প্রাণের ৭১

আমাদের শিশুরা কি হিরু আলম হয়ে যাবে?

হিরো আলম সাহেব ভাগ্যবান মানুষ। এ যাবত তাঁর অভিনীত কোন গানের কিংবা নাচেন দৃশ্য দেখিনি।আসলে ব্যস্ততার কারনে কোনো নাটক,সিনেমা এমন কি ঠিকমতো নিজের আত্নীয়স্বজন পরিবার পরিজনদের সাথে ও যোগাযোগ হয়না।হিরো আলম কে নিয়ে এখন বিভিন্ন পত্রিকায়, অনলাইনে,টিভি চ্যানেলে যেভাবে সংবাদ প্রকাশে একাট্টা হয়েছে,আলম আসলেই ভাগ্যবান বটে।
আমাদের দেশের বড়ো মাপের কবি,সাহিত্যিক,বুদ্ধিজীবি,প্রথিতযশা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ডাক্তার,স্হপতি,শিক্ষকদের কোনো একটা বিশেষ দিনে কিছুটা ঢিলেঢালা মতে একপ্রকার দায়বদ্ধতায় সন্মান জানায়।টুক টাক কিছু বলে টলে চা নাস্তা খেয়ে, কিংবা বিরানী,খিচুড়ির ঢেঁগুড় তুলে চলে আসে।আবার আগামী সময়ের প্রহর গোনে।
কিন্তু হিরো আলম এতোটাই ভাগ্যবান যে,প্রতিদিনই তাঁকে নিয়ে মাতামাতি সাক্ষাতকার, এরি মধ্যে হিরো আলমের ভাস্কর্য ও কমপ্লিট।তাঁর মোমের মূর্তি ও একদিন লন্ডনের জাদুঘরে স্হান পাবে।
আমাদের পবিত্র সংবিধান,আইন পাশের বিষয়ে হিরোকে কেউ প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান স্বাভাবিকভাবে।কিন্তু ইচ্ছে করলেই কিছু কিছু মুকস্হ করা আর্টিকেল বলতে পারতেন।পারতেন এ কারনেই যে,মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই।হিরো আলম জানেন,বোঝেন,পারেন এ জাতীয় কিছু টুক টাক মিথ্যা প্রতারনার আশ্রয় নিতে পারতেন।না হিরো আলম তা কিন্তুু করেন নি।তিনি স্ব-মহিমায় থেকেছেন।আগের যে ডিশ আলম সে ভাবেই আছেন।
এখন আসি,প্রখর মেধাবীদের কথায়—
জাপানে শিক্ষকতা পেশাকে মর্যাদায় শতভাগ উচ্চ শিখরে রাখা হয়।অন্যান্য দেশে ও তা কোন অংশে মর্যাদায় কমতি নেই।বাংলাদেশে ও জাতির বিবেক মহান শিক্ষকতা পেশাকে সবাই সন্মানের চোখে দেখি।এ মহান পেশায় কিন্তু একজন ও হিরো আলম নেই।আমরা সবাই এঁনাদের নিকট হতে হাতেখড়ি নিয়েই শিক্ষাজীবনের শুরু।এঁনাদের নিকট হতে শেখা,গুরুজনে কর নতি,ক্ষমা মহত্বের লক্ষন,সর্বদা স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখিবে,মানীর অপমান বজ্রাঘাত তুল্য,অহংকার পতনের মুল,পিতা মাতাকে সর্বদা সন্মান করিও।আমাদের নীতিবোধ,আদর্শ,বিবেক ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এক কথায় শিক্ষা গুরুদের নিকট হতে পেয়েছি।
এক কথায়,মাতা, পিতার পরেই শিক্ষকদের মর্যাদা ও স্হান।
আমরা এঁনাদের কাছে কতোই না নিরাপদ!!আজ মিডিয়া ও পত্রিকান্তরে দেখতে পেলাম,মোবাইলে নকল করার দায়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর সামনে তার বাবাকে অপমান করায় ও টিসি দেবার সিদ্ধান্তে কোমলমতি মেয়েটি কস্টের সীমাহীন অব্যক্ত যন্ত্রণা সইতে না পেরে,চলে গেলেন পরপারে—–
না অরিত্রী আর ফিরবেনা, কাঁদবেনা, শিক্ষকদের পায়ে ধরবেনা,বাবাকে আর কোনোদিন অপমানিত হতে দেবেনা। সহপাঠীদের সাথে দুষ্টুমি করবেনা,ফুসকা খাবার আবদার করবেনা।
অরিত্রীর স্হলে যদি,স্কুলের শিক্ষকদের কোনো সোনামনি হতো, টিচার কি করতেন????পারতেন তাকে টিসি দিতে?আপনার আপন সন্তানই যদি হতো তাহলে কি পারতেন এতোটা নির্দয় হতে?আপনি কি পারতেন তাকে টিসি দিতে?না লজিক বলে কোনোদিনই পারতেন না?অপমানের কথা বাদই দিলাম।
আপনারা সুশিক্ষিত বটে।স্ব-শিক্ষিত হওয়াটা বাঞ্চনীয় নয় কি?আপনারা আমাদের মানবীয়তা শেখান,নীতিবাক্য আওড়ান,নীতিবাক্য আদর্শ কথায় প্রশ্ন করেন,লেখান, সিংহ ও বকের নীতিবাক্য শেখান,হারান ও পরান মাষ্টার দের নীতিবাক্য নিয়ে বাক্য রচনা শেখান।একে বারে নতুন আংগিকে বিবেক জাগ্রতকারী প্রশ্নবানে বিতর্ক প্রতিযোগীতায় নম্বর দেন??আরো কতো কি?আপনাদের নতুন নতুন লেসনে ছাত্র ছাত্রীদের ভয়ার্ত চাহনিতে নিজেদের কথিত কৃতিত্বের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন?অভিভাবকদের সাথে চাকর বাকরের মতো ব্যবহার করেন?বেচারা অভিভাবকেরা সন্তানদের আপনাদের একরোখা ব্যবহারের পরে ও সন্তানদের পড়াশোনার চিন্তা করে হাসিমুখে বলেন,স্যার আমার সন্তানকে একটু দেখবেন,শিক্ষকদের পরম শ্রদ্ধায় বৈষ্ণব বিনয়ের সাথে তুষ্ট করেন!!পাছে শিক্ষক মশাই যদি গোস্বা করে কিছু করেন????(নামি দামি স্কুল কলেজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)
জানি আপনাদের যথাযথ শাস্তি হলে ও অরিত্রি আর ফিরবেনা,তার অতৃপ্ত আত্মার বিলাপের কান্নাগুলো কেউ শোনবেনা।কিন্তুু শোনতে পাবে,অরিত্রীর বাবা,মা।কারন তাকে কতো স্নেহের পরশে কতো স্বপ্নের সমান উচ্চতা ঘিরে রচনা করেছিলো সাফল্যের স্বপ্নগাঁথা।
আজ বাংলাদেশের নামি দামি স্কুল গুলোর কথিত স্কুল কমিটির মনগড়া সিদ্ধান্ত,কমার্শিয়াল চিন্তা,চা পানের আসর,শিক্ষকদের পাঠদান,তাঁদের অমার্জিত ব্যবহার, অপেশাদারিত্ব আচরন,শিশুদের ছাত্র ছাত্রীদের প্রতি নিষ্ঠুর, কর্কশ ভয়ার্ত আচরনের পাঠদান পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে,দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্হাকে।
আজ টিভি স্ক্রলে যখন কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরা অরিত্রীদের বাবা মায়ের বিলাপ শোনতে পায়,তারা কি স্বাভাবিকভাবে পাঠগ্রহণ করতে পারবে?তারা কি শিক্ষকদের ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ নীতিবাক্যে বিশ্বাসী হবে??
জানিনা তারা কিভাবে নীতিবাক্য বিশ্বাস করবে?কারন বাংলাদেশে বর্তমান শিশু আইনে মারাত্মক ফৌজদারী ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ও শিশুদের শাস্তির বদলে সংশোধন,তাৎক্ষনিক জামিনের ব্যবস্হা,আসামীর পরিবর্তে দোষী/প্রতিপক্ষ লিখতে হয়।বকা ঝকা তো দুরের কথা?সেখানে কথিত নকলের জন্য???? সবার জানা।

আজ হিরো আলমদের কথাই সত্যি হলো।হিরো আলমের অহংকার নেই,সত্যি কথা বলে।চরম দারিদ্রতার কারনে মিথ্যের নীতিবাক্য বিশ্বাস করতে হয়নি।ভন্ডামি,মিথ্যের ফুলঝুড়ি উপহার দেননি,কাউকে উপহাস করেন নি,কাউকে খুন কিংবা প্রতারনা করেন নি,তার কথার অপমানের ভীমরুমের বিষে কেউ আত্নহত্যা করেন নি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মরা শিক্ষাব্যবস্হা, কথিত চা মার্কাকমিটি,তথা শিক্ষকদের নীতিবিরুদ্ধতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে যদি একদিন সত্যিই পড়াশোনায় মনোযোগী না হয়ে একজন হিরো আলম হতে চায় কিনা, তা চিন্তার বিষয়?

লেখক:–রাজীব কুমার দাশ,ইন্সসপেক্টর,বাংলাদেশ পুলিশ।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*