প্রাণের ৭১

A গ্রেড পেয়েছেন নুসরাত !

নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার পর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হুমকি-ধমকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছিলেন নুসরাত। এরপরই তাকে হত্যা করা হয়।

 

ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায়, প্রথম পরীক্ষা কোরআন মাজিদ (২০১) এবং হাদিস ও উসুলে হাদিস (২০২) পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। বাকি পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারেননি নুসরাত। এ কারণে সব মিলিয়ে ‘অকৃতকার্য’ ফল আসে নুসরাতের।

 

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করেছেন। নুসরাতসহ ফেল করেছেন ২৭ জন। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬.৮৬ শতাংশ।

 

মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. হোসাইন বলেন, ‘নুসরাত পুরো পরীক্ষা দিতে পারলে ভালো ফল করতো। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়!’

 

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বুধবার পরীক্ষার ফল জানতে মাদ্রাসায় আসা শিক্ষার্থীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদের চোখেও দেখা যায় অশ্রু। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

 

এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের স্বজনদের। নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের বিলাপ যেন থামতেই চায় না। শিরিনা আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।’

 

তার ভাই মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে নুসরাতের পরীক্ষার ফল বের করেন। বাড়িতে গিয়ে বোনের পরীক্ষার ফলের কথা জানান মাকে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নোমানও। বলেন, ‘আমার বোন যদি ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারতো তাহলে ভালো ফলাফল অর্জন করতো।’

 

উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।



(পরবর্তি সংবাদ) »



মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*