প্রাণের ৭১

মুক্তচিন্তা

এমাসেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন -মোহাম্মদ হাসান

খুব দ্রুত সময় বা চলতি মাসের মধ্যেই বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন। এমন গুঞ্জন সর্বত্র। জাতীয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলও এ বিষয়ে এডভোকেসি করে চলছেন।

গত ২৯ অক্টোবর ১৯১৮ সালে বাংলাদেশের আদালত জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম জিয়াকে ৭ বছর জেল দিয়েছে এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। সেই থেকে তিনি কারাভোগ করছেন।

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে বেগম জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। এর আগেও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জামিনের আবেদন করেছেন। কিন্তু তার জামিন হয়নি। এবার জামিনের জন্য বিশেষ যুক্তি তুলে ধরেছেন তার আইনজীবীরা। আবেদনে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। এমন অবস্থায় বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কোন বিকল্প নেই। তাই যুক্তরাজ্যে নিয়ে তাঁকে চিকিৎসা করানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে জামিন আবেদনে।

দুদকের আইনজীবী বলেন, জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে আদালতে আইনি যুক্তি তুলে ধরবেন তিনি। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। একই বছরের অক্টোবরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বেগম জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।

যতটুকু জেনেছি একাধিক আইন বিশেষজ্ঞগণের মন্তব্য থেকে তাতে আদালতের মাধ্যমে বেগম জিয়ার মুক্তির কোন সম্ভবনাই নেই।

তবে দুটি পথ খোলা রয়েছে, এক প্যারোলের আবেদনের মাধ্যমে দুই সাজা মওকুফ চেয়ে মহামান্য রাষ্টপতি বরাবরে আবেদন করে।

কিন্তু প্যারোল কি, কিভাবে প্যারলো মুক্তি দেয়া হয় এটা নিয়ে মানুষের ধারণা খুব একটা নেই বললেই চলে।
প্যারোল হচ্ছে নির্বাহী আদেশে মুক্তি।

প্যারোলের বিধানমতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৬ সালের ১ জুন প্রণীত নীতিমালায় বলা হয়েছে:

১. ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই বোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।
২. ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোন আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন।
৩. বন্দীকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে।
৪. মুক্তির সময়সীমা কোন অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।
৫. কোন বন্দী জেলার কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারীকর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দুরুত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর এর ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন।
৬. কারাগারের ফটক থেকে পুলিশ প্যারোলে মুক্ত বন্দিকে বুঝে নেবার পর অনুমোদিত সময়সীমার মধ্যেই পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করবেন।
৭. আর সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় (অন্তবর্তীকালীন জামিন) প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি নিহিত রয়েছে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মত দিয়ে থাকেন।

ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানাযায়,
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন? খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ ক্ষেত্রে প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। খালেদা জিয়ারও প্যারোলের বিষয়ে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

প্যারোল নিয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হলেও নেত্রীকে মুক্ত করতে সব রকম চেষ্টা করছে তার দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে প্যারোলের আবেদনের বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না বললেও পরে জানান– মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে ইতিবাচকভাবে ভাববার আহ্বান জানান।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, সম্প্রতি সম্পাদক.কমে প্রকাশিত রাজনৈতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নতুন তত্ত্ব বিএনপিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বেগম খালদা জিয়ার জিয়ার মুক্তি নিয়ে চলমান অগ্রগতিতে বাধা দিয়ে তারেক জিয়া নতুন বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘অসুস্থ খালেদার চেয়ে মৃত খালেদা অনেক মূল্যবান’। খালেদা জিয়ার জন্য তিনি প্যারোল আবেদন না করার জন্য যেমন নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি আইনি লড়াইয়েও ধীর গতিতে যাওয়ার কথা বলেছেন।

এদিকে সংবাদ মাধ্যমে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রবিবারই (২৩ ফেব্রুয়ারি) মুক্তি পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন ও সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে রবিবারই নেত্রী মুক্তি পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিচার বিভাগ কি পরাধীনতার যাঁতাকলে পিষ্ঠ নিশ্চয়ই ‘না’ কারন গত দশকে তেমন কোন নজির কেউ উপস্থাপন করতে পারেন নি।

এখানে বিচার বিভাগ শতভাগ স্বাধীন ও সঠিক বলেই আইনি পক্রিয়ায় আদালত হতে বেগম জিয়ার মুক্তির সুযোগ রুদ্ধ।

বাইরে যতই একে অন্যকে আক্রমণ করা হোক না কেন পর্দার আড়ালে বেগম খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বা প্যারোলের একটি রোডম্যাপ মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের একটি উচ্চমহল, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার এবং দুটি প্রভাবশালী দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে সমঝোতা চলছে বলে জানা গেছে। এই সমঝোতা চূড়ান্ত যদি হয় তাহলে চলতি মাসেই বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মিডিয়ায় নিশ্চিত করেছেন।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক, কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*