প্রাণের ৭১

…রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনিঃমোহাম্মদ হাসান

কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর যে বলেছিলেন, “ সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি ” সে কথার উত্তরে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “কবি গুরু তোমার কথা মিথ্যে হয়েছে আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে “।

আজ হয়তো জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাঙালি হয়তো সত্যিই মানুষ হতো। কিন্তু তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে সেই কবি গুরুর উক্তিকেই যেন প্রতিষ্ঠিত করা হলো।

নিকট অতীত ও হাল জামানার অবস্থা দেখে আমার বলতে হয়, ” কবি গুরু তুমি মিথ্যা বলোনি,সত্যি আমরা বাঙালি আজও মানুষ হতে পারিনি”।

বর্তনানে সারাবিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন, উৎকন্ঠিত, কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সে পথ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। ঠিক সেই সময়ে আমরা বাঙালিরা বাতাসে ভর করে আসা নানান গুজবে কান দিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য সামগ্রী কিনে ঘরের ষ্টোর রুম, ফ্রীজ ভরে তুলছি আর সে সুযোগ এক শ্রেণীর অতিমুনাফা লোভী অসাধু অসৎ ব্যাবসায়ীরা লুফে নিচ্ছে অবলিলায়। যা রোধে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্তা ব্যাক্তিদের। বসাতে হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালত! ইতিমধ্যেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ রয়েছে কেউ যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু না কেনেন বা সংগ্রহ করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা যেমন, “চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি ” এমন অবস্থা বর্তমানে বিরাজমান।

প্রায়ই নজর কাড়ছে যার পরিবারে আগামী ২ মাসে তেল লাগবে ৪ লিটার সে কিনে নিচ্ছে একসাথে ৮ লিটার, এভাবে চাল,ডাল,নুন,পিঁয়াজ,আলু থেকে শুরু করে সকল পণ্য সামগ্রী। আজ আমরা বাঙালিদের জীবন যাত্রার মান বেড়েছে, পকেটভর্তি টাকা রয়েছে তাই বলে হয়তো এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় এই কারনে যে, আমরা বাঙালিরা আজও মানুষ হতে পারিনি বলেই।

সুতরাং বলছিলাম কি ইতিপূর্বে তো কিছু গুজবের ফলাফল আমারা জেনেছি বা দেখেছি, এই যে ধরুন পদ্মাসেতুতে শিশুর মাথা লাগবে এমন গুজবে ভর করে আমরা সারাদেশে বেশ” কজন হাবাগোবা,বুদ্ধি প্রতিবন্দ্বিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে দুনিয়া ছাড়া করে দিয়েছি।

লবনের দাম বেড়ে যাচ্ছে এমন গুজবে রাত বারোটায় যে পরিবারের বাংসরিক লবনের চাহিদা ১২ কেজি সে পরিবারও ২০ কেজি কিনে বাড়ি ফিরেছেন।

পিঁয়াজের বিষয়ে বৈশ্বিক সংকটে পড়ে তখনও পিঁয়াজ গুজবেও আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ৩ মাসের ষ্টক গোডাউন ও একদিনেই ফিনিস করে দিয়েছি।

সুতরাং সাধু সাবধান। বর্তমানে দেশে ৩ জন ব্যাক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা সকলেই জেনে গেছেন ইতিমধ্যেই তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে আপনার পাশেই ঘাপটি মেরে বসে আছে কিছু অতি মুনাফাখোর অসাধু ব্যাবসায়ী অতি লাভের আসায় নানাহ গুজন রটায়।

অপরদিকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যেও একটা শ্রেণী এমন সুজোগ কাজে লাগিয়ে গুজব রটিয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থে সদা প্রস্তুত।

তাই আসুন আমরা সকলে শুনবো – জানবো – অমনি বিশ্বাস না করে বাস্তবতা জানার চেষ্টা করবে, কে বলেছে,কেন বলেছে, কার থেকে জেনে বলেছে, কোথাও এমনটি ঘটছে কি না এসব বিষয় সঠিক ভাবে জেনে নেবো। গুজবে গা ভাসিয়ে দেবো না।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*