প্রাণের ৭১

প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা, আমার মৃত্যু ভয়। পর্ব ১

বাংলাদেশে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা একটি নিয়ম হয়ে গেছে।  প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে খুন, গুম স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যম গুলোতে হত্যার খবর আসছে।

 

সরকার শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে নিজেদের প্রচার করছে কিন্ত রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে না বরং আরো অবনতির দিকে চলে যাচ্ছে। শান্তি প্রিয় মানুষ নিরাপত্তার জন্য দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের মানুষের নৈতিক শিক্ষা কমে যাচ্ছে, উচ্চতর শিক্ষা নিয়েও মানুষ ধর্মান্ধ হচ্ছে। কিছু মানুষ মানবিকতা ভুলে নিজেদের ধার্মিক পরিচয় দিচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেখানে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানেও শিক্ষক দ্বারা যৌন নিপিড়ন ও হত্যার খবর প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যম গুলোতে আসছে যা ভবিষ্যতের জন্য খু্ব খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। ধর্মীয় সংখ্যালগুদের উপর নির্যাতন ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। তাদের ঘর বাড়ী জমি দখল করে নিচ্ছে ক্ষমতা সুবিধা ভোগকারীরা। অনেকে নিজ দেশে শরনার্থী হিসেবে বসবাস করছে। যারা একটু সচ্ছল তারা পরিবার সহ দেশত্যাগ করছে।  আমার পরিচিত অনেক নির্যাতিত পরিবার দেশ ত্যাগ করেছে।

 

আজ এই লেখাটি যখন বাসার সামনে সিঁড়িতে বসে লেখতেছি তখন   ২৬শে জুন, বুধবার ফ্রান্সের সময়ে রাত ১১ টা।  ফ্রান্সের কর্মজীবী মানুষ সারাদিন  কাজ শেষে ঘরে পিরছে নিরাপদে। কারো মনে শঙ্কা নাই,  বাসাতে রাতে ঘুমাবে সকাল হলে তারা আবার কাজে যাবে। বসে বসে মানুষ গুলোকে দেখি। যেন পাখিরা দিন শেষে নীড়ে পিরে আসছে, দূশ্যটি উন্নত দেশ ফ্রান্সের অবস্থা।

 

কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো। যেখানে মানুষ নিরাপদে ঘরে ঘুমাতে পারে না।  বাসা থেকে বের হলে সুস্থ ও নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নাই। যখন তখন খুন ও গুমের শিকার হতে পারে। বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে । সন্ত্রাসী ছাড়াও   সরকারী বিভিন্ন বাহিনী গুম খুনের মতো অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।  নারায়ণগজ্ঞের ৭জন হত্যা ও কক্সবাজারে কমিশনার একরাম হত্যা সাম্প্রতিক উদহারন।

 

আজ স্ত্রীকে উত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায়  বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুই যুবক। শত শত লোক দাঁড়িয়ে আসলে ঐ দুই যুবকের সাথে পরোক্ষভাবে খুনে অংশ নিয়েছিল। এই হলো আমাদের আসল চরিত্র। দুই যুবক দুইটা দাও জাতীয় জিনিস দিয়ে একজনকে কোপাচ্ছে, স্ত্রী  প্রতিরোধের চেষ্টা  করছে, আর শত শত লোক দাঁড়িয়ে দেখছে! কেউ প্রতিবাদ করছে না। মানুষ  প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। তবে অনলাইনে ব্যাবহারকারীরা এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করছে। সারাদিন খবরে হত্যাকান্ডের ছবি গুলো বারবার সামনে আসছে তা দেখে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি।

বরগুনাতে   প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করার নৃশংস দৃশ্য

 

২য় নৃশংস খবরটি হলো -পিরোজপুরে আলাদা স্থানে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২৫ জুন) রাতে সদর উপজেলার পুলিশ লাইনস ও নেছারাবাদ উপজেলার বরছকাঠি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সুত্রঃ সময় নিউজ।

 

৩য় নৃশংস খবরটি হলো -নারায়ণগঞ্জে মাদকবিরোধী অবস্থান নেয়ায় স্বামীকে হত্যার পর এবার স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (২৬ জুন) সকালে, ইউনিয়ন মহিলা লীগ নেতা ও সংরক্ষিত নারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বিউটি আক্তার কুট্টিকে কুপিয়ে হত্যা করে মাদক ব্যবসায়ীরা।

এক বছর আগে, মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়ায় বিউটি আক্তার কুট্টির স্বামী হাসান মুহুরীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এবং বাংলাদেশে জন্মস্থান উপজেলা মিরসরাইতে একজনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হইছে।

উক্ত ঘটনাগুলো একদিনের বাংলাদেশের সামাজিক চিত্র, এমন অনেক ঘটনা আমরা জানতে পারি না। এসব হত্যাকান্ডের কথা মনে হলে কোন মানুষ নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না বা নিজেকে স্বাভাবিক রাখা সম্বব নয়।

শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিরোধিতার কারনে দেশে নির্মম হত্যাকান্ড গুলো হচ্ছে তা নয়, দেশে অশিক্ষা ও উগ্র ধর্মবাদী মানুষ বেড়ে যাওয়াতে প্রকাশ্যে হত্যা ও সমর্থন বেড়ে যাওয়াতে অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে।

দেশের ন্যায় বিচারহীন সংস্কৃতি কারনে অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারন।এসকল ঘটনা যে কোন শান্তি প্রিয় মানুষকে আর্তকিত করে।

 

 

মোঃ শামসুল আরিফ

সাংবাদিক, এক্টিভিস্ট

ফ্রান্স






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*