প্রাণের ৭১

যেটি ম্যারাডোনার জন্য ‘কলঙ্ক’

বিশ্বকাপ, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের পর্দা ওঠার আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। দুরু দুরু বুকে ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষণগণনা শুরু করে দিয়েছেন নিশ্চয়ই। শুরু হয়েছে প্রথম আলো অনলাইনেরও ‘কাউন্ট ডাউন’। প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে ক্ষণগণনা নিয়ে একটি বিশেষ রচনা থাকছে। আজ থাকছে ‘১৫’ সংখ্যাটি নিয়ে
বিশ্বকাপের এক ম্যাচে তিন কাঠির নিচে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ কতগুলো ‘সেভ’ করা সম্ভব? সুযোগ থাকলে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ডকে। মার্কিন মুলুকের এ গোলরক্ষক গর্ব আর আফসোস মিশ্রিত কণ্ঠে হয়তো বলবেন, ‘আমি তো দিয়েছিলাম ১৫টি। কিন্তু…।’
এক ম্যাচে ১৫ বার গোল হজম থেকে বাঁচানোর জন্য তো একজন গোলরক্ষককে নিয়ে গর্বই হওয়ার কথা। হাওয়ার্ড যে এ জন্য গর্বিত নন ঠিক তা নয়। কিন্তু তাঁর আফসোস থাকবে, ২০১৪ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১৫টি ‘সেভ’ করেও দলের হার এড়াতে পারেননি। ম্যাচের নির্ধারিত সময় গোলশূন্য ড্র থাকলেও অতিরিক্ত সময়ে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ‘১৫’ সংখ্যাটি হাওয়ার্ডের কাছে তাই যেমন গর্বের আবার আফসোসেরও।
তবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্য ‘১৫’ সংখ্যাটি কলঙ্কের। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ডোপ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির বিপক্ষে। পরে ডোপ টেস্টে ধরাও পড়েছিলেন ম্যারাডোনা। ফিফা তাঁকে ১৫ মাসের জন্য সব ধরনের ফুটবল থেকে বহিষ্কার করে। বিশ্বকাপে এটাই কোনো ফুটবলারের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা। বোঝা গেল তো ‘১৫’ সংখ্যাটি ম্যারাডোনার জন্য কতটা কষ্টের, কলঙ্কের।
কলম্বিয়ার সাবেক গোলরক্ষক ফারাদ মনড্রাগনের জন্য এই ১৫ সংখ্যাই আবার ‘বিশেষ’—একটি বিশ্বকাপ খেলার পর মনড্রাগনকে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৫ বছর ৩৬৩ দিন। ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে খেলার পর মাঝে তিনটি বিশ্বকাপে বিরতি দিয়ে খেলেছেন ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ব্রাজিলের জন্যও ১৫ সংখ্যাটি সুখ জাগানিয়া। ১৯৫৪ বিশ্বকাপ দিয়ে প্রথম বাছাইপর্বের খেলা শুরু করে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এ পর্যন্ত টানা ১৫টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলে তাঁরা সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে চূড়ান্ত পর্বে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে ১৫ সংখ্যাটি। ঘরের মাঠে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। আবার শিরোপা জিততে না পারার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ১৫ গোল—১৯৩৮ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করেও শিরোপা জিততে পারেনি হাঙ্গেরি। এ ছাড়া এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করার অভিজ্ঞতা আর্জেন্টিনা (১৯৭৮), নেদারল্যান্ডস (১৯৭৮), পশ্চিম জার্মানি (১৯৯০) ও সুইডেনের (১৯৯৪)।
বিশ্বকাপে খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা তিন দশকেরও বেশি সময় দখলে রেখেছিলেন ‘ডার বম্বার’ খ্যাত গার্ড মুলার। জার্মানির কিংবদন্তি এই স্ট্রাইকার ১৪ গোল করেন দুটি বিশ্বকাপ (১৯৭০ ও ১৯৭৪) খেলে। ২০০৬ বিশ্বকাপে তাঁর সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ব্রাজিলের ‘ও ফেনোমেনো’ খ্যাত রোনালদো। তিনটি বিশ্বকাপ খেলা রোনালদোর গোলসংখ্যা ছিল ১৫। ২০১৪ বিশ্বকাপে এসে রোনালদোর রেকর্ডটা জার্মানিতে ফিরিয়ে আনেন মিরোস্লাভ ক্লোসা।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*