প্রাণের ৭১

১২০ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ভারতে গ্রেফতার এক ভণ্ড তান্ত্রিক!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে তান্ত্রিক সাধনায় সিদ্ধহস্ত বিল্লু বাবা ওরফে বাবা অমরপুরির বিরুদ্ধে শতাধিক নারী ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ফতেহাবাদ জেলার তোহানার আশ্রম থেকে গত শুক্রবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় হয়েছে। ধর্ষণের শিকার নারীর এক আত্মীয়ের অভিযোগের পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী পুলিশের হাতে ধর্ষণের পাঁচটি ভিডিও ফুটেজ তুলেও দিয়েছেন।

ফতেহাবাদ জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার যোগিন্দ শর্মা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ বাবা অমরপুরিকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের সময় আশ্রম থেকে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর জিনিস জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই স্বঘোষিত বাবার বিরুদ্ধে ১২০ জন নারীকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। বাবার ডেরা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২০ জন নারীকে ধর্ষণ করার ভিডিও ফুটেজ। অভিযোগ রয়েছে, বাবা নিজেই ধর্ষণের ছবি তুলে রাখতেন।

গত শুক্রবার অমরপুরিকে গ্রেপ্তারের পর তোলা হয় তোহানা আদালতে। বিচারক তাঁকে পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে সিল করেছে অমরপুরির ব্যবহৃত ঘর। এদিকে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর ধর্ষণের শিকার আরও দুই নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছেন। যদিও অমরপুরির দাবি, তিনি পুলিশকে ‘প্রোটেকশন মানি’ দিতে সম্মত না হওয়ায় পুলিশ তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব ঘটনায় জড়াচ্ছে।

এর আগে শিষ্যা ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন হরিয়ানা রাজ্যের কথিত সাধু ও ডেরা সাচা সৌদার প্রধান গুরুমিত রাম রহিম সিং ইনসান। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে কারাবন্দী রয়েছেন রাম রহিম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁরই আশ্রমের দুই সাধ্বীকে ধর্ষণ করেছেন।

এই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর উত্তর প্রদেশের বস্তি জেলার সন্তু কুটির আশ্রমে স্বঘোষিত আরেক ধর্মগুরু স্বামী সচ্চিদানন্দের সন্ধান মেলে। তাঁর বিরুদ্ধে ওই আশ্রমেরই চার সাধ্বী অভিযোগ তুলে জানান, ওই আশ্রমের স্বামীজি এবং তাঁর সঙ্গী সাধুরা আশ্রমের সাধ্বীদের যৌন নির্যাতন করতেন, ধর্ষণ করতেন। এমনকি গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন বহু সাধ্বী।

গত জুন মাসে গ্রেপ্তার হন আরেক ধর্মগুরু দাতী মহারাজ। এই ধর্মগুরুর আশ্রম রয়েছে দক্ষিণ দিল্লির ফতেপুর এলাকায়। আশ্রমের নাম ‘শ্রী শান্তি ক্ষেত্র’। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে এই আশ্রমের ২৫ বছরের এক শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘদিন বিষয়টি চাপা থাকলেও গত জুন মাসে ওই নারী দাতী মহারাজের বিরুদ্ধে স্থানীয় ফতেপুর বেরি থানায় একটি ধর্ষণের মামলা করেন। ধর্ষণের শিকার শিষ্যা বলেন, ধর্মগুরু ও তাঁর দুই সঙ্গী তাঁকে ধর্ষণ করেছেন।

এই মামলা দায়েরের পর ওই ধর্মগুরু আত্মগোপন করেছেন। এক শিষ্যা বলেছেন, দাতী মহারাজেরই এক শিষ্যা তাঁকে জোর করে ঢুকিয়ে দিতেন মহারাজের কক্ষে। তাঁর অভিযোগ, অন্যদেরও ওই মহারাজ শ্লীলতাহানি করতেন।

এই ঘটনার মাঝেই নতুন করে আরেক স্বঘোষিত ‘গডম্যান’ বা বাবার সন্ধান মেলে দিল্লি রোহিণী এলাকার একটি আশ্রম ও আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই আশ্রমের প্রধান আরেক স্বঘোষিত বাবা বীরেন্দ্র দেব দীক্ষিত। তিনিও তাঁর আশ্রমের কিশোরীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাতেন। ওই মেয়েদের অভিভাবকেরা দিল্লি হাইকোর্টে একটি আবেদন জানান। দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে ওই আশ্রম থেকে উদ্ধার করা হয় ৪০ কিশোরীকে। তাদের বিভিন্ন হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ-ই শেষ নয়, সম্প্রতি ভারতের ভণ্ড বাবাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ। এটি দেশের আখড়াগুলোর একটি বড় সংগঠন। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এই আখড়া পরিষদ প্রথম প্রকাশ করেছিল ভণ্ড বাবাদের প্রথম তালিকা। তখন ওই তালিকায় ছিল ১৫ জন ভণ্ড বাবার নাম। এরপর সেই তালিকায় আরও তিন ভণ্ড বাবার নাম যুক্ত হয়। এবার অমরপুরিকে নিয়ে সেই তালিকা দাঁড়াল ১৯ জনে। এই ১৯ জন হলেন গুরুমিত রাম রহিম সিং, আশারাম বাপু, রাধে মা, সচ্চিদানন্দ গিরি, স্বামী ওম, নির্মল বাবা, ইচ্ছাধারী বাবা, স্বামী অসীমানন্দ, নারায়ণ সাঁই, রামপাল, আচার্য কুশমুনি, ব্রাহাস্পতি গিরি, ওম নম শিবায় বাবা, মালখান সিং, বীরেন্দ্র দীক্ষিত, সচ্চিদানন্দ সরস্বতী, ত্রিকাল ভগবান, দাতী মহারাজ ও অমরপুরি।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*