প্রাণের ৭১

রাঙ্গুনিয়াকে আরো শান্তিময় ও প্রীতিময় করার অনুরোধ ড.হাছান মাহমুদের

মোহাম্মদ হাসানঃ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। লাল সূর্য খচিত সবুজ পতাকার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ। আজকে আমরা মুসলমান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি আমাদের বাংলাদেশও ঠিক এরকম সুন্দর। আমাদের রাঙ্গুনিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আরো সুন্দর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

আজ ১৮ জুলাই শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে আমরা কিভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয় কিভাবে মুসলমান, হিন্দু , বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ভাই ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয় সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। আমাদের রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামের চিত্র হচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান একযোগে সুন্দরভাবে বসবাস করছে। আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টানের পাশাপাশি চাকমা মারমারাও আছে। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। তাই কোন ব্যক্তি বিশেষ বা কোন গোষ্ঠির কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারেনা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীস্টান। এটিই হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের সাথে যারা বিএনপি জামাত করেন তাদের পার্থক্য। আমি ২০০৮ সালে যখন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তখন আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিল স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রধান এজেন্ট ছিলেন। এটির কারণ হলো উনি হিন্দু নাকি বৌদ্ধ নাকি মুসলিম এটি আমার বিবেচনায় নাই। এটি বিবেচ্য বিষয়ও নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে উনি আমার দলও আমাদের নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল ও অনুগত কিনা।

সকল ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরো শান্তিময় ও প্রীতিময় করার অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ফেসবুকে কে একটা লিখলো সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকবো এটাও হতে পারেনা। আমাদের কাছে কে কোন ধর্মাবলম্বি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কে মানুষ কে বাঙালি সেটা বিবেচ্য বিষয়। তাই সকলের কাছে অনুরোধ কোন ব্যক্তির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারেনা। এবং সেই লক্ষ্যে যেকোন অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে নাপারে।

তিনি বলেন, কদিন আগে রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য আমাকে সরকার থেকে এককোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে। তখন আমি ভাগ করে সেখান থেকে চল্লিশ লাখ টাকা দিয়েছি মন্দির, বিহারসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে বলে স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়াকে পরপর দুবার বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে। একইভাবে পরপর তিনবার হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্টের সদস্য করেছিলাম শ্রীযুক্ত রাখাল চন্দ্র দাশ গুপ্তকে। রাঙ্গুনিয়ায় ইসলাম ধর্মের জন্যও অনেক কাজ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১টি করে নতুন মসজিদ করা করা হয়েছে। শতাধিক মসজিদ ভিত্তিক মক্তব করা হয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষ ভাবে টাকা এনে হিন্দু ধর্মীয় মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী নিজের জীবনের সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ টেনে বলেন, আমি যখন ছাত্রজীবনে ঢাকায় যেতাম তখন আমি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে থাকতাম। সেখানকার গুরুভান্তে সদ্য প্রয়াত শুদ্ধানন্দ মহাথেরো’র বাড়ি আমাদের এলাকায়। আমার বাবার সমসাময়িক। আমি তাকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতাম, উনিও আমাকে সন্তানের মতো আদর করতেন। এটার মধ্যে কোনো খাদ ছিলনা। দিনের বেলা না খেলেও রাতের বেলা সেখানে খেতাম। একথা আমি ঢাকায় বৌদ্ধ মন্দিরসহ সবখানে বলেছি। মানুষ বড় হলে অতীতের কথা বলেনা, ভুলে যায়। আপনাদের দোয়া ও আশির্বাদে আল্লাহর রহমতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে একবার প্রতিমন্ত্রী, দুবার কেবিনেট মন্ত্রী করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। যারা আমাকে নানাভাবে স্নেহ দিয়েছেন বড় করেছেন তাদের কথা আমি ভুলতে পারিনা। তৎমধ্যে অন্যতম শুদ্ধানন্দ মহাথের। আমার ছোটকালে একজন শিক্ষক ছিলেন মৌলভি আবদুর রহমান, তিনি আমাকে দশ বছর পড়িয়েছেন। আমার জীবনের সমস্ত নীতি নৈতিকতার অনেক কিছু আমি তাঁর কাছে শিখেছি -বলেন তথ্যমন্ত্রী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যঅন ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারন সম্পাদক হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন আলকাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারন সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দ থের। হিন্দু ধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসিম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্জ সংঘের প্রধান পালক রেভারেন্ড সহখরীয় বৈরাগী, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী আস্তানা শরীফের পীরজাদা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, সরফভাটা মোয়াবিনুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবুল বয়ান, উপজেলা আওয়ামী লেিগর উপদেষ্ঠা মাওলানা আইয়ুব নুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লেিগর সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমূখ।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগ যুগ ধরেই রাঙ্গুনিয়ায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে একসাথে বসবাস করে আসছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*