প্রাণের ৭১

এসব ফোনালাপ ফাঁসের উৎস কি? আইন কি বলে?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কয়েকজনের টেলিফোন আলাপ ফাঁস হবার ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ ফোন আলাপ ফাঁস হবার ঘটনা গত রাতের। এতে শোনা যাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সঙ্গে সাংবাদিক আব্দুর রব মজুমদারের কথোপকথন।

এর আগে গত কয়েক বছরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ফোন কল, এরপর বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও শমসের মবিন চৌধুরি, সাদেক হোসেন খোকা ও মাহমুদুর রহমান মান্না, মাহি বি চৌধুরি ও মাহমুদুর রহমান মান্না, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী – এরকম বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়েছে।

এসব ফোনালাপ ফাঁসের উৎস কি? আইন কি বলে?
ফোন আলাপ ফাঁসের উৎস সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য জানা যায়না।

কিন্তু ফোনে আড়ি পাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ নিয়ে বাংলাদেশের আইনে সুস্পষ্ট কিছু আইনে উল্লেখ নেই – বলছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ।

ফোনে আড়িপাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ নিয়ে বাংলাদেশের আইনে অস্পষ্টতা আছে
ফোনে আড়িপাতা এবং ফোনালাপ প্রকাশ নিয়ে বাংলাদেশের আইনে অস্পষ্টতা আছে
“বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইনে একটি ধারা আছে যেখানে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংস্থা যদি প্রয়োজন মনে করে, তদন্তের স্বার্থে বা মামলার স্বার্থে হতে পারে, তাহলে টেলিফোন সেবা দাতা সংস্থা তাদের সব রকমের তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে” – বলেন তিনি।

“কিন্তু তারা যে কারো ফোনে আড়ি পাততে পারবে – এমন কোন সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা বা ক্ষমতা দিয়ে কোন আইনি বিধান নেই। বরং উল্টোটা আছে। যেকোন নাগরিকের ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা দিচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান।”

২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন পাস হয়, পরবর্তীতে ২০১০ সালে সেই আইনটি সংশোধন করা হয়। এ আইনে ফোনে আড়ি পাতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। তবে, গোয়েন্দা সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্ত সংস্থার মতো সরকারি সংস্থাগুলোর বাইরে যে কোন ব্যক্তির কথোপকথন আড়ি পেতে রেকর্ড করলে বা প্রচার করলে দুই বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো তদন্তের স্বার্থে বা রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কোন নাগরিকের ফোনে আড়ি পাততে চাইলে কি তাদের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়? মিঃ বড়ুয়া বলেছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জন শৃঙ্খলা এসব বিষয়ে যেকোন কর্মকর্তাকে সরকারের অনুমতি নিতে হয়, কিন্তু যেহেতু আইনে এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা নেই, সে কারণে অনেক সময়ই বিষয়গুলো নিয়ে কড়াকড়ি তেমন থাকেনা।

তবে, নির্দিষ্ট কোন নাগরিকের কর্মকাণ্ড যদি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বা হুমকি না হয়, তাহলে আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কারো ফোনে কেউ বৈধভাবে আড়ি পাততে পারবে না।

কিভাবে ফাঁস হয় ফোনালাপ?
এ পর্যন্ত যতগুলো ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, সেসবের কোন উৎস জানা যায় না। কিন্তু কিভাবে একজন নাগরিকের ফোনে আড়ি পাতা যায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক রিজভী শাহরিয়ার বলছেন, সেলফোন স্পাইং বা সেলফোন সার্ভেইলেন্স বা নজরদারির মাধ্যমে ফোন ট্র্যাক করা, কথোপকথন রেকর্ড করা এমনকি টেক্সট মেসেজও পড়া যায়।

ফোন ট্যাপিংএর জন্য বহু রকমের প্রযুক্তি আছে
ফোন ট্যাপিংএর জন্য বহু রকমের প্রযুক্তি আছে
“এটি সরকারি সংস্থা যেমন পুলিশ বা সামরিক বাহিনী বৈধভাবেই করতে পারে, সেজন্য স্টিং রে ডিভাইস নামে কিছু যন্ত্র আছে, সেগুলো ব্যবহার করা হয়। আবার ব্যক্তি পর্যায়ে সেটি করতে চাইলে সেলফোন স্পাইং সফ্টওয়্যার ইনস্টল করে দিলে, দূর থেকেও ফোন ট্র্যাক করা, কথোপকথন রেকর্ড করা এমনকি টেক্সট মেসেজ পড়া সম্ভব।”

এছাড়া বাগিং নামের আরেকটি পদ্ধতি আছে, যাতে মোবাইলে রিঙ্গিং ফিচারকে ডিজেবল করে দিয়ে মাইক্রোফোনের অ্যাকসেস নেয়া। এর ফলে ঐ মোবাইল ফোন দিয়ে যত কথা হবে, যত টেক্সট মেসেজ পাঠানো হবে, সবই অপর পক্ষের কাছে চলে আসবে।

ফোনে আড়িপাতা ঠেকানো যাবে কিভাবে?
অধ্যাপক রিজভী শাহরিয়ার বলছেন – “যদি দেখেন আপনার স্মার্টফোনটি হঠাৎই কোন কারণ ছাড়াই স্লিপিং মোড থেকে অ্যালাইভ হয়ে উঠছে, কিংবা হয়তো সিপিইউ থেকে চার্জ নিচ্ছিল, হঠাৎ দেখা গেল ফোন গরম হয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফোনটি হয়ত কস্প্রোমাইজ অর্থাৎ সেটিতে কেউ স্পাইয়িং সফ্টওয়্যার ইনস্টল করেছে। সেক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ব্যাটারি খুলে ফেলতে হবে, এবং নতুন করে রিস্টার্ট দিতে হবে।”

অধ্যাপক শাহরিয়ার বলছেন, সাবধান থাকার জন্য নিজের ফোন অন্য কারো হাতে না দেয়া এবং পাসওয়ার্ড জাতীয় তথ্য অন্য কারো সাথে শেয়ার না করাই উচিত।

এছাড়া, মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা অ্যাকসেস নিয়ন্ত্রনের জন্য এক ধরণের সুইচ পাওয়া যায় সেটি ফোনের হার্ডওয়্যারে সংযুক্ত করা যেতে পারে।

আর, কোন ফোনালাপ কোন সূত্র থেকে ফাঁস হয়েছে, সেটি অনুসন্ধান করা সম্ভব, বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্টিং রে ডিভাইস ব্যবহার করে সেটি বের করতে পারে।

তবে কেউ যদি মনে করেন ফোনালাপ ফাঁসের জন্য তার অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে সেক্ষেত্রে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*