প্রাণের ৭১

ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মিদের নামে ফৌজদারী মামলার তালিকা ইসিতে।।

রুহুল আমিন মজুমদারঃ-রাষ্ট্রদ্রোহিতা,সরকারের বিরুধীতা এক নয়। রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম–রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকারের নামে ‘আন্দোলন-সংগ্রামে’ দলবদ্ধ সন্ত্রাস পরিচালনাও এক নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিপালনকালীন ফৌজদারী মামলা এবং রাজনৈতিক কারনে হয়রানীমূলক মামলাও এক বিষয় নয়।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী যেমন বাংলাদেশের নাগরিক, রাজনীতিহীন সাধারন মানুষও বাংলাদেশের নাগরিক। আইন কারো জন্যে ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রনীত হয়না বা হয়নি। আইনের চোখে এবং বিচারের কাঠগড়ায় কে আলেম, কে জালেম, কে নাস্তিক, কে আস্তিক, কে রাজনতিবীদ কে সাধারন মানুষ বিবেচ্য নয়–বিবেচ্য তাঁর অপরাধ।
রাষ্ট্র পরিচালনায় অধিষ্ঠিত কোন একক ব্যাক্তি, সংস্থা, গোষ্টি বা রাজনৈতিক দল সরকার নয়, সরকার পরিচালনাকারী। সরকার ব্যাবস্থা যে কোন রাষ্ট্রের একটি স্থায়ী কাঠামো। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, সংস্থা, সংগঠনের মিলিতরুপ সরকার। এককথায় বলা যায়–‘রাষ্ট্রের অভ্যন্তরের সবকিছু যদি দেহ বিবেচনা করা হয়, তবে সরকার তাঁর মাথা পরিগনিত হবে।
গনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিদ্যমান সাংবিধানে উল্লেখিত রীতিনীতি, আইনবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে নাগরিকগন কোন এক রাজনৈতিক দলকে সরকার পরিচালনা করার দায়িত্ব প্রদান করে থাকে। এইরুপ নির্দিষ্ট সময়ের নির্বাচিত রাজনৈতিক শক্তিকে ‘রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনা করার “ব্রেন বা ঘিলু’ বলা যেতে পারে।
রাষ্ট্রের বিদ্যমান রীতিনীতি, আইনবিধি অনুসারে সরকার পরিচালনায় নিযুক্ত রাজনৈতিক দলের বিরুধীতা, সমালোচনা, আন্দোলন, সংগ্রাম রাষ্ট্রের বিদ্যমান সংবিধান বা শাসনতন্ত্র দ্বারা স্বিকৃত।এইরুপ বিরুধীতাকারী এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের উত্থান, বিকাশ, তৎপরতায় রাষ্ট্র বরঞ্চ উৎসাহ প্রদান করে।
যেহেতু রাষ্ট্র স্থায়ী কাঠামো এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সকল শ্রেনী, পেশা, গোষ্টি নির্বিশেষে, সকলের সমান অধিকার। সেহেতু কোন একক নাগরিক, রাজনৈতিক দল, সংস্থা কতৃক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার এককথায় নাগরিক জীবন বিপন্নকারী কর্মকান্ড স্বিকৃত নয়।
এইরুপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র তাঁর বিদ্যমান আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষতিকারক সকল প্রকার অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করে। কারন রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক আধিকার সংররক্ষন করতে রাষ্ট্র পুর্বেই অঙ্গিকারাবদ্ধ।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্তগাতমূলক অপপ্রচার, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা, শান্তি শৃংখলা ভঙ্গজনীত যে কোন দেশবিরুধী কর্মকান্ড প্রচলিত আইনে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ গন্য করা হয়।যেমন–জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অখন্ডতা বিনষ্ট করার অপরাধে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ উত্থাপন করে “রাষ্ট্র বনাম আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” দায়ের করেছিল।
সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচালিত সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুধীতা, আন্দোলন, সংগ্রাম রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধাচারন নয়।ক্ষমতাসীন দলের সরকার পরিচালনাকারী ব্যাক্তি, গোষ্টি, রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধাচারন মাত্র।
রাষ্ট্রের বিদ্যমান শাসনতন্ত্রের বিধিবদ্ধ আইনানুসারে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার পরিচালনাকারী রাজনৈতিক দল বা জোটকে হঠিয়ে অন্য যেকোন রাজনৈতিক দলের সরকার পরিচালনার অধিকার রাষ্ট্র কতৃক স্বিকৃত।
যেমন–বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারকে নিয়মাতান্ত্রিক উপায় ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে ‘প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য’ ভাবে রাজনৈতিক দল সমূহ, বিভিন্ন শ্রেনী পেশার ব্যাক্তিগন, বিভিন্ন স্থানে বৈঠক, আলোচনায় গড়ে উঠা বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট “ঐক্যফ্রন্ট”। ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে বা তাঁদের কর্মকান্ড নির্বৃত্ত করার উদ্দেশ্যে–‘রাষ্ট্র বা সরকার আইনগতভাবে কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারেনি’।
অপরদিকে সরকার পরিচালনাকারী রাজনৈতিক দল শাসনতন্ত্রে স্বিকৃত উপায় পূণঃবার সরকার পরিচালনায় বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে আসার উদ্দেশ্যে গঠিত মহাজোট গঠনের তৎপরতায়–‘সরকার বিরুধী শক্তি ঐক্যফ্রন্ট কোন প্রকার অভিযোগ উত্থাপন করতে দেখা যায়নি’।
ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতা হতে সরাতে এবং ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় ফিরে আসতে তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে। এইরুপ কর্মকান্ড রাষ্ট্র কতৃক দমন, পীড়ন বা বাঁধাদানের উদ্দেশ্যে মামলা, মোকদ্দমা বা অন্য কোনভাবে হয়রানী করার অধিকার গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় সরকার রাখেনা।
অর্থাৎ রাষ্ট্রের কোন বৈধ নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন’কে স্ব-স্ব কর্মতৎপরতা চালাতে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র নিবৃত্ত করতে পারেনা। যেহেতু রাষ্ট্রের সকল নাগরিক, সংস্থা, সংগঠনের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, সভা-সমাবেশ, মিছিল মিটিং বাঁধাহীনভাবে পরিচালনা করার মৌলিক অধিকার গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে স্বিকৃত।
রাজনৈতিক দল বা জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার যেমন রাষ্ট্র কতৃক স্বিকৃত, তেমনি কোন একটি শ্রেনীপেশার মানুষের বা সংগঠনের তাঁর নীজ কর্মকান্ড পরিচালনা করার অধিকারও রাষ্ট্র কতৃক স্বিকৃত।
যেমন–কোন এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসুচি হরতালে বাসের ড্রাইভার বা তাঁদের সংগঠন, দোকান মালিক বা তাঁদের সংগঠন, স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তাঁদের কর্ম পরিচালনা স্বেচ্ছায় অব্যাহত রাখার অধিকারী। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কর্মিগন তাঁদের উক্তরুপ কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্যে জোর জবরদস্তি বা বাঁধা প্রদান করার অধিকারী নন।
এইরুপ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের কর্মিগন বাঁধাদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত যেকোন জোর জবরদস্তি মূলক কর্মকান্ড রাষ্ট্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রনের অধিকারী। রাষ্ট্র যেমন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নির্বিগ্নে পালন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহযোগীতা প্রদানে বাধ্য, তেমনি তাঁর সকল নাগরিকের জান, মাল, চলাফেরার নিরাপত্তা বিধান করার ক্ষেত্রেও অঙ্গিকারাবদ্ধ।
রাষ্ট্রের সকল প্রকার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জনবলের অর্থ, রেক্ষনাবেক্ষনের সমূদয় ব্যায়ভার নাগরিকদের প্রদত্ত অর্থে সরকার যোগান দিয়ে থাকে। সঙ্গতকারনে জোরপূর্বক বাঁধাদানকারী সেই সমস্ত নেতাকর্মিদের উক্ত রুপ নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে সরকারের নির্দেশে রাষ্ট্রের আইনশৃংখলাবাহিনী ব্যাবস্থা গ্রহন করে থাকে। উক্ত ব্যাবস্থার আওতায় উদ্ভুত মামলা, মোকদ্দমা বিচারের ক্ষেত্রে জেল, জরিমানা কোন অবস্থায় রাজনৈতিক হয়রানী বা অন্যকোন নামে গন্য করা যায়না।
কোন এক বা একাধিক রাজনৈতিক জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সমাজের যেকোন শ্রেনী, পেশার জনগন ও সংগঠন যদি স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন করেন এবং ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রামে সম্পৃত্ত হন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সরকার–কোন পক্ষের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করার অধিকারী নন।
সরকার বিরুধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনজীবন যদি অচল হয়ে পড়ে, অর্থনীতির চাকা থেমে যায়–তাহলেও “রাষ্ট্র কোন অবস্থায় সম্পৃত্ত রাজনৈতিক দল ও সংস্থার বিরুদ্ধে কোনরুপ আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করার অধিকারী হতে পারেন না”।
এইরুপ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে কোন সংস্থা বা অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিধি বহির্ভূতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের নির্দেশে জোর পূর্বক যে কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক দলের আন্দোলন, সংগ্রাম নিস্তেজ বা দমনের উদ্দেশ্যে মামলা, মোকদ্দমা আনায়ন করেন উক্তরূপ মামলা সমূহকে রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা হিসেবে অভিহীত করা হয়। এইরুপ রাষ্ট্রযন্ত্র অপব্যাবহারকারী সরকারকে স্বৈরাচারী সরকার বা ফ্যাসিবাদী সরকার গন্য করা হয়।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মিগন বাঁধাদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত যেকোন কর্মকান্ড রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন করতে বাধ্য থাকে। রাষ্ট্র জোরপূর্বক বাঁধাদানকারী সেই সমস্ত নেতাকর্মিগনকে উক্তরুপ কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে মামলা, মোকদ্দমা, আইনগত উপায় নির্বিত্ত করার যেকোন ব্যাবস্থা গ্রহন শাসনতন্ত্র স্বিকৃত এবং তাঁদের পেশাদারীত্বের নৈতিক দায়িত্ব।
উক্তরুপ ব্যাবস্থার আওতায় উদ্ভুত পরিস্থিতি অনুযায়ী লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ব্যাবহার, মামলা, হামলা, অপমৃত্যু কোন অবস্থায় রাজনৈতিক হয়রানীমূলক বা দমনপীড়ন কর্মকান্ড বিবেচিত নয়। রাষ্ট্রের নাগরিকদের জানমাল রক্ষা, আইনশৃংখলা রক্ষা, রাষ্ট্রের উন্নতি, অগ্রগতির অঙ্গিকার প্রদান করে যেকোন রাজনৈতিক শক্তি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব করেছেন।
বর্তমান গনতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যাবস্থায় জাতিসংঘ ভুক্ত বিভিন্ন আন্তজাতিক সংস্থায় কল্যানরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার ভিত্তিক দলিলে স্বাক্ষর অনিবায্য। এমনতর অবস্থায় ফ্যাসিষ্ট সরকার ব্যাতিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন গনতান্ত্রিক দলের নির্বাচিত কোন সরকারই স্বৈরাচারী ভুমিকায় অবতিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই।তেমনি কোন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কর্মিদেরও সন্ত্রাস, গুপ্ত হামলা, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি জোর জবরদস্তিমূলক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার সুযোগ নেই।এইরূপ স্বৈরাচার সরকারের পতন যেমন অনিবায্য তেমনি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দলের বিকাশ না ঘটে বিলুপ্তি পথে ধাবিত হতে বাধ্য হয়।
ক্ষমতাসীন দল কতৃক পরিচালিত সরকারের নেতাকর্মী, মন্ত্রী এমপি গনের বিরুদ্ধে লুটপাট, অর্থ আত্বসাৎ, ক্ষমতার অপব্যাহার, ঘুষ, দুর্নীতির এবং বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আনীত মামলা ফৌজদারী অপরাধভুক্ত। এইরুপ মামলা সমূহ রাজনৈতিক, রাষ্ট্রদ্রোহ বা অন্য যে কোন নামে অভিহীত করার কোন সুযোগ নেই।
যেহেতু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মিদের জন্যে আলাদা আইন, রীতিনীতি নেই সেহেতু তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে প্রযোজ্য হয়েছিল, হয়ে আসছে, হবে। বিএনপি’র দল কতৃক ইসিতে প্রেরিত উল্লেখিত মামলা সমূহ ২০১৩–১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগ। রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা বাহিনী জনজীবন স্বাভাবিক, নাগরিকের জানমাল রক্ষার সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার নিমিত্তে তৎসময়ে রুজু করেছিল। নির্বাচন কমিশন বা অন্যকোন শাসন বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান উক্ত মামলা সমূহ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ করে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করার অধিকারী নন।

লেখক, সম্পাদক






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*