প্রাণের ৭১

যৌন নিপিড়ক সিরাজ উদ-দৌলা কে সমর্থন করে ফেনী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের আপত্তিকর মন্তব্য।

আগুনে পুড়িয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন ফেনীর সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগম।

একই সঙ্গে রাফি হত্যার বিচারের দাবিতে ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে চাইলেও অনুমতি দেননি ওই অধ্যক্ষ। সেই সঙ্গে ঘটনার জন্য নুসরাতকেই দায়ী করেছেন তিনি ।

এ প্রসঙ্গে সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ছাত্রী তাহমিনা রুমি ও স্নিগ্ধা জাহান রিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে ফেনী সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ব্যানারে আমরা একটা মানববন্ধন করতে কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমের কাছে শনিবার সকাল ৯টায় অনুমতির জন্য গিয়েছিলাম। আমরা কয়েকজন ম্যাডামের রুমে যাই। তারপর ম্যাডাম যা বললেন তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা কেউই।

তারা আরও লিখেছেন, ম্যাডাম আমাদের বললেন নুসরাতকে তার স্যার বলেছিল পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেবে, তাই নুসরাত নিজ ইচ্ছায় স্যারের কাছে গিয়েছিল। অথচ এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছি কলেজের পিয়নকে দিয়ে নুসরাতকে ডাকা হয়েছে। তবে কি আমরা এতদিন ভুল জানতাম? আমাদের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে মিডিয়া? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয় আমার। কে দেবে এসব প্রশ্নের উওর? কোথায় পাব এসবের উওর? আমাদের ম্যাডাম আরও বলেছেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে ঘটতেছে, কারণ বর্তমান মেয়েরা অনেক লোভী। নুসরাত মেয়েটা ধোয়া তুলসী পাতা না। মেয়েটার সঙ্গে যেটা হয়েছে তার জন্য মেয়েটাই দায়ী। এটার জন্য মানববন্ধন করতে আমি কখনও অনুমতি দেব না। তোমরা ক্লাসে যাও।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ তাহমিনা বেগমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক ও স্থানীয়দের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এর আগে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী। এ অভিযোগে মামুন বিল্লাহ নামের ওই শিক্ষার্থীকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিল। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এর আগে তাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় নুসরাত। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। তাকে মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলে ভয় দেখানো হয়। পরে সেখানে বোরকা পরিহিত ৪/৫ ব্যক্তি নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

সোমবার (৮ এপ্রিল) দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ঢামেকের ডাক্তাররা জানান, নাজুক শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব নয়। বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*