প্রাণের ৭১

মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরু

মোহাম্মদ হাসানঃ মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বহু আকাঙ্খিত একটি স্বাপ্নিক স্বপ্ন। আর একাত্তরের ডিসেম্বর। সে এক উন্মাদনার সময়। ডিসেম্বর এলেই মানুষ হারিয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনের স্মৃতি চারণে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এর পেছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্ত ও মহান আত্মত্যাগ। মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি একসাগর রক্তের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন; প্রিয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

আজ ১ ডিসেম্বর। শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা হলো ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয় এ মাসেই। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় আসে ১৬ ডিসেম্বর। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে অর্জিত এ বিজয় আনন্দ ও গৌরবের। একই সঙ্গে প্রিয়জন হারানো শোকের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি সেদিন দৃঢ় শপথ নিয়েছিলেন স্বাধীনতা অর্জনের।

একটি মানচিত্র, একটি পতাকার হাত ধরে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ নামক স্বাধীন দেশটি বিনির্মাণে লাখো শহীদকে জীবন দিতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে এমন কোন গ্রাম ছিল না, এমন কোন শহর ছিল না যেখানে একজনও শহীদ হননি। গ্রামের পর গ্রাম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তান্ডবলীলা চলেছে, চলেছে সর্বত্র। সেদিনের সেই ধ্বংসলীলা, ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির ঘটনা পঞ্চাশ বছর পরে আজ উপলব্ধি করা সত্যিই কষ্টের।

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা আক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী আরও ভয়াবহভাবে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পারে জিঞ্জিরায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একদিনেই হত্যা করা হয় ৮৭ জনকে। বাঙালির জন্মভূমি শত্রুমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু সেদিন তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালিকে বিজয় অর্জন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান।

প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বীর বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। বাংলাদেশ দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেই রেসকোর্স ময়দানেই পাকিস্তানি বাহিনী নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে আসে পরম কাঙ্খিত বিজয়।

এবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এসেছে এক অন্যরকম উন্মাদনা নিয়ে। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের দাবি আজ বাংলার ঘরে ঘরে, পথে-প্রান্তরে। এবারের বিজয়ের মাস নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হবে। মাসব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন করবেন দেশের মানুষ।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*