প্রাণের ৭১

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য দক্ষিণ কোরিয়ার স্যাটেলাইটে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বিদ্যমান আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরো নির্ভুল করতে সর্বাধুনিক আবহাওয়া পূর্বাভাস স্যাটেলাইটে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার আধুনিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট ‘জিও কম্পস্যাট ২এ’তে যুক্ত হয়ে তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

 

এই স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় নিম্নচাপের পূর্বাভাসসংক্রান্ত আগাম তথ্য ও জলোচ্ছ্বাসের সঠিক তথ্য প্রাপ্তির জন্য উপকূলীয় এলাকায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০টি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এসব স্টেশন স্থাপন করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে শুরু হবে এসব স্বয়ংক্রিয় স্টেশনের কার্যক্রম।

স্বয়ংক্রিয় এসব আবহাওয়া স্টেশনের মাধ্যমে সাগরের পানির তাপমাত্রা, বাতাসের গতি, বাতাসের চাপ এবং বৃষ্টিসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। এর ফলে বিভিন্ন সময় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এবং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ও সময় আগেভাগেই নিরূপণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।

 

আধুনিক ব্যবস্থায় আবহাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিরূপণ এবং পূর্বাভাস প্রদান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কয়েক দফা সফর বিনিময়ের পর বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কাজের অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও কভিড-১৯-এর কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। চলতি বছরের জুন থেকে কোরিয়ান স্যাটেলাইটের তথ্য-উপাত্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সাময়িক পিছিয়ে যায়।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে শুরু করে নিম্নচাপ লঘুচাপের তথ্য-উপাত্ত পেতে জাপান ও চীনের আবহাওয়া স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ান আধুনিক আবহাওয়া স্যাটেলাইট ‘জিও কম্পস্যাট ২এ’-এর সঙ্গে যুক্ত হলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরো নির্ভুল আবহাওয়া বার্তা দিতে পারবে বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর। দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোরিয়ান স্যাটেলাইটের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলেও আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্তের জন্য আগের তথ্য প্রাপ্তির কেন্দ্র জাপান ও চীনের উৎসগুলোর সংযুক্তিও অব্যাহত থাকবে। এতে করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানে তিনটি কেন্দ্রের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বার্তাকে আরো নির্ভুলভাবে দেওয়া যাবে।

বর্তমানে দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের জন্য জাপানের আবহাওয়া স্যাটেলাইট হিমাওয়ারি ও চীনের ফেংইয়াং-২-এর তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করছে দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়ার পূর্বাভাস  তৈরিতে প্রাধান্য দেওয়া হয় এসব স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য ও ছবি বিশেষ সফটওয়্যারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে। এ ছাড়া দেশের ৪০টি আবহাওয়া স্টেশনের তথ্যও ব্যবহার করা হয় পূর্বাভাস তৈরিতে।

 

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ‘জিও কম্পস্যাট ২এ’-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কয়েক দফা সফর বিনিময় সম্পন্ন হয়। কভিড-১৯-এর কারণে কাজের অগ্রগতি অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়। এখন আবার শুরু হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারব।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*