প্রাণের ৭১

সিলেটে শয়নকক্ষে খুন মা-ছেলে, বেঁচে যাওয়া পাঁচ বছর বয়সী শিশু উদ্ধার

সিলেট নগরের মীরাবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে এক নারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রাইসা বেগম নামে নিহতের পাঁচ বছর বয়সী শিশুসন্তানকে। নিহত নারীকে গলা কেটে এবং ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর ২টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে ওই বাসার কাজের মেয়ের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

নিহতরা হলেন নগরের বারুতখানা এলাকার বাসিন্দা হেলাল মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪০) এবং তাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন (১৬)। নিহত রোকেয়া বেগম পার্লার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আর ছেলে রোকন নগরের শাহজালাল জামেয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নিহত নারীর স্বামী হেলাল মিয়া পক্ষাঘাতে আক্রান্ত এবং বারুতখানা এলাকায় ভাইয়ের বাসায় আলাদা থাকতেন। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে শনিবার রাতের কোনো একসময় তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

নিহত রোকেয়া বেগমের ভাই জাকির হোসেন জানান, রোকেয়া বেগম তাঁর ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন এবং মেয়ে রাইসাকে নিয়ে মীরাবাজারের মিতালী আবাসিক এলাকার ১৫/জে নম্বর বাসায় এক বছর ধরে ভাড়া থাকতেন। তিনতলা বাসার নিচতলায় তাঁরা থাকতেন। তাঁদের সঙ্গে তানিয়া নামে একটি কাজের মেয়েও থাকত। গত শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রোকেয়ার সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। এর পর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। রবিবার সকালে তাদের খোঁজ নিতে মীরাবাজারের বাসায় আসেন জাকির হোসেন। বাসায় এসে ভেতর থেকে তিনি তাদের দরজা বন্ধ দেখতে পান। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও কেউ দরজা না খোলায় তিনি বাড়ির মালিক সোলেমান হোসেন সালমানকে খবর দেন। বাড়ির মালিক ঘটনা শুনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিনার খান হাসুকে বিষয়টি জানান। কাউন্সিলর তা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে বাসার বিকল্প চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকে ওই নারী ও তাঁর ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। এ সময় ঘরের মধ্যে ক্রন্দনরত অবস্থায় নিহত রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে কাজের মেয়ে তানিয়াকে বাসায় পাওয়া যায়নি।

নিহতের ভাই আরো জানান, মাসখানেক আগে থেকেই রোকেয়া তাঁকে জানিয়েছিলেন, এই বাসায় তাঁর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এই বাসা বদলানো লাগবে। জাকির আরো জানান, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রোকেয়া ওই বাসায় আলাদা থাকতেন। এ ছাড়া গত রমজান মাসে স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে রোকেয়ার স্বামী হেলাল মিয়া নগরের বারুতখানায় তাঁর ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানান, বাসার শয়নকক্ষের একটি বিছানায় রোকেয়া বেগমের রক্তাক্ত মরদেহ এবং অন্য কক্ষের বিছানায় ছেলের লাশ পাওয়া যায়। কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি মন্তব্য করে বলেন, কিছু তথ্য হাতে এসেছে—এগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে কয়েকজন এতে অংশ নিয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ নিহতের বাসা থেকে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে এবং লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে বলে তিনি জানান।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বলেন, ‘মনে হচ্ছে খুনিরা অনেক সময় নিয়ে খুন করেছে। যে কারণে কেউ কিছু টের পায়নি।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খুনিরা তিনজনকেই মারতে চেয়েছিল। মা ও ছেলের সঙ্গে ছোট মেয়েকেও হয়তো শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল। মেয়েটি সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, পরে তার জ্ঞান ফিরেছে। তার গলায় দাগ রয়েছে।’

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এম এ ওয়াহাব বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে মহিলার প্রতি হত্যাকারীদের প্রচণ্ড আক্রোশ ছিল। তাঁকে খুঁচিয়ে খুুঁচিয়ে মারা হয়েছে। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, জীবিত উদ্ধার হওয়া রাইসা নামের পাঁচ বছরের মেয়েটি পুলিশকে কিছু তথ্য দিয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত রাইসাকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা পুলিশ ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্স (পিবিআই) সিলেটের পরিদর্শক আবুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে গতকাল (শনিবার) রাতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘নিহত নারীর পিঠ, বুক, পেট, মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তার ধারণার সঙ্গে বাসার পার্শ্ববর্তী মুদির দোকান শারমিন স্টোরের নাজমুল ইসলামের বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘নিহত রোকন শনিবার রাত ১০টার দিকে সিগারেট কিনতে তাঁর দোকানে এসেছিল।’






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*