প্রাণের ৭১

সরোয়ার্দি উদ্যানের গাছের জন্যে অহেতুক কান্নাকাটি-লুৎফর রহমান রিটন

সরোয়ার্দি উদ্যানের গাছের জন্যে অহেতুক কান্নাকাটি

লুৎফর রহমান রিটন

 

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, সরোয়ার্দি উদ্যানের মতো এতো বিশাল একটা জায়গাকে গাছপালার জঙ্গল বানিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। কিছু অনাবশ্যক গাছকে কেটে ফেলে সেখানে একটা উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট নির্মিত হলে জাতি বড় উপকৃত হয়। সেলফি তোলার জন্যে আমরা যাঁরা স্বাধীনতা স্তম্ভ দেখতে যাই তাঁদের কেবল চিনা বাদাম চিবুলে হয় না। দীর্ঘকাল ধরে ওখানে একটা অভিজাত রেস্টুরেন্টের অভাব আমরা তীব্র ভাবে অনুভব করছিলাম। এতোদিন পরে আমাদের সেই আকাঙ্খার বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে জানতে পেরে  যার পর নাই আনন্দিত আমরা।

 

এই সরোয়ার্দি উদ্যানেই ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ পেয়ারা পাকিস্তানের বিদায় ঘন্টা বাজিয়েছিলেন শেখ মুজিব। পেয়ারা পাকিস্তানের উমদা সেনাবাহিনি সারেন্ডার করেছিলো এই সরোয়ার্দি উদ্যানেই। জায়গাটা ভালো না।

 

বহুকাল আগে একজন জিয়াউর রহমান আমাদের স্বপ্ন-আকাঙ্খা আর মনোবেদনাকে সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঐতিহাসিক সরোয়ার্দি উদ্যানে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ছোটদের খেলাধুলার পার্ক–শিশুপার্ক। জায়গাটা তিনি ভরে দিয়েছিলেন শিশুদের খেলনাসামগ্রীতে। আমাদের একাত্তরের দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছিলো।

 

তারপর কি থেকে কি হয়ে গেলো।

এই সরোয়ার্দি উদ্যানেই জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে প্রতীকী গণ-আদালত গুলামাযমসহ আটজনের ফাঁসির রায় দিলো!

এই সরোয়ার্দি উদ্যানেই নির্মিত হলো স্বাধীনতা স্তম্ভ!

এই সরোয়ার্দি উদ্যানেই জ্বালিয়ে দিলো শিখা অনির্বাণ!

কী একটা জাদুঘরও বানিয়ে ফেললো তারা মাটির নিচে!

 

একাত্তরে পাকিস্তানের খত্‌মে-তারাবী রচিত হওয়ার ক্ষেত্রটিকে ঘিরে কী সব আহলাদী কাণ্ডকারখানা!

বইমেলাওয়ালাদের ধন্যবাদ তারা এই উদ্যানেই বইমেলা করতে এলো। ভেবেছিলাম একাত্তরের স্বাক্ষীগোপাল এই উদ্যানের বৃক্ষগুলোর আয়ু এইবার ফুরুলো। কিন্তু না। গাছ বাঁচিয়েই তারা উদযাপন করছিলো বইমেলা নামের অনাবশ্যক একটি ইভেন্ট।

 

অতঃপর গতকাল টিভি সংবাদে দেখতে পেলাম করোনার লকডাউনের গৃহবন্দীকালে রাতের অন্ধকারে আমাদের একদল বীরপুঙ্গব কর্তৃক সরোয়ার্দি উদ্যানের কিছু বৃক্ষ কোতল হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি–এইখানে একটি(মতান্তরে একাধিক)  রেস্টুরেন্ট নির্মিত হবে। সেই কারণেই নাকি এই কাটাকাটির সিলসিলা। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!

 

এইক্ষণে আমাদের দাবি–আরো কিছু বৃক্ষকে হটিয়ে সরোয়ার্দি উদ্যানে একটি আবাসিক হোটেল নির্মিত হউক। বইমেলা শেষে বাড়ি ফিরতে প্রতিদিন যানবাহনের সমস্যাজনিত কারণে প্রচুর ভোগান্তি হয় মানুষের। এইখানে একটি বৃহৎ আবাসিক হোটেল নির্মিত হলে আমরা সেখানে শান্তিতে নিশিযাপন করতে পারবো। ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিপুল বইপ্রেমী মানুষের তাতে প্রভূত উপকার সাধিত হবে।

 

সরোয়ার্দি উদ্যান নামক এই জায়গাটা ভালো না।

এইখানে শেখ মুজিব পাকিস্তানের ব্যান্ড বাজা দিয়া।

এইখানে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনি সারেন্ডার কিয়া।

আমরা কি করিবো এই সরোয়ার্দি উদ্যান দিয়া?

সুতরাং–

গাছ কাটো।

উদ্যান খালি করো।

রেস্টুরেন্ট বানাও।

আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…

 

অটোয়া ০৫ মে ২০২১

picture source : internet






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*