প্রাণের ৭১

প্রেমিকার উদ্দেশে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মডেলের আত্মহত্যা

‘আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেল, দোয়া রইল তার জন্য’ – ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মডেল তারকা ফাহিম শাহরিয়ার। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন উদীয়মান মডেল তারকা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ শাহরিয়ার ফাহিম (৩০)।

ফাহিম কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকার অধিবাসী বিশিষ্ট ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর আলম জাহানের ছেলে।

মাত্র কয়েকদিন আগে মা রাশেদা আক্তার রেনু দুরারোগ্য ব্যধিতে না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় পৃথিবীটাই অন্ধকার ঠেকছিল মডেল তারকা ফাহিম শাহরিয়ারের কাছে। তার ওপর যাকে অবলম্বন করে জীবনকে সাজাতে ও জীবনকে রাঙাতে স্বপ্ন দেখছিলেন-সেই প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়নই কাল হয়ে দাঁড়ায় ফাহিমের জীবনে। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সে বেছে নেয় আত্মহত্যা করে জীবন বিসর্জনের পথ।

ঢাকার ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব রিয়েল এস্টেট বিষয়ে লেখাপাড়া শেষ করে ফাহিম কাজ করতেন আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে। একই সঙ্গে মডেলিংও পছন্দ ছিল তার। সেখানেই পরিচয় হয় ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া এক তরুণী মডেল তারকার সঙ্গে।

তার ফেসবুক আইডিতে নিজেকে নিয়ে তার লেখায় রয়েছে, ‘ মানুষকে অল্পতেই বিশ্বাস করি ধোঁকা খাই, তারপর বোকার মতো আবার মানুষকে বিশ্বাস করি।’ সেই বিশ্বাসই ফাহিমকে নিয়ে গেছে মৃত্যুর দুয়ারে।

মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল, ‘আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে আমার দুনিয়াটা অনেক ছোট হয়ে গিয়েছিল। আমার ভবিষ্যৎ চাওয়া পাওয়া বলতে যা ছিল আজ তাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল। স্বপ্ন দেখার মতো কিছু নেই। আমার জন্য এত দিন যিনি মিডিয়াতে নিজের প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। আজ থেকে তার পথের কাঁটা সরে গেল। দোয়া রইল তার জন্য। উনি যেন সুপারস্টার হন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে এই কামনাই করি। যদি কখনো কাউকে কোনো প্রকার কষ্ট দিয়ে থাকি তার জন্য স্যরি। ক্ষমা করে দিবেন সবাই। শেষ কথা হচ্ছে আমার জন্য কেউ যেন কাউকে দোষারোপ না করে। আমি যা করেছি আমি আমার নিজের চিন্তা ভাবনায় করেছি। আল্লাহ হাফেজ। ভালো থেকো দুনিয়ার মানুষেরা।’

এরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আত্মহত্যা করে ফাহিম। এর আগে ২৫ মার্চ রাত ১০টা ৪৩ মিনিটে কালো ব্যাকগ্রাউন্ড খচিত অপর এক ছোট্ট স্ট্যাটাসে ফাহিম লেখেন, ‘প্রিয় কষ্ট, চল আমরা দু’জনে মিলে আত্মহত্যা করি।’

ফাহিমের মৃত্যু খবরে কিশোরগঞ্জ শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। জাহাঙ্গীর আলম জাহানের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ফাহিম ছিলেন বড় ছেলে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ফাহিমের মা রাশেদা আক্তার রেনুর মৃত্যু হয়। দেড় মাসেরও ব্যবধানে স্ত্রী বিয়োগের পর বড় ছেলের লাশ কাঁধে ওঠায় শোকে পাথর হয়ে গেছেন ছড়াকার জাহাঙ্গীর আলম জাহান।

ফাহিমের পরিবারিক সূত্র জানায়, ফাহিম ঢাকার মোহাম্মদপুরের পুলপাড় এলাকায় বাসা নিয়ে থাকতেন। তিনি পুলিশ হাউজিং সোসাইটিতে চাকরির পাশাপাশি মডেলিং করতেন। সেই সূত্র ধরেই পরিচয় হয় নওরিন নামের ওই মডেলকন্যার সঙ্গে। আর ফাহিম তাকে ঘিরেই জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখছিলেন।

ফাহিমের চাচা মানবাধিকার কর্মী হারুন আল রশিদ জানান, ফাহিমের মায়ের মৃত্যুর পর ওই মেয়েটি কিশোরগঞ্জে আমাদের বাড়িতেও এসেছিল। কিন্তু সম্প্রতি তার সঙ্গে ফাহিমের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল। সোমবার সন্ধায় রওরীন নামের ওই মেয়েটির সঙ্গে ফাহিমের কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই আত্মহত্যা করে ফাহিম।

তিনি আরও জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের রুমে গলায় দড়ি দিয়ে ফাহিম আত্মহত্যা করে। পাশের কক্ষের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ রিপোর্ট লেখার সময় ফাহিমের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে থেকে কিশোরগঞ্জে নেয়া হচ্ছে। রাতেই বড় বাজার বত্রিশ সামসুদ্দিন ভূঁইয়া মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ফাহিমের লাশ দাফনের কথা রয়েছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*