প্রাণের ৭১

তিস্তা চুক্তি ও মোদির ঢাকা সফর অনিশ্চিত

বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য সফর—দুটি বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ আগেই বলে দিয়েছে, তিস্তা ইস্যুতে বল ভারতের কোর্টে। কিন্তু সেই তিস্তা চুক্তি সইয়ের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ওই দেশটিতে অভ্যন্তরীণ ঐক্য সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেই ঐকমত্য এখনো অর্জিত হয়নি। জোরালো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। বরং ভারত প্রয়োজনে দেরি হলেও তাদের দেশের সব পক্ষকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।

অন্যদিকে গত মাসে ভারতের একটি ইংরেজি দৈনিকে চলতি বছরের আরো পরের দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে সফরের কথা প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। ঢাকা ও দিল্লির কূটনীতিকরা বলেছেন, গত বছর এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পর ফিরতি সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসার কথা। এ সফর থেকে কী ফলাফল আসে সেদিকে দুই দেশেরই দৃষ্টি থাকবে, বিশেষ করে তিস্তার বিষয়ে অগ্রগতি দেখার প্রত্যাশায় থাকবে বাংলাদেশ।

গত বছর এপ্রিল মাসে শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, শুধু তাঁর ও শেখ হাসিনার সরকারই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে পারে। মোদির ওই বক্তব্য উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গত সপ্তাহে কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর বিবেচনায় নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় সফর শিগগিরই সম্ভব নয়। কারণ তিস্তা চুক্তি ছাড়া মোদির সফর বাংলাদেশিদের কাছে ফলপ্রসূ বা স্মরণীয় নাও হতে পারে।

ওই কূটনীতিক জানান, এ মাসে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ সরকারপ্রধান পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা যাচ্ছেন। সেই সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। তবে এর আগে আগামী ৮ এপ্রিল দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় কেশব গোখলে। ওই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি পারস্পরিক প্রত্যাশা তুলে ধরা হবে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আগামী ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঢাকায় একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

তিস্তার ভিত্তিতে সম্পর্ক মাপছে না ভারত : ঢাকা ও নয়াদিল্লিভিত্তিক কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিকে অন্য ইস্যুগুলোর মতোই দেখছে ভারত। তবে বাংলাদেশের কাছে ইস্যুটির সঙ্গে আবেগও জড়িত। বিশেষ করে বাংলাদেশ চায় আগামী নির্বাচনের আগেই এই চুক্তি সই করতে।

ভারতীয় একজন পর্যবেক্ষক বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তি ইস্যুতে এক চুলও নড়েননি। তাই মমতার সম্মতি ছাড়া মোদির পক্ষে তিস্তা চুক্তি করা অসম্ভব। মমতা এখন মোদির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই খুব শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

মোদিকে তিস্তার কৃতিত্ব দেবেন না মমতা! : বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যু নিষ্পত্তি করার কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোতেও আছে উল্লেখ করে ভারতীয় ওই পর্যবেক্ষক বলেন, মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতের ইউপিএ সরকার অনেক চেষ্টা করেও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তখন ভারতের পার্লামেন্টে মূল বাধা ছিল বিজেপি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে পার্লামেন্টে বিল উপস্থাপন করার সময় তাঁর কাছ থেকে বিলসংক্রান্ত নথি ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলেন বিরোধী একজন পার্লামেন্ট সদস্য। লোকসভার তৎকালীন বিরোধী নেতা সুষমা স্বরাজও (বর্তমানে মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছিলেন, স্থলসীমান্ত বিলের বিষয়ে বিজেপির জোরালো আপত্তি আছে। ছয় মাস পর ক্ষমতায় এসে বিজেপি সেই একই বিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস করিয়েছে।

ভারতীয় ওই পর্যবেক্ষক মনে করেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মূল কৃতিত্ব নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতে তাঁর আমলে, তাঁর নেতৃত্বে এটি হয়েছে। ভারতে বর্তমান রাজনৈতিক যে সমীকরণ, তাতে মমতা তিস্তা চুক্তি সইয়ের কৃতিত্ব মোদিকে দেবেন বলে ওই পর্যবেক্ষক মনে করেন না।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*