প্রাণের ৭১

বাংলাদেশে নিপীড়নের মহামারী চলছে

সাকিবঃ বাংলাদেশে যে নিপীড়নের মহামারী চলছে তার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই আইন তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে করে সরকার এবং রাষ্ট্র মানুষের মুখ বন্ধ করে দেবার কাজটি আউটসোর্স করতে পারেন তাঁদের অনুগত বাহিনীর হাতে। ২০১৮ সালে এই আইন চালু হবার পর থেকে তাই ঘটছে। যে যাই বলুক তাঁকে শায়েস্তা করার জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে এই নিপীড়ক আইন। তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুম মুনিরা’র বিরুদ্ধে আনীত মামলা এবং তাঁকে আটক করা। কিছু দিন আগে এই মামলায় সাংবাদিক এবং কার্টুনিস্টসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার জন জেলে আটক আছেন, তাঁদের জামিনের শুনানী হচ্ছেনা। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ আটক হচ্ছেন – ফেসবুকে মন্তব্য করা এক অপরাধে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের অপছন্দ হলেই তার জন্যে নেমে আসছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খড়্গ।
অধ্যাপক সিরাজুম মুনিরার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া; তিনি নগরীর তাজহাট মেট্রোপলিটন থানায় এ মামলা দায়ের করেন (ইত্তেফাক ১৪ জুন ২০২০)। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের এই অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্নেল (অবঃ) আবু হেনা মোস্তফা কামাল মামলা করেছেন (টিবিএস, ১৪ জুন ২০২০)। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দায়িত্ব নিয়েছে। এই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ঠস্বর এখন ছাত্রলীগের শাখা সভাপতির চেয়ে ভিন্ন হয়না।
নিপীড়নের হাতিয়ার হবার জন্যে তাঁদের মধ্যে এক প্রতিযোগিতার সূচনা হয়েছে — বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় সিরাজাম মনিরা কে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু গ্রেফতারের ৩০ মিনিট পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন এসে প্রশাসনের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর চেষ্টা করছে।
মাঝে মাঝে সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় আছে বা নেই তা নিয়ে যারা খুব উদ্বেগের মধ্যে থাকেন তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন যে, শিক্ষকদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করার কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রনী ভূমিকার যদি তালিকা হয় তবে সেই তালিকায় এই ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ওপরেই থাকবে। জানি এই দাবিতে সরকার কর্ণপাত করবেনা তবু বলবো – এই নিপীড়ক আইন বাতিল চাই, মতপ্রকাশের কারনে এই আইনের আওতায় যাদের আটক করা হয়েছে তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি চাই।

 






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*