প্রাণের ৭১

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর উৎসবে সংঘর্ষ, তিনজন নিহত

ভারতে রামনবমীর উৎসবছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionরামনবমী উৎসবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মিছিল।

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে রবিবার থেকে, তাতে অন্তত দুজন মারা গেছেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের।

বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ যেমন হয়েছে, তেমনই ভাঙ্গা হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মূর্তিও।

বিজেপি ও তাদের সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন অস্ত্র হাতে মিছিল করেছে, তেমনই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও এবারে নেমেছিল পাল্টা রামনবমী পালন করতে।

পশ্চিম বর্ধমানের রাণীগঞ্জ শহরে হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে রামনবমী পালনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পরে এখনও সেখানে পরিস্থিতি থমথমে। গোটা শহরেই ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা আজও ছড়িয়েছে। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বাহিনী সহ পুলিশের বিরাট দল এলাকায় টহল . রবিবার থেকে রামনবমী পালন করা নিয়ে রাণীগঞ্জ ছাড়াও পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর চব্বিশ পরগণাতেও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে।

রাজ্য জুড়েই বিজেপি ও তাদের সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো তলোয়ার, ত্রিশূল, কাটারির মতো চিরাচরিত অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে।

এই উগ্র অস্ত্র প্রদর্শন করে রামচন্দ্রের জন্মতিথি রামনবমী পালনের চল পশ্চিমবঙ্গে একেবারেই নতুন।

রামনবমী আগেও পালিত হত, তবে তা থেকেছে মূলত পারিবারিক স্তরে।

পুরাণ বিশারদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বলছিলেন, তাঁদের বাড়িতে কীভাবে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়।

মিছিলছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionবিজেপি সেখানে হিন্দুদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে।

“দুর্গা পুজো বা কালীপূজোর মতো রামনবমী কোনও কালেই বারোয়ারি উৎসব ছিল না পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তা বলে কি এখানে রামনবমী পালন করা হত না? আমাদের বৈষ্ণব বাড়ি। ছোট থেকেই দেখেছি সারাদিন উপবাসের পরে সন্ধ্যায় রামকথা পাঠ হত, কীর্তন হত। এটাই প্রচলিত প্রথা ছিল। কিন্তু এই দুবছর ধরে রামচন্দ্রে যে রুদ্ররূপ সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে, অস্ত্র নিয়ে আস্ফালন কোনও রামায়ণেই বর্ণিত নেই। রামের এই চেহারা একেবারে অপরিচিত,” বলছিলেন নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী।

বিজেপি আর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর এই অস্ত্র প্রদর্শন করে রামনবমী পালনের পিছনে যে রাজনীতি রয়েছে, তা স্পষ্ট বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ভিত শক্ত করতে আর মাস কয়েক পরের পঞ্চায়েত ভোটে হিন্দু ভোট একজোট করার লক্ষ্যেই এই রাজনীতি করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো – এমনটাই মত তাঁদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিষ মৈত্র বলছিলেন, “একটা স্পষ্ট ডিজাইন দেখা যাচ্ছে, যেটা উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও হয়েছিল। নির্বাচনের মূল ইস্যুগুলোকে পেছনে ঠেলে দিয়ে ধর্মকে সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা – যা দিয়ে মানুষকে মাতিয়ে দেওয়া সহজ। সমস্যাটা হচ্ছে বেশীরভাগ মানুষেরই তো রামায়ণ পড়া নেই, তাই তাদের যা বোঝানো হচ্ছে, তাই বুঝছে তারা।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে উদ্ধৃত করে মি. মৈত্র বলছিলেন, “উনি একটা যথার্থ কথা বলেছেন। রামচন্দ্র বা তাঁর ভক্তরা কি পকেটে পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াত। অথচ এখন তো দেখা যাচ্ছে যে রামভক্তদের হাতে তলোয়ার, পকেটে কারও পিস্তল, আবার তারা বোমাও ছুঁড়ছে।”

মটরসাইকেল মিছিলছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionতৃনমূল কংগ্রেসও মিছিল করে শক্তি প্রদর্শন করেছে।

নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বলছিলেন, “নাবালকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যা করা হচ্ছে, তা তো একেবারে জঙ্গীপনা!”

গত বছর শুধু হিন্দুবাদী সংগঠনগুলোই রামনবমীর দিনে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছিল। কিন্তু এবারে তাদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সব এলাকায় রামনবমীর পাল্টা মিছিল করেছে – যদিও তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না।

কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছিলেন, “সর্বভারতীয় স্তরে রামের নামে যে ভোট হয়, রাম যে ভোট টানতে সক্ষম, সেটা আগেই দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও এখন রাম নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। এতদিন শুধু বিজেপি এটা করত, এখন তো দেখছি তৃণমূল কংগ্রেসও সেই পথেই পা বাড়ালো। হয়তো তারা ভাবছে যে রাম নিয়ে রাজনীতির ময়দানটা শুধু বিজেপি কে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।”

রামনবমীর দিনে অস্ত্র প্রদর্শন নিয়ে মি. নন্দ বলছিলেন, “এটা কনসেপ্ট অফ ডিফায়েন্স – যা বহুকাল ধরেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো করে আসছে। সরকারী নির্দেশ অমান্য করার মনোভাব।”

তৃণমূল কংগ্রেস কেন হিন্দুত্ববাদীদের টেক্কা দিতে গিয়ে রামনবমী পালন করতে গেল, তা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে নানা বুদ্ধিজীবী আর বামপন্থী দলগুলো বলছে ক্ষমতাসীন দলের এই রাজনীতিতে নামাটা অনুচিত হয়েছে।

অন্যদিকে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের করতে কেন দিল পুলিশ তা নিয়েও যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে এটা আগে থেকে বোঝা গেলেও তা আটকাতে কেন ব্যর্থ হল প্রশাসন তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।

ভারতে রামনবমীর উৎসবছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionরামনবমী উৎসবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মিছিল।

পশ্চিমবঙ্গে রামনবমীর সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে রবিবার থেকে, তাতে অন্তত দুজন মারা গেছেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের।

বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ যেমন হয়েছে, তেমনই ভাঙ্গা হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মৌলানা আবুল কালাম আজাদের মূর্তিও।

বিজেপি ও তাদের সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো যেমন অস্ত্র হাতে মিছিল করেছে, তেমনই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও এবারে নেমেছিল পাল্টা রামনবমী পালন করতে।

পশ্চিম বর্ধমানের রাণীগঞ্জ শহরে হিন্দু আর মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে রামনবমী পালনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পরে এখনও সেখানে পরিস্থিতি থমথমে। গোটা শহরেই ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বিক্ষিপ্ত উত্তেজনা আজও ছড়িয়েছে। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ বাহিনী সহ পুলিশের বিরাট দল এলাকায় টহল দিচ্ছে।

রবিবার থেকে রামনবমী পালন করা নিয়ে রাণীগঞ্জ ছাড়াও পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর চব্বিশ পরগণাতেও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে।

রাজ্য জুড়েই বিজেপি ও তাদের সহযোগী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো তলোয়ার, ত্রিশূল, কাটারির মতো চিরাচরিত অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে।

এই উগ্র অস্ত্র প্রদর্শন করে রামচন্দ্রের জন্মতিথি রামনবমী পালনের চল পশ্চিমবঙ্গে একেবারেই নতুন।

রামনবমী আগেও পালিত হত, তবে তা থেকেছে মূলত পারিবারিক স্তরে।

পুরাণ বিশারদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বলছিলেন, তাঁদের বাড়িতে কীভাবে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়।

মিছিলছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionবিজেপি সেখানে হিন্দুদের একত্রিত করার চেষ্টা করছে।

“দুর্গা পুজো বা কালীপূজোর মতো রামনবমী কোনও কালেই বারোয়ারি উৎসব ছিল না পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তা বলে কি এখানে রামনবমী পালন করা হত না? আমাদের বৈষ্ণব বাড়ি। ছোট থেকেই দেখেছি সারাদিন উপবাসের পরে সন্ধ্যায় রামকথা পাঠ হত, কীর্তন হত। এটাই প্রচলিত প্রথা ছিল। কিন্তু এই দুবছর ধরে রামচন্দ্রে যে রুদ্ররূপ সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে, অস্ত্র নিয়ে আস্ফালন কোনও রামায়ণেই বর্ণিত নেই। রামের এই চেহারা একেবারে অপরিচিত,” বলছিলেন নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী।

বিজেপি আর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর এই অস্ত্র প্রদর্শন করে রামনবমী পালনের পিছনে যে রাজনীতি রয়েছে, তা স্পষ্ট বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের ভিত শক্ত করতে আর মাস কয়েক পরের পঞ্চায়েত ভোটে হিন্দু ভোট একজোট করার লক্ষ্যেই এই রাজনীতি করছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো – এমনটাই মত তাঁদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিষ মৈত্র বলছিলেন, “একটা স্পষ্ট ডিজাইন দেখা যাচ্ছে, যেটা উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও হয়েছিল। নির্বাচনের মূল ইস্যুগুলোকে পেছনে ঠেলে দিয়ে ধর্মকে সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা – যা দিয়ে মানুষকে মাতিয়ে দেওয়া সহজ। সমস্যাটা হচ্ছে বেশীরভাগ মানুষেরই তো রামায়ণ পড়া নেই, তাই তাদের যা বোঝানো হচ্ছে, তাই বুঝছে তারা।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে উদ্ধৃত করে মি. মৈত্র বলছিলেন, “উনি একটা যথার্থ কথা বলেছেন। রামচন্দ্র বা তাঁর ভক্তরা কি পকেটে পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াত। অথচ এখন তো দেখা যাচ্ছে যে রামভক্তদের হাতে তলোয়ার, পকেটে কারও পিস্তল, আবার তারা বোমাও ছুঁড়ছে।”

মটরসাইকেল মিছিলছবির কপিরাইটSANJAY DAS
Image captionতৃনমূল কংগ্রেসও মিছিল করে শক্তি প্রদর্শন করেছে।

নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী বলছিলেন, “নাবালকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যা করা হচ্ছে, তা তো একেবারে জঙ্গীপনা!”

গত বছর শুধু হিন্দুবাদী সংগঠনগুলোই রামনবমীর দিনে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছিল। কিন্তু এবারে তাদের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসও সব এলাকায় রামনবমীর পাল্টা মিছিল করেছে – যদিও তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না।

কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলছিলেন, “সর্বভারতীয় স্তরে রামের নামে যে ভোট হয়, রাম যে ভোট টানতে সক্ষম, সেটা আগেই দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও এখন রাম নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। এতদিন শুধু বিজেপি এটা করত, এখন তো দেখছি তৃণমূল কংগ্রেসও সেই পথেই পা বাড়ালো। হয়তো তারা ভাবছে যে রাম নিয়ে রাজনীতির ময়দানটা শুধু বিজেপি কে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না।”

রামনবমীর দিনে অস্ত্র প্রদর্শন নিয়ে মি. নন্দ বলছিলেন, “এটা কনসেপ্ট অফ ডিফায়েন্স – যা বহুকাল ধরেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো করে আসছে। সরকারী নির্দেশ অমান্য করার মনোভাব।”

তৃণমূল কংগ্রেস কেন হিন্দুত্ববাদীদের টেক্কা দিতে গিয়ে রামনবমী পালন করতে গেল, তা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট কবি শঙ্খ ঘোষ থেকে শুরু করে নানা বুদ্ধিজীবী আর বামপন্থী দলগুলো বলছে ক্ষমতাসীন দলের এই রাজনীতিতে নামাটা অনুচিত হয়েছে।

অন্যদিকে অস্ত্র নিয়ে মিছিলের করতে কেন দিল পুলিশ তা নিয়েও যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে এটা আগে থেকে বোঝা গেলেও তা আটকাতে কেন ব্যর্থ হল প্রশাসন তা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে।

BBC






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*