প্রাণের ৭১

হেপাজতের তান্ডবের ৫ বছর

হেফাজতের ১৩ দফা ছিল আধুনিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থার অন্তরায়

মোঃ শামসুল আরিফঃ- হেফাজতের ১৩ দফা দাবীর জন্য যে আন্দোলন করেছিল, তা কোন দেশপ্রেমিক দল বা গোষ্ঠি করতে পারেনা।  তাদের আন্দোলনের পরবর্তী  যে চিত্র ভেসে উঠে তা যেন মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দৃশ্য। এগুলো যুদ্ধ আক্রান্ত  ইরাক, সিরিয়া, মিশরের কোন দৃশ্য নয়,  এগুলো হেফাজত ইসলাম এর সর্দার শফি হুজুরের বাহিনীর কান্ড, তাদের বাহীনি এতটা আক্রমনাত্বক ছিল যে কোন কোন দলের সেখানে যাবার সুযোগ ছিল না। কোরান পুড়ানো,  ব্যাংকে আগুন,  রাস্তার পুরোনো বড় গাছ গুলো কাটা তারা সভা চলাকালীন সময়ে শুরু করছে।  কই এই জগন্য অপরাধ গুলোর জন্য তো হেফাজত ও তাদের সমর্থকেরা কোন প্রতিবাদ করলো না। এই অপরাধের দায় কোনমতে তারা এড়াতে পারে না।   মতিঝিলের শাপলা চক্তরের আশেপাশে বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ব্যাংক গুলোর অবস্থান, সরকার যদি দ্রত পদক্ষেপ নিয়ে হেফাজত কর্মীদের না সরাতো তা হলে এতদিনে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ আক্রান্ত দেশ গুলোর মতো হতো। আর মৃত্যু,  যে দেশে মেজবানে, জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে ভিড়ে চাপা পড়ে লাশের মিছিল হয়। সেখানে কয়েক লাখ মানুষের ভিড়ে কয়েকজন মানুষের মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক।   আমার জানামতে হেফাজতের ১৩ দফা বাংলাদেশের জন্য একটি বিপদ সংকেত,  এখানে কয়েকটি  দাবি দেশের স্বাধীনতা ও সারভোমত্বের প্রতি হুমকি একটি উন্নত আধুনিক দেশের জন্য অন্তরায়। দাবি গুলো যেমন   ১৩ দফা দাবী হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের দাবি সমূহ হল:

১ সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।   ২ আল্লাহ্, রাসুল ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।   ৩ শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক এবং রাসুল এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।   ৪ ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।   ৫ ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।   ৬ সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।   ৭ মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।   ৮ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।   ৯ রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।   ১০ পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।   ১১ রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার  ছাত্র রাসুলপ্রেমিক জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।   ১২ সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।   ১৩ অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও রাসুলপ্রেমিক জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান।

পরিশেষে, বলা যায়, বাংলাদেশে ধর্মের নামে মাজার গুলোতে যেমন ব্যাবসা, ধান্ধাবাজী হয়, তেমনি, ধর্মীয় রাজনীতিক দল গুলোও ব্যাবসা করে তারা মানুষের অনুভূতিকে পূজি করে ধর্মীয় ব্যাবসা করে,  আজ শফি,  বাবু নগরীরা কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়, আর তাদের মাদ্রাসার এতিম, নিরিহ দরিদ্র ছাত্ররা দরিদ্র থেকে যায়। আর আমরা ধাঁধাঁয় পড়ে বলি,  সরকার শফিদের ব্যাবহার করে নাকি শফিরা সরকারকে ব্যাবহার করে। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে সাধারন ধর্মপ্রান ব্যাক্তিরা তাদের কথায় বিব্রান্ত হয়। ধর্মীয় উগ্রবাধীদের জন্য অনেক প্রতিষ্ঠিত দেশ আজ ধ্বংশের প্রায় শেষে।   বাংলাদেশে আলেম ওলামাদের খুব সর্ম্মানের চোখে দেখা হয়,  তাদের কথা সাধারন মানুষ বিশ্বাস করে, সমাজকে তারা সহজে প্রভাবিত করতে পারে।  তাই ধর্মীয় ব্যাক্তিদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। শান্তি ধর্মের দাবীকারীরা এই অশান্তির দায় কোনভাবে এড়াতে পারে না।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*