প্রাণের ৭১

রাজধানীতে নির্বাচনী সংঘর্ষে পিকআপ চাপায় নিহত

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকায় গতকাল শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পিকআপের চাপায় সুজন (১৭) ও আরিফ (১৫) নামের দুই কিশোর নিহত হয়েছে। সুজন রাজমিস্ত্রির জোগালি এবং আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করত। নবোদয় হাউজিংয়ের পাশাপাশি আদাবরের ১০ নম্বর সড়ক ও শম্পা মার্কেট এলাকা এবং উত্তর আদাবরের সুনিবিড় হাউজিংয়েও একই সময়ে সংঘর্ষ বাধে। তাতে আহত হয়েছে ২০-২৫ জন।

স্থানীয় লোকজন জানায়, গতকাল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে কে কাকে কী উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে এবং হামলাকারীদের নাম নিশ্চিত করে কেউ জানাতে পারেনি। এলাকাবাসী জানায়, অনেককে তারা নতুন দেখেছে। সুনিবিড় হাউজিংয়ে গিয়ে কথা বললে লোকজনকে আতঙ্কিত হতে দেখা যায়। একজন জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ১১টি খালি পিকআপ যেতে দেখে। হাউজিংয়ের মাথায় যাওয়ার পরই উল্টো দিক থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেলে যুবকরা আসে। তাদের দেখে পিকআপগুলো উল্টো দিকে চলতে শুরু করে।

তবে একজন জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের মনোনয়ন সংগ্রহের জন্য গতকাল সকালে গাড়ি দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। নিহত আরিফের বাবা ফারুক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সাদেক খান সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এই সংঘর্ষ ঘটে। এই সংঘর্ষের সময় তাঁর ছেলে নিহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবোদয় হাউজিংয়ের লোহারগেট এলাকা দিয়ে একটি পিকআপে করে কিছু কিশোর, যুবক যচ্ছিল। তখন বিপরীত দিক থেকে কিছু যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পিকআপ থেকে নেমে লোকজন পালাতে চেষ্টা করে। একই সময় পিকআপের চালকও দ্রুত পিকআপটি উল্টো দিকে চালাতে থাকে। তখন পিকআপের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় আরিফ ও সুজন। তাদের উদ্ধার করে আরিফকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং সুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজনেরই মৃত্যু হয়।

গতকাল বিকেলে সংঘর্ষের এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘটনার বিষয়ে কেউ কিছু বলতে নারাজ। সুনিবিড় হাউজিং এলাকার এক ব্যবসায়ী জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার দোকানের সামনে দিয়ে ১০-১১টি খালি পিকআপ যেতে দেখে। হাউজিংয়ের মাথায় যাওয়ার পরপরই উল্টো দিক থেকে মোটরসাইকেল দিয়ে কিছু লোক আসে। পিকআপগুলো দ্রুত উল্টো দিকে যেতে শুরু করে। আর একটু হলে তার দোকানে উঠে যেত একটি পিকআপ। ওই দোকানের সামনে তখন বসে ছিল এলাকার আরো কয়েকজন। তারা জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে এলাকাগুলোতে এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল দফায় দফায় ধাওয়াধাওয়ির ঘটনা ঘটে।

নিহত সুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তার বন্ধু আলামিন। সে কালের কণ্ঠকে জানায়, গতকাল সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুর আলম তাদের একটি প্রগ্রামে যাওয়ার দাওয়াত দেয়। এ জন্য তারা ১০-১২ জন কিশোর বন্ধু মিলে নবোদয় হাউজিং লোহার গেটে যায়। সেখানে একটি পিকআপে ওঠে তারা। এর পরপরই কারা যেন পিকআপে ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় পিকআপ থেকে সবাই তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করে। পিকআপটিও পেছনের দিকে চালাতে থাকে। এ সময় কয়েকজন পড়ে গেলে পিকআপটি সুজন এবং আরেক কিশোরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। পরে সুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

আরিফের ভাই আলাউদ্দিন জানান, যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিল আরিফ। তাদের গাড়িতে হামলা হলে সে নেমে পালানোর সময় ওই গাড়িতেই পিষ্ট হয়।

সংঘর্ষের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুবলীগের তুহিনের নেতৃত্বে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়।’ তবে আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়। এরা জামায়াত-শিবির-বিএনপির লোক। তারা আওয়ামী লীগের লেবাস পরে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে।’

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায় সুজনের মা সুলতানা বেগম আহাজারি করছেন। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আমার সুজন মইরা গেছে, এখন আমরারে কে দেখব।’ এ সময় মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে সুজনের ছোট বোন সুরমা। সুরমা কালের কণ্ঠকে জানায়, তার বাবা থেকেও নেই। জাকির নামে তাদের আরেক বড় ভাই আছে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ। সুজনই কাজ করে সংসার চালাত।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা খতিয়ে দেখছি আমরা।’

নিহত আরিফ তার পরিবারের সঙ্গে ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস করত। আর সুজন পরিবারের সঙ্গে বসবাস করত নবোদয় হাউজিং এলাকায়।

অন্যদিকে হামলার ঘটনায় আহত ২০-২৫ জন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আদাবর থানা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাসফিক এম ইসলাম, নজরুল, আবেদ, ফজলু, ইদ্রিস আলী, কে এম হারুন ও পলাশ।

মাসফিক এম ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক খান মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য প্রস্তুতি নেন। সিদ্ধান্ত হয়, সবাই গিয়ে ধানমণ্ডিতে আবাহনী মাঠে জড়ো হয়ে ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যাবে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা ২০-২৫ জন শম্পা মার্কেটের সামনে আরো কয়েকজনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে বেশ কিছু যুবক এসে তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*