প্রাণের ৭১

নেতৃত্ব তৈরির আতুর ঘর ছাত্রলীগের আজ জন্মদিন: মোহাম্মদ হাসান

ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম, অর্জন, ত্যাগ, বিসর্জনে যে ছাত্র সংগঠনটি সুনাম অর্জন করে বুক চিতিয়ে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে তার নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সংগঠনটির জন্ম ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি।

যখন এ সংগঠনটির শৈশব বেলাও কাটেনি, ঠিক সেই সময়ই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষার ইস্যুতে ১০ দফা দাবি নামা পেশ করে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথ প্রকম্পিত করে আন্দোলনে জোরালো ভুমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। যার ফলাফল স্বরুপ বাংলাকে রাষ্ট ভাষা হিসেবে আর ২১শে ফেব্রুয়ারি কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

বাংলা এবং বাঙালির সাত দশকেরও বেশি সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জুড়ে আছে ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এর ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠনটি। বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় ও অর্জনে রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা।

বাঙালি জাতি হিসেবে জন্ম গ্রহণের আঁতুড় ঘর থেকে আজ অবধি স্বাধীনতা, সংগ্রাম আর শিক্ষার নিশ্চয়তায় ছাত্র সমাজের অধিকারের অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের পথচলায় ৫২ এসেছে, ৬২ এসেছে, ৬৬, ৬৯, ৭০-এর পথ ধরে এসেছে ১৯৭১। ১৯৭১’এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সংগঠনটির প্রায় সতেরো হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ যুক্ত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে।

তাই ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ মেলে সংগঠনটির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ছিলো ছাত্রলীগ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে পথ পরিক্রমা পেরিয়ে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ দেশের সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী।

আবার শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির পতাকা বাহক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে এবং সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ছাত্রলীগের অনেক সূর্য সন্তান। সুতরাং ৭৪ বছরের পদার্পন করা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শুধু বাংলাদেশের অতীত আর ইতিহাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থেমে নেই, এখনো সেই ছাত্রলীগই ভবিষ্যত বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী তৈরি করে চলছে অজস্র নেতৃত্ব তৈরির আতুর ঘর হিসেবে।

ছাত্রলীগ থেকেই আদর্শ নেতৃত্ব তৈরি হয়, তৈরি হয় অসংখ্য দেশপ্রেমিক নাগরিকের। যে দেশকে ভালোবাসে, দেশের ইতিহাসকে ধারণ করে সে অবশ্যই ছাত্রলীগকে ভালোবাসে। ছাত্রলীগ মানেই বাংলাদেশ। আর একেকজন প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মী হলেন মুজিব আদর্শ বিচ্ছুরণের বাতিঘর।

ইতিহাস সাক্ষি দেয় ছাত্রলীগের সবুজ উদ্যান থেকে যে নেতার জন্ম হয় রাজনৈতিক জীবনে সে নক্ষত্রের মতোই পরিচিত হয়। আজ ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জানাই, সারা বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিটের প্রায় ৫০ লক্ষ নেতা-কর্মীদের প্রানঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। ভালো থাকুক প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধুে

লেখকঃ মোহাম্মদ হাসান, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*