প্রাণের ৭১

একাত্তরের গণহত্যার জরিপ ১০ জেলায়ই গণহত্যার ঘটনা ১৭৫২টি

ধারণা করা হতো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সারা দেশে (তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে) ৯০৫টি গণহত্যা চালিয়েছিল। তবে সর্বশেষ একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের মাত্র ১০ জেলাতেই ১৭৫২টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই সব জেলায় ১৫১টি গণকবর, ২০৪টি বধ্যভূমি ও ৩৪২টি নির্যাতনকেন্দ্রের সন্ধান মিলেছে।

একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাকেন্দ্রের নতুন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সকালে বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

জেলাগুলো হচ্ছে—নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, ভোলা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, খুলনা, পাবনা ও কুড়িগ্রাম।

সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ‘গণহত্যার নতুন হিসাব’ প্রবন্ধে ১০টি জেলার নতুন জরিপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলায় এই জরিপ করা হয়েছে। পরে দেশের প্রতিটি জেলায় এই জরিপ চালানো হবে।

জরিপে দেখানো হয়, কেবল খুলনায়ই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ১১৫৫টি, বধ্যভূমি পাওয়া গেছে ২৭টি, গণকবরের সন্ধান মিলেছে সাতটি এবং নির্যাতনকেন্দ্র ছিল ৩২টি। আর নীলফামারীতে গণহত্যার সংখ্যা ১১টি, বধ্যভূমি ১৭টি, গণকবর ২০টি এবং নির্যাতনকেন্দ্র ছিল ২০টি। বগুড়ায় গণহত্যার সংখ্যা ৪৫, বধ্যভূমি ৩৩, গণকবর ২০ ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল ৪১টি। নাটোরে গণহত্যা ৬০, বধ্যভূমি ১৮, গণকবর ২২ ও নির্যাতনকেন্দ্র ২৩। কুড়িগ্রামে গণহত্যা ১৫, বধ্যভূমি ১৫, গণকবর ১২ এবং নির্যাতনকেন্দ্র ছিল ৪২টি। পাবনায় গণহত্যা ৭৫, বধ্যভূমি ২৬, গণকবর ১২, নির্যাতনকেন্দ্র ছিল

১৩টি। রাজশাহীতে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল ১২৭টি, বধ্যভূমি ছিল ৯টি, গণকবর ২৬ ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল শতাধিক। সাতক্ষীরায় গণহত্যা ১৫, বধ্যভূমি ১১, গণকবর আট ও নির্যাতনকেন্দ্র ছিল সাতটি। নারায়ণগঞ্জে গণহত্যা ২০৯, বধ্যভূমি ২৩, গণকবর ১০ ও নির্যাতনকেন্দ্র ৪৬। ভোলায় গণহত্যা ৩৭, বধ্যভূমি পাঁচ, গণকবর ১৭ এবং নির্যাতনকেন্দ্র ১৫টি।

গণহত্যার সর্বশেষ এই জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি কিভাবে রাজনীতি করে? এটা তারা করতে পারে না। দুনিয়ার কোনো দেশেই স্বাধীনতায় বিশ্বাস নেই—এমন রাজনৈতিক দল রাজনীতি করতে পারে না। তবে সব কিছুই সরকারের ওপর নির্ভর করে না, এখানে জনগণের দায়িত্ব আছে, পরাজিত শক্তিকে ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যাতে স্বাধীনতায় বিশ্বাসহীনরা ভোটে জিতে সংসদে না আসতে পারে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে জানা-অজানা অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের গণহত্যার ভয়াবহতা বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। জানাতে হবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে।’

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আজও আমরা গণহত্যার স্বীকৃতি পাইনি। যদিও ইতিমধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়ার প্রায় কাছে চলে এসেছে। আমাদের গণহত্যার তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে।’

অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, শিল্পী হাশেম খান ও কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*