প্রাণের ৭১

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ছিল কাপুরুষ-মোহাম্মদ হাসান

‘সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাঁকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা।’

বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতা বিরোধীরা সত্যকে অস্বীকার করে মানুষকে বিপথগামী করে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরাই বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ছিল কাপুরুষ।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবর শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্বসম্প্রদায়।

নোবেল বিজয়ী উইলিবান্ট ওই সময় মন্তব্য করেন, ‘মুজিব হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’

১৫ আগস্ট ওই ঘটনার পর বিবিসি প্রকাশ করে, ‘শেখ মুজিব নিহত হলেন তার নিজেরই সেনাবাহিনীর হাতে। অথচ তাকে হত্যা করতে পাকিস্তানিরা সংকোচবোধ করেছে।’

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘শেখ মুজিব নিহত হবার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’

‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে’- জেমসলামন্ড, ইংলিশ এমপি।

ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।’

জাপানি মুক্তি ফুকিউরা আজও বাঙালি দেখলে বলেন, ‘তুমি বাংলার লোক? আমি কিন্তু তোমাদের জয় বাংলা দেখেছি। শেখ মুজিব দেখেছি। জানো এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।’

ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি’। তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।’

হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি আর গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না।’

ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।’

ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস্ উল্লেখ করে, ‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।’

ভারতীয় বেতার ‘আকাশ বাণী’ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তাদের সংবাদ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বলে, ‘যিশু মারা গেছেন। এখন লক্ষ লক্ষ লোক ক্রস ধারণ করে তাকে স্মরণ করছেন। মূলত একদিন মুজিবই হবেন যিশুর মতো।’

একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’

নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে আখ্যা দেয়া হয়।

মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীও বলেছিলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবের কবর একদিন সমাধিস্থলে রূপান্তরিত হবে এবং বাঙালির তীর্থস্থানের মতো রূপলাভ করবে’।

১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় তখন তিনজনের একটা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের টিম বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের একজন ব্র্যায়ন ব্যারন। যাদের তিনদিন শেরাটনে আটকে রেখে সরাসরি বিমানবন্দর দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।

দেশে ফিরে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে লিখিত তার সংবাদ বিবরণীতে বলা হয়, ‘শেখ মুজিব সরকারিভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং জনসাধারণের হৃদয়ে উচ্চতম আসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। এটা যখন ঘটবে, তখন নিঃসন্দেহে তার বুলেট-বিক্ষত বাসগৃহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক-চিহ্ন এবং তার কবরস্থান পুণ্য তীর্থে পরিণত হবে।’ (দি লিস্নার, লন্ডন, ২৮ আগস্ট, ১৯৭৫)।

বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘বঙ্গবন্ধু’ একটি প্রভাব বিস্তারকারী শব্দ। স্বাধীনতার আগে ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের এমন কোনো বিষয় নেই যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি-সমাজ-সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান ছিলেন। তিনি মানুষের চৈতন্যে প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং মানুষ তার সম্পর্কে কিছু না কিছু বলে আত্মতৃপ্তি অর্জন করেছে। ভারতীয় সাহিত্যে মহাত্মা গান্ধী যেমন মানুষের কাছে লেখার উৎস ও প্রেরণায় পরিণত হয়েছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু অনেক লেখককে কেবল নয়, দেশের শিল্প-সাহিত্যের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুতে উন্মোচিত হয়েছেন। তাকে কেন্দ্র করে কবির চেতনা-মননে অব্যক্ত বেদনার নির্ঝর নিঃসরণ হয়েছে। আবার বাংলা শিল্প-সাহিত্যে তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ অনিবার্য হয়ে উঠেছে।

! ‘ওরা’ ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানে সাহসিকতার বিজয়মালা। তিনি ছিলেন সাহসিকতার কিংবদন্তি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু আজও জীবন্ত। তার কর্মনিষ্ঠ, ধৈর্য, সংগ্রামী চেতনা, আপসহীনতা আর অসীম সাহসিকতার জন্য যুগস্রষ্টা নেতা হয়েছিলেন তিনি। পূর্ববাংলার ইতিহাস গড়েছেন। কারাগারে বছরের পর বছর বন্দি থেকেও তার বাংলা ও বাঙালির স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা ছিল অসামান্য।

তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান; রাজনৈতিক কর্মকান্ডে উৎসর্গীকৃত ছিল তার প্রাণ। তাইতো সেই মহান ব্যক্তি আজও যেন স্বাধীনতায়, স্বাধীনতার পতাকায় জীবন্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রচেষ্টা সেই জীবন্ত মহাপুরুষের আদর্শের ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য দিয়ে যায়।

জাতির পিতা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা একের পর এক তা পূরণ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানেই তার হাতের স্পর্শ রেখেছেন সেখানেই সোনা ফলছে। তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনাকে যেমন চাপ উপেক্ষা করতে হয়েছে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধপরাধীর বিচার করতে। প্রান নাশের চেষ্টা হয়েছে উনিশবার। মোকাবেলা করতে হয়েছে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, সাম্প্রদায়িকতার। হাসিনা পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী, প্রভাবশালী, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত ৫টি দেশের কোনটির প্রধানমন্ত্রী নন। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, একদা তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা পাওয়া দেশটার নেতৃত্ব দিতে দিতে তিনি এমন অবস্থানে পৌঁছেছেন যে আজ বাংলাদেশ বিরোধী মার্কিনমুলুকের চরম পুঁজিবাদীদের পরম প্রিয় পত্রিকা ফোর্বাস তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ নারীর তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*