প্রাণের ৭১

চীনে রোজা নিষিদ্ধ, মদ পান শুকুর খেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

চীনের শিনজিয়ানে মুসলিমদের জন্য তৈরি ‘মতদীক্ষাদান ক্যাম্পগুলোতে’ নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে। ওই ক্যাম্পের বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সেখানকার সাবেক কয়েদীরা এসব প্রকাশ করেছেন।

 

 

অন্তত ৯ থেকে ১০ লাখ মুসলিমকে ইতিমধ্যেই বন্দী করা হয়েছে সেসব ক্যাম্পে।

তারা জানান, সেখানে চলমান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে মুসলিমদের জন্য করা এই রি-এডুকেশন ক্যাম্পগুলোতে শারাীরিক মানসিক দু ধরণের নির্যাতনের শিকারই হতে হয় কয়েদীদের।

 

ওমির বেকালি ও কেরাত সমরকান্দ নামক দু জন সাবেক কয়েদি জানান যে, শাস্তি হিসেবে বন্দিদের শূকরের মাংস ও মদ পান করানো হতো যা কিনা ইসলামি অনুশাসনে নিষিদ্ধ। এছাড়াও ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন ওমির বেকালি ও অন্যান্য বন্দিদের বাধ্য করা হতো ইসলামি বিশ্বাসকে অস্বীকার করতে। নিজেদের এবং নিজেদের পছন্দের মানুষদের সমালোচনা করতে। এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে  ধন্যবাদ জানাতে।

 

কাজাখিস্তানের অধিবাসী বেকালি যখন এই সকল আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালেন তাকে শাস্তিস্বরুপ পাঁচ ঘন্টা দেয়ালের উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো। এক সপ্তাহ পর নির্জন কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো যেখানে ২৪ ঘন্টা অনাহারে রাখা হতো। ২০ দিন ধরে উচ্চ-নিরাপত্তাবেষ্টিত ক্যাম্পে বন্দি অবস্থায় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বেকালি আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন।

 

 

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, ‘যখন আপনার নিজেকে গালাগাল করতে হয়, নিজের নৃগোষ্ঠীর এবং তার চিন্তার নিন্দা করতে হয় তখন মানসিক চাপটা হয় অসহনীয়। মুক্তি পাওয়ার পরও আমি এখনো প্রতি রাতেই সারাক্ষণ ধরে সেসব নিয়ে চিন্তা করি। ভোর না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারি না। ওই সময়ের স্মৃতি আমাকে সারাক্ষণ তাড়া করে বেড়ায়। ’

 

গত জানুয়ারি থেকে হাজার হাজার মুসলিমকে এই ধরনের ক্যাম্পে গণহারে বন্দি করে চীন প্রশাসন। যাদের মধ্যে বিদেশি নাগরিকও রয়েছে। বন্দি করার সময় কাউকেই তাদের অপরাধ সম্পর্কে  জানানো হয়না বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

 

পুরো শিনজিয়ানজুড়েই উইঘুর মুসলিমদের মধ্য থেকে এই বন্দি সংগ্রহ অভিযান চালায় চীন। এটিকে বিশ্বের বৃহৎ ‘সংখ্যালঘু কারাবাস’ বলেও উল্লেখ করেছে চীনের ইউএস কমিশন। চীনের প্রদেশটিতে চীনা হান নৃগোষ্ঠীর মানুষেরাই সংখ্যায় বেশি।

 

চীনা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই মতদীক্ষাদান ক্যাম্প বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে বলা হয় যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ‘ইসলামি চরমপন্থা’ দমনে মুসলিমদের মতাদর্শগতভাবে পরিবর্তন দরকার। এভাবেই তারা এই ‘রি-এডুকেশন’ ক্যাম্পের গুরুত্ব উল্লেখ করে যাচ্ছেন।

 

৬০ বছর আগে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা হারিয়েছে।

 

চীনের ইতিহাসবিদ জেমস মিলওয়ার্ড বলেন, ‘মুসলিমদের সাংস্কৃতিক বিনাশকেই বেইজিং ‘শিনজিয়ান সমস্যা’র চুড়ান্ত সমাধান হিসেবে খুঁজে পেয়েছে। প্রাচীন চীনা বিশ্বাসেই এই শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের আদর্শিক রুপান্তরের বিষয়টি শেকড় গেঁড়ে আছে। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর মাও সে তুংও একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রসারে। যেটাকে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব বলা হয়।

 

চীনা নৃগোষ্ঠীগুলোর বেলায় এই সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছিল নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের পাশাপাশি তার মধ্যে আপোসে কমিউনিস্ট চিন্তা-ভাবনা ও মতাদর্শকে আত্মস্থ করে নেওয়া। কিন্তু উইঘুর মুসলিমদের বেলায় হয়েছে তার উল্টো। তাদের ওপর ওই সাংস্কৃতিক বিপ্লব চাপিয়ে দেওয়ার জন্য এই বন্দিশালা বানানো হয়েছে। নিজস্ব সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের সবকিছু ভুলে যাওয়ার জন্যই তাদেরকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

 

নিউ অর্লিন্সের লোওলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন, ‘চীনের এই রি-এডুকেশন সিস্টেম পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবাধিকার লঙ্ঘন এর নজির। ’

 

সূত্র: ডেইলি মেইল






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*