (৩৫) নামের আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন। অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি থেকে বের হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নেতা ছিলেন। তিনি সর্বশেষ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

শক্তিমান-বর্মা হত্যা : নানিয়ারচর নিয়ন্ত্রণই মূল কারণ

রাঙামাটির উত্তরে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ছোট উপজেলা নানিয়ারচর। এর আয়তন ৩৯৩.৬৮ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার উত্তরে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে  রাঙামাটি সদর, পূর্বে লংগদু উপজেলা ও বরকল উপজেলা, পশ্চিমে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা। ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই ছোট্ট উপজেলাটির সাবেক্ষং, নানিয়ারচর, বুড়িঘাট ও ঘিলাছড়ি নামের চারটি ইউনিয়নে বিভক্ত। এই উপজেলাটি প্রথম দেশব্যাপী আলোচনায় আসে ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন নানিয়ারচর বাজারে তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতাদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বাগিবতণ্ডার পর স্থানীয় বাজারের লোকদের সঙ্গে পিসিপি নেতাদের বিতণ্ডা সাম্প্রদায়িক সংঘাতে রূপ নেয়। যাতে নিহত হন বেশ কয়েকজন পাহাড়ি। দেশজুড়ে আলোচনায় আসে ছোট্ট এই উপজেলাটি।

১৯৯৭ সালে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ওই সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে চুক্তির বিরোধিতা করে জন্ম হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। রাঙামাটি জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ১৯৯৭ সালের পর থেকে দাপিয়ে বেড়ালেও নানিয়ারচরই একমাত্র উপজেলা যেখানে গত ১৮ বছরেও পা ফেলতে পারেনি সংগঠনটি। এই উপজেলাটিতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে খোদ সন্তু লারমাও এই উপজেলায় যেতে পারেননি কখনো। এই উপজেলার সড়কে সন্তু লারমার গাড়িবহরে দুই দফা হামলাও হয়। রাঙামাটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও জনসংহতি সমিতির নেতা উষাতন তালুকদার এই উপজেলায় সামান্য কিছু ভোট পান এবং এখানে তাঁদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমও নেই। ফলে খাগড়াছড়ির সীমান্তবর্তী এই উপজেলাটি ইউপিডিএফের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে। এখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান—সবই নির্বাচিত হয়েছে ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণে। নানিয়াচরকে বলা হয় ইউপিডিএফের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি।

যেভাবে উল্টে যেতে থাকে নিয়ন্ত্রণ

২০১০ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে তাতিন্দ্রলাল চাকমা পেলে, সুধাসিন্ধু খীসা, শক্তিমান চাকমা মিলে গঠন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) নামে নতুন রাজনৈতিক দল। যেহেতু দলটি সন্তু লারমার দল থেকে বেরিয়ে গঠিত হয়েছে, সংগত কারণে ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ এমন নীতির কারণে ইউপিডিএফের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাদের। এই সখ্যর অংশ হিসেবে দুই দল একত্র হয়ে মোকাবেলা করতে থাকে শক্তিশালী জনসংহতিকে। পাল্টাপাল্টি হামলায় নিহত হয় উভয় পক্ষের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী। জনসংহতি সমিতি প্রকাশ্যে এ দুই দলকে ‘একে অপরের পরিপূরক’ হিসেবে তুলে ধরে সভা-সমাবেশে। কিন্তু জনসংহতি সমিতি-ইউপিডিএফের এই প্রেমে বড় ধরনের চোট লাগে সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। অতি আত্মবিশ্বাসী ইউপিডিএফ নির্বাচনের মাঠে প্রার্থী হিসেবে নামতে দেয় নিজেদেরই তখনকার মিত্র ও বন্ধু শক্তিমান চাকমাকে। নিজেদের আধিপত্য থাকার পরও সেই নির্বাচনে স্থানীয় হিসেবে বেশিমাত্রায় পরিচিত ও জনপ্রিয় শক্তিমানের কাছে হেরে যান ইউপিডিএফের প্রার্থী সুশীল জীবন চাকমা। পরাজয়ের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই তারা দেখতে পায়, নিজেদের শক্ত ঘাঁটিতে ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে ইউপিডিএফ। নিজের মেধা, যোগ্যতা আর দূরদর্শিতা দিয়ে শক্তিমান চাকমা নিজের দল জনসংহতি সমিতিকে (এম এন লারমা) নানিয়ার চরে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ফলে ২০১৬ সালে নিজেদের ঘাঁটি থেকে ছিটকে পড়ে ইউপিডিএফ। গত এক বছরে নানিয়ার চর সদরে প্রবেশও করতে পারেনি তারা। পালন করতে পারেনি কোনো কর্মসূচি। ইউপিডিএফের নানিয়ার চর হয়ে ওঠে জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) নানিয়ার চরে। বিষয়টি মানতে পারছিল না ইউপিডিএফ। এর মধ্যেই ঘটে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

ইউপিডিএফ-জনসংহতি ঐক্য বনাম দুই পক্ষের বিদ্রোহীরা

২০১৬ সালে পার্বত্য রাজনীতিতে একটি বড় মেরুকরণের ঘটনা ঘটে। সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতির সঙ্গে চিরশত্রু প্রসিত খীসার ইউপিডিএফের মধ্যে একটি বিরল রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরি হয়। ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ দুই সংগঠন পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী নিহত হলেও এই বিরল সমঝোতার পর আর কোনো সংঘাত হয়নি দুই পক্ষের। নতুন মেরুকরণের ফলে ইউপিডিএফের সঙ্গে তার পুরনো বন্ধু জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। এরই মধ্যে আবার ইউপিডিএফের বিদ্রোহী একটি অংশ তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পৃথক আরেকটি দল গঠন করে। নতুন এ দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে ইউপিডিএফের সম্পর্কের টানাপড়েনে থাকা জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা)। ফলে তৈরি হয় নয়া মেরুকরণ। এ মেরুকরণে ইউপিডিএফের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনায় গত তিন মাসে সংগঠনটির অন্তত সাতজন নেতাকর্মী নিহত হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মিঠুন চাকমা। ফলে একদিকে নানিয়ার চরে নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে শক্তিমান চাকমার ওপর ক্ষোভ আর একের পর এক নেতাকর্মী হত্যার জন্য তপন জ্যোতি চাকমার ওপর ক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় ইউপিডিএফের। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন হিল উইমেনস ফেডারেশনের দুই শীর্ষ নেত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল। প্রায় ৩২ দিন পর ওই দুই নেত্রী মুক্তি পেলেও এ ঘটনায় তপন জ্যোতি চাকমা বর্মার ওপর চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে ইউপিডিএফ। এসব কারণে শক্তিমান চাকমা ও তপন জ্যোতি চাকমা হয়ে ওঠেন ইউপিডিএফের মূল টার্গেট!

কী হবে নানিয়ার চরে

মাত্র দুই দিন আগে যে নানিয়ার চরে যেতেই পারত না ইউপিডিএফের নেতাকর্মীরা, মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে বাধার প্রাচীর হয়ে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) অন্যতম শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা এবং তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে গিয়ে সশস্ত্র হামলার শিকার হয়ে তপন জ্যোতি চাকমার মৃত্যুর পর আবার সেখানে ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টিকে খুব সহজ মনে করছেন না পার্বত্য রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে কাছ থেকে দেখা পর্যবেক্ষকরা। তাঁদের ধারণা, আসছে দিনগুলোতে আরো বড় ধরনের মেরুকরণ ঘটতে যাচ্ছে।

কে এই তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা

তপন জ্যোতি চাকমা, ডাকনাম ‘বর্মা’। পার্বত্য রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ির বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় ‘বর্মা’ নামে পরিচিত। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে জন্ম নেওয়া পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পাহাড়িদের সংগঠন ইউপিডিএফের সশস্ত্র শাখার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাঁর মাধ্যমে গত দুই দশক ওই এলাকায় নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে ইউপিডিএফ। অপহরণ, হত্যা, চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত তপনের সঙ্গে ২০১৭ সালের শুরুতে টানাপড়েন তৈরি হয় ইউপিডিএফ নেতৃত্বের। এই টানাপড়েনের কারণে নানিয়ার চর উপজেলায়, উপজেলা চেয়ারম্যান  অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার হাত ধরে ক্রমেই শক্তিশালী হতে থাকা জনসংহতি সমিতিতে (এম এন লারমা) যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে তপন ও তাঁর কিছু অনুসারী। কিন্তু ওই বছরেই পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে একটি অদৃশ্য ‘সমন্বয় ও সমঝোতা’ হলে আর তাঁকে নিতে পারেনি জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। ফলে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এসে খাগড়াছড়ি শহরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে পৃথক আরেকটি দলের ঘোষণা দেন তপন। সঙ্গে থাকে একসময় তাঁর সহযোদ্ধা হিসেবে থাকা শখানেক নেতাকর্মী। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর গত তিন মাসে ইউপিডিএফের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন মিঠুন চাকমা। তপন জ্যোতি চাকমা তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত শক্তিমান চাকমার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, শক্তিমান চাকমা শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, একজন আইনজীবী, একজন জনপ্রতিনিধিও। তাঁকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করার পরও যদি ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে সরকার ভুল করবে।

তখন কে জানত মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে প্রিয় শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নিজেই লাশ হবেন!

 






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*