প্রাণের ৭১

বরগুনার কোনো সাংবাদিকের মনেই কি এই প্রশ্নগুলো জাগেনি? জাগলে তারা এ নিয়ে প্রশ্ন করেননি কেন?

১.বরগুনার রিফাত শরীফের হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন তার শ্বশুর আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। এই দাবিটি তিনি জানিয়েছেন প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে কুপিয়ে রিফাতকে খুন করা হয়েছে। সেই খুনের আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে, পুলিশ তদন্ত করছে।

 

 

বরগুনার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও পুলিশের তদন্তের উপর আস্থা রেখেই আমরা ফলাফলের অপেক্ষা করছি। ঠিক সেই সময়ে রিফাতের বাবা সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নির গ্রেফতার দাবি করলেন কেন?

 

রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির কোনো ভূমিকা থাকলে সেটি নিশ্চয়ই পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে আসবে। মিন্নির সংশ্লিষ্ট তা নিয়ে রিফাতের বাবার কোনো ধরনের সংশয় থাকলে, কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকলে তিনি সেটি পুলিশের কাছেই তো দিতে পারতেন।

 

তদন্তকারীদের কাছে গিয়ে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারতেন। সাংবাদিক সম্মেলন করে তাকে মিন্নির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে হলো কেন? তিনি কি কারো ক্রীড়নক হয়ে কাজটি করেছেন? তিনি কি কারো চাপে কাজটি করেছেন? তিনি কি নিজের ছেলের বউয়ের চরিত্রে কালিমা লেপন করে খুনীদের বাঁচিয়ে দিতে চাইছেন?

বরগুনার কোনো সাংবাদিকের মনেই কি এই প্রশ্নগুলো জাগেনি? জাগলে তারা এ নিয়ে প্রশ্ন করেননি কেন?

এখানে কি বরগুনার ওসির কোনো ভূমিকা আছে? স্থানীয় এসপির কোনো কোনো ভূমিকা আছে?

২. মিন্নির চোখের সামনে তার নববিবাহিত স্বামীকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। মিন্নি আপ্রাণ স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। চোখের সামনে কাউকে কুপিয়ে মেরে ফেলার দৃশ্যই তো একজন মানুষকে ভয়াবহ মানসিক পীড়নের মধ্যে ট্রমার মধ্যে ফেলে দেয়। মিন্নির তো স্বামী খুন হয়েছে।

 

সভ্যদেশগুলোতে এই ধরনের পরিস্থিতিতে মেয়েটিকে মানসিক এবং শারীরিক চিকিৎসকের কাছে রাখা হতো। সভ্যদেশ এই সভ্যতাটুকু দেখায় তার নাগরিকের প্রতি। মিন্নির ভাগে এই ধরনের সব্য আচরণ জোটার কথা না। জুটেওনি। বরং তীব্র মানসিক নিপীড়নের শিকারই হয়েছেন তিনি। রিফাত হত্যার পর এক শ্রেণির মানুষ মিন্নিকে নিয়ে যা করেছে- তাতে তিনি কোনো সভ্য সমাজে বসবাস করতো বলে ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।

৩. মিন্নির স্বামীকে যারা খুন করেছে তারা প্রভাবশালী, তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে। মিন্নির এইসব কিছুই নেই। তার উপর মিন্নি একজন নারী। কোনো ঘটনায় নারীর সম্পৃক্ততা থাকলেও এক শ্রেণীর মানুষ, এক শ্রেণীর মিডিয়া আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যায়। কোনো এক সাবেক নাকি বর্তমান এমপির আত্মীয়, জেলা চেয়ারম্যানের আত্মীয়রা খুনী হিসিবে চিহ্নিত হয়েছে বলেই কি মিন্নির চরিত্রহানির এই অপচেষ্টা শুরু হয়েছে?

 

৪. আমি মনে করি মিন্নিকে প্রোটেকশন দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একটি সভ্য রাষ্ট্রের কাছে, সভ্য প্রশাসনের কাছে এইটুকু আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। রিফাতের খুনীদের বিচারের পথে বাধাগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হোক। আর স্বামী হারানো মেয়েটার চরিত্র হননের বিরুদ্ধেও প্রশাসন কঠোর হউক।

 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*