প্রাণের ৭১

ভোট পর্যবেক্ষণে বিদেশিদের অনীহা

তহবিল সংকটের কারণে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না পশ্চিমা দেশগুলো। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় তাদের বড় অঙ্কের অর্থ জোগান দিতে হচ্ছে। নির্বাচনে বড় আকারের পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর মতো অর্থ অনেক দেশই বরাদ্দ রাখেনি। তবে এ দেশে দূতাবাসগুলো নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেঞ্চা টিয়েরিংক বেশ কয়েক মাস আগেই কালের কণ্ঠকে বড় আকারের পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ইইউ যদি পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠায় তবে তার জন্য বাংলাদেশ-পরিস্থিতি কোনোভাবেই দায়ী নয়। তহবিলের ঘাটতিই এর মূল কারণ।

জানা গেছে, ইইউ বড় আকারের কোনো পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠালেও দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মিশন পাঠাচ্ছে। ওই মিশনের সদস্যরা হলেন ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ট ও আইরিন মারিয়া গুনারি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সোম বা মঙ্গলবার তাঁরা ঢাকায় পৌঁছবেন। নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে প্রায় দুই মাস তাঁরা এ দেশে অবস্থান করে নির্বাচন ও নির্বাচন সম্পর্কিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের সঙ্গেও তাঁদের বৈঠক করার কথা রয়েছে।

অতীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে, এমন একটি বেসরকারি সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসছে এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন বলেই তাঁরা জানতে পেরেছেন।

পর্যবেক্ষক না পাঠানোর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে এখন বাংলাদেশে এক নম্বর ইস্যু হলো শরণার্থী সংকট। মিয়ানমার থেকে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গার প্রয়োজন মেটানো এবং এ সংকট মোকাবেলার দিকেই এখন সবার দৃষ্টি। গুরুত্বের বিচারে মানবিক সংকট বাংলাদেশে নির্বাচনের গুরুত্বকে ছাপিয়ে গেছে।

ঢাকায় পশ্চিমা একটি দেশের কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন এ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি বলেন, আন্তর্জাতিক সমস্যা কোনটি? সেটি অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকট। এ সংকট ঘিরে প্রবল অনিশ্চয়তা যেমন আছে, তেমনি আছে চীনের মতো পরাশক্তির ভূমিকা। এ সংকটে চীনের একটি অবস্থান আছে, যা অনেকের চেয়েই আলাদা। তাই এ ক্ষেত্রে অন্য পরাশক্তিগুলোও সক্রিয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে আমরা অবশ্যই দৃষ্টি রাখব। এই নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, সংঘাত আমরা চাই না। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে আমরা পুরো ব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারব না। তাই অর্থ যদি ব্যয় করতে হয় তবে সেটি মানবিক সংকটে ব্যয় করাই ভালো।’

ওই কূটনীতিক স্মরণ করিয়ে দেন, চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যে তহবিল প্রয়োজন ছিল, তাও এখনো জোগাড় হয়নি। নতুন বছরে রোহিঙ্গাদের চাহিদা মেটাতে আবার তহবিল গঠন করতে হবে।

এদিকে বিদেশ থেকে বড় মিশন পাঠিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার চেয়ে বরং স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পেছনে অর্থায়নেরও ইঙ্গিত মিলেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড গত বুধবার পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথা অব্যাহতভাবে তুলে ধরেছে। ইইউ একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের অর্থায়ন করবে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক দপ্তর ডিএফআইডি। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছে। এ জন্য কার্যকর সংলাপে বসার জন্য সরকার ও বিরোধী পক্ষকে উৎসাহিত করে আসছে।

মার্ক ফিল্ড বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার বিষয়টি ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*