প্রাণের ৭১

জিএম কাদের জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জাপা) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন দলের কো চেয়ারম্যান ও এরশাদের সহোদর গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। জাপার বিশ্বস্ত একটি সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলের অভ্যন্তরে নানা জটিলতা ও বাইরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করছেন। এ সংক্রান্ত আদেশ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এরইমধ্যে পেয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। আজ যে কোনো সময় এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, গত রোববারই জিএম কাদেরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেন এরশাদ। সোমবার সকালে তিনি লিখিত আদেশে স্বাক্ষর করেন। দলের অভ্যন্তরে সক্রিয় রওশন এরশাদ গ্রুপকে অন্ধকারে রেখেই অনেকটা তড়িঘড়ি করে এরশাদ এ কাজ সম্পন্ন করেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলের অভ্যন্তরে ফের নানা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রওশন এরশাদ গ্রুপ নানাভাবে এরশাদকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সর্বশেষ জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিক্রি নিয়ে দলের মধ্যে ঘটে গেছে বড় ধরনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। জাতীয় পার্টির এক দায়িত্বশীল শীর্ষনেতা দলের মনোনয়ন দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে ৭০ কোটি টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যখন সেসব প্রার্থী নিশ্চিত হয়েছেন তারা দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না- তখন তারা চেয়ারম্যান এরশাদের কাছে লিখিত নালিশ করেন। অভিযুক্ত ওই নেতা বিভিন্ন জন থেকে নেওয়া ৭০ কোটি টাকার হিসাব দিতে পারেননি। এ বিষয়টি নিয়ে এরশাদ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু তিনি তড়িৎ কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না।

গত শনিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে বের হয়ে জাপা নেতৃবৃন্দ জানিয়েছিল তারা বৈঠকের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন। তারা হতাশ। বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ জাপাকে ২২ আসন দেবে বলে জানিয়েছে। অথচ দলটির বর্তমান সাংসদ রয়েছেন ৩৪ জন। এরশাদ আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্তে মর্মাহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ২২ আসনে অনড় থাকলে শেষ মুহূর্তে জাপা মহাজোটের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে কি না তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারেন এরশাদ। কিন্তু দলের রওশন গ্রুপ যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায়। যা নিয়ে দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। তৈরি হয়েছে নানা সঙ্কট।

দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট এসব সমস্যা মোকাবেলায় এরশাদ এখন তার ভাই জিএম কাদের ছাড়া কারো ওপর ভরসা করতে পারছেন না। তাই সঙ্কটময় মুহূর্তে তাকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছেন বলে জানিয়েছে জাপা সূত্র। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জিএম কাদেরকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরতে পারেননি। তবে তার কাছের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, তিনি এই মুহূর্তে ব্যস্ত। নতুন দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরই তিনি প্রকাশ্যে আসবেন। কথা বলবেন।

জিএম কাদের ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের সংসদ সদস্য হয়েছেন লালমনিরহাট-৩ থেকে। তারপর ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ৩বার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে জিএম কাদের অষ্টম। পরিবারের সবার বড় ছিলেন বোন। ভাইদের মধ্যে বড় এইচ এম এরশাদ। জিএম কাদেরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় রংপুরের লিচুবাগান প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৬৩ সালে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে। এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বুয়েট)। ১৯৬৯ সালে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার বছর চারেক পর তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে ১ বছর চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন যমুনা অয়েলে।

১৯৯০ সালের শেষের দিকে এরশাদের পতনের পর জিএম কাদেরকে চাকরি থেকে ওএসডি করা হয়। এরশাদ আটকের কয়েক দিন পর তিনি বড় ভাইয়ের মুক্তির জন্য ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। এরশাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তার। একসময় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান।

১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কয়েকদিন পরেই তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ম সংসদে তিনি মহাজোট সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম ৩ বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী। এরপরের দু’বছর বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*