প্রাণের ৭১

মুক্তচিন্তা

তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে – মোহাম্মদ হাসান

আমরা প্রায়শই হতাশ হই তারুন্যের দানব রূপ দেখে- নীতিহীন রাজনীতিতে, সন্ত্রাসে, বিবেকহীন লেজুড়বৃত্তিতে, নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজিতে, মেধাহীন প্রকাশে আর দিশাহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় তারুন্যের ‘মাতৃ’ রূপ- যখন তা মানবিক সৃষ্টিশীল রশ্মি ছড়ায়- সাধারণের কল্যানে, সমাজের উন্নয়নে বা দেশ বিনির্মাণে।

মানবজীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে তারুণ্য তথা যৌবন। এ কারণে হাদিসের মধ্যে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন-কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে এসকল তরুণদের বসার সুযোগ দিবেন, যারা তরুণ বয়সের সময়কে আল্লাহর রাহে ব্যয় করে কাটিয়েছে। (তিরমিজি)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে-তরুণ বয়সের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যে সমস্ত তরুণরা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে। (ইবনে মাজাহ)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সে তার যৌবনকাল কিভাবে ব্যয় করছে। (মিশকাত)।

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের তারুণ্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে দ্বিধাহীন ভাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা দুর্গম এলাকার বিশেষ প্রয়োজন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত সরবরাহ হচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত সাড়া দিচ্ছে তরুণ সমাজ। তারা পৌছাতে পারছে স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে, যথাযথ সাহায্য নিয়ে। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটা ভাল বিকল্প হয়ে উঠছে যেখানে সাধারণ জনগনের আস্থার জায়গাটা অনেক স্থানেই বেশী শক্তিশালী।

দেশের নানা স্থানে ঘটে যাওয়া অনাচারের তথ্য উঠে আসছে যোগাযোগ মাধ্যমে – প্রচার পাচ্ছে মিডিয়াতে, ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকার পাবার পথ সুগম হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে তরুণ সমাজ।

সনাতন ধ্যান ধারনার বাহিরে- অনেক ক্ষেত্রে তারুণ্য অবদান রাখছে। বাংলাদেশের সংগীত জগত- বিশেষ করে আধুনিক সংগীত- মূলত বিশ্বের সাথে এগিয়ে চলছে কিছু তরুণের অপরিসীম প্রচেষ্টার ফলে। একই কথা প্রযোজ্য ‘ফটোগ্রাফি’ এর ক্ষেত্রে। অনেক রাষ্ট্রীয় সন্মান এসেছে এই তরুণদের হাত ধরে। দেশে অনেক মেধাবী তরুণরা চলচ্চিত্র নির্মাণে দেখিয়াছে দক্ষতা।

বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়েছে। আর এই এগিয়ে যাবার পেছনে অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে তরুণ সমাজ। তরুণদের উজ্জীবিত করার মাধ্যমে ঈর্ষণীয় এই অগ্রগতির মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন, থাকবেন। বর্তমান প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, অসাধারণ নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় দীক্ষিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। এই এগিয়ে চলায় বাংলা ও বাঙালিকে উদ্দীপিত করছে তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আর নীরবে পাথেয় হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।

তিনি যে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বারবার বলে গিয়েছিলেন, আজ আমরা সেই মুক্তি অর্জনের পথে। বঙ্গবন্ধু প্রায় বক্তব্যে বলতেন, ‘দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। একটি দেশের সমস্যা এবং সম্ভাবনা দুটিই তরুণ সমাজের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। তরুণরা বেকার থাকলে তারা বিপদগ্রস্ত হয়, দেশের জন্য ক্ষতিকর বোঝায় পরিণত হয়। আর কোনো দেশের তরুণ সমাজ যদি কর্মঠ হয় এবং কাজের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, তাহলে ওই দেশের দ্রুত উন্নতি কেউ আটকাতে পারে না। তরুণদের দীপ্ত মেধা এবং সতেজ জ্ঞানের গতি এই সবুজ-শ্যামল বাংলাকে প্রকৃত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে পারে। ’

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এই তরুণ সমাজেই হবে সব থেকে বেশি কর্ণধার। যারা এ দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে পরিচিত। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। পোশাক ও জনসংখ্যা রপ্তানিতে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে মডেল। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব উন্নয়ন সূচকের ক্রম অগ্রগতি, গড় আয়ু বৃদ্ধি বাংলাদেশকে নতুন রূপে পরিচিতি দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজ আর শুধু সঙ্গীতে নয়, বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে।

তরুণরাই হলো একটা দেশ বা জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যত্। আজকের তরুণ সমাজ হবে আগামীতে জাতির কর্ণধার। তাইতো জাতীয় কবি “যৌবনের গান” প্রবন্ধে তারুণ্যের জয়গান করেছেন। আরব সমাজ যখন জাহেলিয়ার তমসায় নিমজ্জিত ছিল তখন তরুণ সমাজের “হিলফুল ফুজুলের” মাধ্যমে আরবের মানুষ শান্তির নীড় খুঁজে পায়। আজও আমাদের তরুণ সমাজের উদ্যমতায় সোনার বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের তরুণ সমাজ আজ দিকভ্রান্ত, পথহারা পথিকের ন্যায়। তারা আজ নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে আজ মাদকদ্রব্য পৌঁছে যাচ্ছে। তরুণ সমাজ ধ্বংস হলে একটা দেশ ধ্বংস হতে বাধ্য। তরুণ সমাজের অবক্ষয় একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক অশনি সংকেত। পিতামাতা, অভিভাবক ও সরকারের প্রতি অনুরোধ—আসুন আমরা আমাদের তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় থেকে বাঁচাতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সংবাদ কর্মী, কলামিস্ট, পিএ সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*