প্রাণের ৭১

প্রসঙ্গ মামুনুল হকঃ শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না -মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

মোদির আগমন ঠেকাতে নয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কলঙ্কিত, হেয় প্রতিপন্ন ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে হেফাজত নেতা আল্লামা মামুনুলের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও ধ্বংসলীলা চালাতে গিয়ে তাদের ভাষায় ১৭ – ২০ জন শহীদ হন। আগের দিন বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদী ভাষণ দিয়ে পরের দিন রয়েল রিসোর্টে গেলেন কথিত স্ত্রীকে নিয়ে অবকাশ যাপনে। নিহতদের রক্তের দাগ শুকায় নাই। থামেনি শোকার্ত পরিবারের কান্নার রোল। যন্ত্রণাকাতর শত শত আহতের আর্তচিৎকারও থামেনি। সমবেদনা ও শান্তনার বাণী নিয়ে নিহত শোকার্ত পরিবার ও আহতদের পাশে না দাড়িয়ে তিনি গেলেন চিত্তবিনোদনে প্রমোদবিহারে। যেখানে গেলেন সেখানে অবকাশ যাপনের নামে ফূর্তি আমোদ প্রমোদ, লালপানি নীলপানি, নারী পরকীয়া ভোগ বিলাসসহ চলে যতসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড।

যতই চেষ্টা করা হোকনা কেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। শাকের আড়ালে মাছ উঁকি দিয়ে দেখা দেবেই। মামুনুল হক হুজুর যতই চেষ্টা করেননা কেন বান্ধবী জান্নাত আরা ঝর্ণা কে স্ত্রী আমেনা তৈয়বা বানাতে পারবেনা। যেমনি চোর চুরি করে প্রমাণ একটা রেখে যায়, খুনি খুন করে খুনের সব আলামত ধ্বংস করতে পারে না, অজান্তে যে কোন প্রামাণ্য উপকরণ ফেলে যায়, তেমনি মামুনুল হকও কথিত স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনার আগে পরে বহু অঘটনের জন্ম দিয়েছেন। যার প্রমাণ শুধু সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয় বহু সাংবাদিকের হাতেও আছে। কিছুটা প্রকাশিত কিছুটা অপ্রকাশিত। সময় সুযোগ বুঝে সব প্রকাশিত হবে।

সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হুজুর বললেন তার স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা কিন্তু কথিত স্ত্রী নিজের নাম বললেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। তাহলে হুজুর কি মিথ্যে বলেছেন। না, মামুনুল হুজুর ভুল বলেননি, হুজুর তো, তাই মিথ্যে বলতেও পারেননা। তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা। এবং ওই নামে হুজুর ৫০০০/= টাকা থাকা + খাওয়া খরচ ৩০০০/= টাকা মোট ৮০০০/= টাকায় ১ দিনের জন্য ৫০১ নম্বরটা রুম বরাদ্দ নিয়েছেন। স্ত্রী আমেনা তৈয়বা ঘটনার সময় ছিলেন বাসায়। তাহলে রিসোর্টে সাথে থাকা আমেনা তৈয়বা নামে হুজুরের কথিত স্ত্রীটা কে ? না না মক্ষিরানী নয়। টেলি সংলাপে জানা গেল জনৈক শহীদুলের স্ত্রীই মামুনুল হুজুরের কথিত স্ত্রী। আরো জানা গেল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হুজুর স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন। যদি স্ত্রী হতো তাহলে হুজুর সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট রেজিষ্ট্রেশন এন্ট্রি বইতে জান্নাত আরা লিখাতো। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার অপচেষ্টা মানে পরকীয়া কে জায়েজ করার হুজুরীয় অপকৌশল। হুজুরে পাকের বোন, ভাইয়ের ইজ্জত রক্ষার্থে আমেনা তৈয়বার কাছে আবদার সাধলেন, আমেনা তৈয়বা যেন বলেন ওই নারীর সাথে যা কিছু হয়েছে তার সম্মতিতে হয়েছে। একই আবদার ছিল প্রাণপতি হুজুরে মহব্বত আল্লামা মামুনুলের।
এবার মামুনুল হুজুর জান্নাত আরা ঝর্ণার কাছ থেকে জানতে চাইলেন এখন তিনি কোথায় আছেন, টাকার ব্যাগে অনেকগুলো টাকা ছিল, গাড়ির চাবি খুঁজে পাচ্ছি না ?
কাশেমী হুজুরের বাসায় আছি, টাকাগুলো নিরাপদে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি, চাবি আমার কাছে নাই। ঝর্ণার আরো উত্তর ছিল যে, “মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা আমার সাথে খুব ভাল আচরণ করেছে। আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে, হেজাব খুলে আমার অন্তত ২-৩ টি ছবি তুলেছে।” তার মানে পুলিশ ছবিসহ সব তথ্য প্রমাণ হস্তগত করে মেডামকে ছেড়ে দিয়েছেন।

এদিকে ঝর্ণা বেগমের বড় ছেলে লাইভে এসে চমকে যাওয়ার মত যে তথ্য দিলেন তা হল মামুনুল হুজুর তার মায়ের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের পারিবারিক সুখ শান্তি, হাসি আনন্দ চিনিয়ে নিয়ে গেছেন। তার কারণে মা বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ সংঘটিত হয়। মামুন হুজুর মানুষ নয়, মুখোশের আড়ালে একটা জানোয়ার।
হযরতুল আল্লামা মামুনুল হক লাইভে এসে বারবার বলার চেষ্টা করছেন শরিয়ত সম্মতভাবে রিসোর্টের সে নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু তিনি কথিত স্ত্রীর নাম ভুলে গিয়ে প্রকৃত স্ত্রী আমেনা তৈয়বা নামে কি দ্বিতীয়বার কলেমা পড়েছেন। নাকি ওমুক জেলা উপজেলা ওমুক গ্রামের ওমুকের মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করলাম বলে সাদি মোবারকটা সেরে নিয়েছেন।

গত ২৬ মার্চ শুক্রবার বাদ আছর আমার দ্বিতীয় কন্যার শুভ আকদ সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম মেহেদীবাগ সিডিএ জামে মসজিদে। সে মসজিদে আমার মেয়ে সহ আরো ৮ জনের সাদি মোবারক সম্পন্ন হয়। বরকে কলেমা পড়ান মসজিদের পেশ ইমাম চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর গিয়াসউদ্দিন তালুকদার। ৮ বরের বরযাত্রীর উপস্থিতিতে মসজিদে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না।
আমার উপস্থিত ছিল মসজিদের সর্বশেষ কাতারে। সবার শেষে আমার মেয়ের শুভ আকদের কার্যক্রম শুরু হলে হুজুর আমার নাম ঘোষণা করে আমাকে হুজুরের কাছে ডাকলেন। অসুস্থতার কারনে এতবড় মসজিদের অনেকগুলো কাতার বহু মুসল্লীদের অতিক্রম করে আমার পক্ষে যাওয়া অসম্ভব হলে আমার ছোটভাই রমজান আলী দোলনকে হুজুরের কাছে পাঠাই। হুজুর পিতার বর্তমানে চাচার উপস্থিতিতে আকদ দিতে রাজি না হয়ে বললেন, “আমাকে পিতার সম্মতি জানতে হবে। হুজুর আরো বললেন আকদের পূর্বশর্ত হলো পিতা জীবিতকালীন পিতার সম্মতি।”
আমার ছোটভাই রমজান আলী দোলন হুজুরকে বোঝাতে সক্ষম হলেন এই বলে যে, ” আমার বড়ভাই মসজিদে সর্বশেষ কাতারে উপস্থিত আছেন এবং তিনি অসুস্থ, তিনি প্রতিনিধি হিসেবে সম্মতি দিয়ে আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।” হুজুর সত্যতা যাচাই করে বরকে কলেমা পড়ালেন। আমার মেয়ের কলেমা পড়াতে হুজুর সর্বাধিক সময় নিয়েছিলেন।

প্রফেসর ডক্টর গিয়াসউদ্দিন তালুকদার দেশের একজন প্রথিতযশা ইসলামী স্কলার। উনার মতে কন্যার সাথে পিতার, পিতা না থাকলে বৈধ অভিভাবকের সম্মতিও আকদের পূর্বশর্ত এবং শরিয়তের বিধান।

ঝর্ণা বেগমের বাবা মা মেয়ের বিয়ের কোন খবর জানেন না। তার মানে তাদের কোন সম্মতিও নেওয়া হয় নাই, তাহলে মামুনুল হক যদি বিয়ে করেও থাকেন তাহলে সে বিয়েকে কিভাবে শরিয়ত সম্মত বলা যায়। বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইনানুসারে মুসলমানের বিয়েতে কাবিন নিকাহনামা রেজিষ্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। কলেমা পড়েও যদি নিকাহ রেজিষ্ট্রেশন না করেন তাহলে মামুনুল বাংলাদেশের নিকাহ আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং মুসলিম পারিবারিক আইনানুসারে সে বিয়ে অবৈধ।

ভাইরা সহ সাংবাদিক সম্মেলনে এসেও মামুনুল করলেন একই কথার পুনরুক্তি, রিসোর্টের সে নারী তার বিবাহিত স্ত্রী কিন্তু তার ভাইরা কিছু বললোনা, দিলেননা সাংবাদিকদের কোন প্রশ্ন করার সুযোগ।
হেফাজতের কতিপয় নেতা সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফাই গাইলেন বললেন একই কথা কথিত স্ত্রী সেই নারী মামুনুলে শরিয়ত সম্মত বিবাহিত স্ত্রী।
কবে কখন কোথায় কলমা পড়েছেন, কোন হুজুর পড়িয়েছেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ? ইত্যাদি প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে তড়িঘড়ি মুনাজাত করে হেফাজতে সরে পড়লেন নেতারা।

বিবাহিত স্ত্রী হলে রয়েল রিসোর্টের রেজিষ্ট্রেশন বা এন্ট্রি বইতে তার নাম পরিচয় লিখতে বাঁধা কোথায় ? বাঁধা হল, কথিত স্ত্রী সেই নারী স্ত্রী নয় বান্ধবী।

মোদির আগমন ঠেকাতে নয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কলঙ্কিত, হেয় প্রতিপন্ন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে হেফাজত নেতা মামুনুলের আহবানে সাড়া দিয়ে দেশে নৈরাজ্য ও ধ্বংসলীলা চালাতে গিয়ে তাদের ভাষায় ১৭ – ২০ জন শহীদ হন। আগের দিন বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদী ভাষণ দিয়ে পরের দিন রয়েল রিসোর্টে গেলেন কথিত স্ত্রীকে নিয়ে অবকাশ যাপনে। নিহতদের রক্তের দাগ শুকায় নাই। থামেনি শোকার্ত পরিবারের কান্নার রোল। যন্ত্রণাকাতর শত শত আহতের আর্তচিৎকারও থামেনি। সমবেদনা ও শান্তনার বাণী নিয়ে নিহত শোকার্ত পরিবার ও আহতদের পাশে না দাড়িয়ে তিনি গেলেন চিত্তবিনোদনে প্রমোদবিহারে। যেখানে গেলেন সেখানে অবকাশ যাপনের নামে ফূর্তি আমোদ প্রমোদ, লালপানি নীলপানি, নারী পরকীয়া ভোগ বিলাসসহ যতসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড।
ছিঃ ছিঃ ! যিনি শান্তির ধর্ম ইসলামের শ্বাশত বাণী প্রচার করেন, কোরান হাদিসের মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে ধর্মান্ধ একটি শ্রেণিকে অন্ধভক্তে পরিণত করেছেন এরূপ একজন পাবলিক ফিগারের পক্ষে এইরূপ অপকর্ম কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাঁর অন্ধভক্তরা আজ নিরন্তর ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, যে তাদের প্রিয় হুজুর নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী, ফুলের মত পবিত্র হুজুরে পাকের চরিত্র। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে কি সত্য গোপন রাখা সম্ভব ?

ফাঁস হওয়া ফোনালাপ গুলোর সংশ্লিষ্টদের কেও অস্বীকার করছেনা যে কণ্ঠ তাদের নয়। হুজুর মামুনুলের অন্ধভক্তরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে সেজেগুজে এডিটিং স্পেশালিষ্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রতিনিয়ত লাইভে এসে সাজাচ্ছে নানান ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, মনগড়া কল্পকাহিনী। হুজুরের মান সম্মান ইজ্জত আব্রু হেফাজত করার বিরামহীন ক্লান্তিহীন কর্মকাণ্ডে সচেতন জনগন মোটেই বিস্মিত হয় নাই। কারণ হুজুরের মান সম্মান ইজ্জত আব্রুর সাথে অন্ধভক্তকুলের আবেগ, ভালবাসা ও গভীরানুভূতি জড়িত। আর অন্ধভক্ত কুলের ভালবাসা ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে যা ঘটানো হয়েছে তা ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না এবং তাতে শান্তির ধর্ম ইসলামের সুমহান মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা ও মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছে।

” তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করিওনা এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করিওনা ”
– আল কোরান।
লেখক
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ
লেখক কলামিস্ট ও রাজনীতি বিশ্লেষক






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*