প্রাণের ৭১

২১ আগস্ট দেখেছি মৃত্যুর আগে মানুষ কিভাবে হাহাকার করে-সাবিনা আক্তার তুহিন

মোহাম্মদ হাসানঃ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার দিন খুব কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যুর আগে মানুষ কিভাবে হাহাকার করে। দেশের জনগণ এমন নারকীয় গ্রেনেড হামলা এবং পরিকল্পিতভাবে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যার দায়ে বিচার কার্যকর দেখে কলংকমুক্ত হতে চায়। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন সাবিনা আক্তার তুহিন।

২২ আগস্ট শনিবার বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা মনে পরলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ওইদিন আমি মিরপুর থেকে ব্যানার নিয়ে যাওয়ায় কিছুটা দেরি হয়ে যায়। অপু দিদি আমাকে বললেন, তোমার জন্য আজ আমরা মঞ্চের সামনে থাকতে পারলাম না। ওইদিন আইভি আপাকে খুব সুন্দর লাগছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, মাত্র তিন মাসের বাচ্চাকে রেখে তুমি কেন আসছো? তখন আমার সিজার হয়েছিল। একই সময় জিল্লুর রহমান ভাইও আমাকে বলেছিলেন, তুই কেন আসছিস। তারা আমাকে শাসন করেছিলেন। আইভি আপা বলেছিলেন, মিছিল শুরু করেই তুই চলে যাবি। তখন আমাদের ভাবনায়ও ছিল না এমন কোনো গ্রেনেড হামলা হবে।

গ্রেনেড কি জিনিস সেটা আমরা জানিও না। আমাদের নেত্রী মাত্র বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে আসছিলেন। তখন ফটো সাংবাদিক গোর্কী ভাই আপাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ছবি তোলা হয়নি। তিনি আবার মঞ্চে ফিরে গেলেন। এরপরই সেখানে মুর্হুমুহু গ্রেনেড হামলা করা হলো।

সে কি ভয়াবহ দৃশ্য। শুধু রক্ত আর রক্ত। আমার গায়ে স্লিন্টার আঘাত করেনি। কিন্তু আশেপাশের অনেকের গায়ের রক্ত আমার গায়েও এসে লাগছিল। আইভি আপাকে দেখলাম মাটিয়ে লুটিয়ে পরেছেন। তিনি রক্তে লাল হয়ে পরে আছেন। ছোট বেলা থেকেই আইভি আপা আমাকে স্নেহ করতেন। তখন আমরা নেত্রী নেত্রী বলে চিৎকার করছিলাম। তার কিছু হয়েছে কিনা। তারপর আমরা যখন ট্রাকের দিকে তাকালাম, তখন দেখলাম মানববর্ম তৈরি করে নেত্রীকে বাঁচানো হয়েছে। তখন খুব কাছ থেকে দেখেছি, মৃত্যুর আগে মানুষ কিভাবে হাহাকার করে। এরপর পুলিশ এসে টিয়ারগ্যাস ছেড়ে পুরো এলাকাকে ধোয়ায় আচ্ছন্ন করে দেয়া হলো যেন খুনিরা পালিয়ে যেতে পেরেছিল। এ থেকে প্রমাণ হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হামলা করা হয়েছিল। এমনকি হাসপাতালগুলোতেও আমাদের আহতদের নিতে দেয়নি। হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসা দেয়া হয়নি। বিএনপি-জামায়াত একটা অমানবিক দল। আমার ২১ দিনের বাচ্চাকে ছুঁড়ে দিয়ে যেদিন গ্রেপ্তার করা হলো, তখনই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল। আমাদের বাচ্চাদের কান্নাও খালেদা নিজামীর সরকারের কানে পৌঁছায় নি। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সব কিছুই জানতেন। এ হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী তিনি। এরপর জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছিল খালেদা ও তারেক রহমান।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*