প্রাণের ৭১

স্মৃতিবিজড়িত রিস্টব্যান্ড নিলামে বিক্রির ১লক্ষ টাকা বাউল রণেশ ঠাকুরকে দিবেন অমি রহমান পিয়াল।

একটি সাধারন রিস্টব্যান্ড কতো হতে পারে?  ৫ টাকা অথবা ৫০ টাকা!  কিন্তু রিস্টব্যান্ডটি যখন বিশেষ স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় হয় তখন সাধারণ জিনিসটি আপনার কাছে অমুল্য। কথায় আছে শখের তোলা আশি। তেমনি একটি সাধারণ রাবারের রিস্টব্যান্ড খুবই  প্রিয় হয়ে গেছে  সুইজারল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ব্লগার অমি রহমান পিয়াল এর কাছে।

 

গত ১৭ই মে (২০২০ইং) দেওয়া  অমি রহমান পিয়াল এর ফেসবুক টাইমলাইনে স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় রিস্টব্যান্ডটি নিলামে বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তিনি  জানান নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ বাংলার মানুষের কল্যানে  উপহার দিবেন।

নিজস্ব নিলামে বিক্রি রিস্টব্যান্ডটি ১লক্ষ ১ টাকা মুল্যে  কিনে নেন ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার। এই টাকা তিনি উপহার দিবেন বাউল রমেশ ঠাকুরকে,  সাম্প্রতিক দুর্বৃত্ত সাম্প্রদায়িক গোষ্টির দেওয়া আগুনে, চার দশক ধরে সংগৃহীত ও লেখা  বই সহ  ঘর পুড়ে যায়।

এই নিলাম  সংক্রান্ত লেখকের স্টার্টাস দুটো  হুবহু নিচে দেওয়া হলো-

 

আমার একটা কালো রিস্টব্যান্ড আছে। রাবারের। ২০০৫ সালে এইটা হাতে পরছিলাম একটা প্রতিজ্ঞায়- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হইলে এইটা খুলুম না। অনেকটা হাতে চুরি পরার মতো পণ। তারপর থিকা অনেক লড়াইয়ের অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হইয়া এইটা আমার বাম হাতে শোভা পাইছে, পুরুত্ব কমতে কমতে পাতলা হইয়া গেছে। রিস্টব্যান্ডটা প্রতিজ্ঞাপূরণ করছে। দেশ ছাড়ার আগে ভাবছিলাম কোনো লড়াকুর হাতে পরাইয়া দিমু, সুযোগটা হয় নাই। এখানে আসার পর খুইলা যত্ন কইরা রাইখা দিছি। মাশরাফির ব্রেসলেট কিংবা বাধনের জুতার মতো জোর এইটার নাই। তারপরও করোনা দূর্গতদের জন্য সাহায্যার্থে কেউ যদি কিনতে চান, যোগাযোগ কইরেন। ভিত্তিমূল্য ৫০ হাজার টাকা। এর একটা টাকাও আমারে দিতে হবে না। টাকাটা বাংলার মানুষরে দিবেন এই দুঃসময়ে। দেশবাসীরে আপনি কতো দিয়া সাহায্য করবেন সেটাই এইটার মূল্য। শেষ সময় ৩০ মে ২০২০।…

 

পুনশ্চ: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এই রিস্ট ব্যান্ডটা নিয়া একটা ফটো স্টোরি করছিলো। লিংকটা খুজে পাইলাম না, পাইলে কিংবা পিডিএফ করা নিউজটা খুজে পাইলে সংযুক্ত করে দিবো। এটিএনের ইয়াং নাইটে একবার বলছিলাম এটার গল্পটা।

 

১৯শে মঙ্গলবার ২০২০ইং অমি রহমান পিয়াল তার ফেসবুকে স্টার্টাস দিয়ে জানান স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় রিস্টব্যান্ডটি ১লক্ষ ১  টাকা মুল্যে কিনে নেন ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার। বিস্তারিত লেখকের টাইমলাইন থেকে হুবহু দেওয়া হলো-

 

কয়েকদিন আগে একটা পোস্ট দিছিলাম, আমার হাতের কালো রিস্ট ব্যান্ডটা নিয়া। এক যুগের লড়াইয়ের সঙ্গী এই ব্যান্ডটা নিলামে তুলছিলাম। ভিত্তিমূল্য ছিলো ৫০ হাজার টাকা। সময়সীমা ছিলো ৩০ মে পর্যন্ত। ইনবক্সে অনেকে আগ্রহ নিয়া যোগাযোগ করছিলেন। সর্বশেষ দাম উঠছে এক লাখ এক টাকা। সিদ্ধান্ত বদলাইলাম। নিলামটা আর ক্যারি করবো না। বাংলাদেশের করোনা দূর্গতদের জন্য টাকাটা দান করবো সেটাও পরিবর্তন করলাম। এক লাখ এক টাকায় এই ব্যান্ডটা আমি বিক্রি করলাম ছোট ভাই ডাঃ Ferdous Khandker এর কাছে। আর এই পুরা টাকাটা আমি দিতে চাই সুনামগঞ্জের বাউল রণেশ ঠাকুররে। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের এই শিষ্যের ঘরবাড়ি পুড়াইয়া দিছে দুষ্কৃতিকারীরা, অনেক মূল্যবান বইপত্র পুথি পুড়ে গেছে। সেগুলা হয়তো ফেরত আসবে না। কিন্তু রণেশ ঠাকুর এই ট্রমা থেকে বের হতে পারলে নিশ্চয়ই আবার তার স্মৃতি থেকে কিছু না কিছু অমূল্য ধন উদ্ধার করে রিইনস্টেট করা যাবে। এই সাহায্যটা ওনার কাছে কিভাবে পাঠাতে পারি, কিভাবে উনি সেটা কাজে লাগাইতে পারেন সেই বিষয়ে আমি পরামর্শ চাইতেছি। উনাকে নিয়ে যারা পোস্ট দিছেন Faqir Elias ভাই, Najmul Albab Opu আর Asish Baidyaর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি…

এছাড়াও দেশ বিদেশে অবস্থান করা অনেক সাংস্কৃতিমনা  প্রগতিশীল ব্যাক্তি বাউল রণেশ ঠাকুর এর প্রতি   সহানুভূতি ও মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*