প্রাণের ৭১

‘যারা আমাকে গ্রেফতার করেছিলেন তাদেরও হিসাব নেব

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,  সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম, এই কাজ কারা করিয়েছেন, আমি সেটা জানি। তাদেরও হিসাব নেব।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে নানা সময় কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে তা তুলে ধরে বলেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।  তখন অত্যাচার নির্যাতন করেছে বিএনপি সরকার। আর গ্রেফতার করা হলো আমাকে। কারা এই কাজ করেছে, তা আমি জানি। তাদের হিসাব নিকাশও পরে করবো।

তিনি বলেন, বিএনপি বিশেষ একটি এজেন্সি ভাড়া করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দুর্নীতি খোঁজার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো কিছু পায়নি। তারা ক্ষমতায় থাকতে স্বৈরাচারী আচরণ করেছে, এখনও করছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে প্রধনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলব। যে ম মুক্তিযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তারা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে, এটা অপমানজনক। তাদের সন্তানেরা পড়ালেখার সুযোগ পাবে না, সেটা হতে পারে না। তাই আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করলাম। আমরা চেষ্টা করছি, সবার মধ্যে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার। তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে, তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। অথচ ইতিহাসকে মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা জানে না, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।’

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়ন করলেও ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়ত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করলো জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেওয়ার অপরাধে এমন কোনও অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে। পাঁচ পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে।’

বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ের বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশকে সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছে। গ্রেনেড হামলা তো আছেই। এইভাবে অত্যাচার করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা, ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আমাদের ইতিহাস সেই স্বাক্ষী দেবে। আওয়ামী লীগ সরকারই আজ বাংলাদেকে উন্নয়নের রোল মডেল করেছে।

পাকিস্তান আমলে সবক্ষেত্রে বাঙালিরা চরম বৈষম্যের শিকার ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ দেখান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তুতি বঙ্গবন্ধু আগেই নিয়েছিলেন। তার ৭ মার্চের ভাষণে সব নির্দেশনা ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দিব না। আর যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায় তারা যেন আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। এই দেশ জঙ্গিদের হবে না, এই দেশ স্বাধীনতা বিরোধীদের হবে না, এই যুদ্ধাপরাধীরদের হবে না। এই দেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। সেই দেশ হিসেবেই আমি গড়ে তুলতে চাই।

সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-উর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ।

দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের পরিচালনায় সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*