প্রাণের ৭১

বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় আইন’ ভাঙার দায়ে ৭৪ জনকে চেয়ারম্যানের বেত্রাঘাত!

পবিত্র রমজানে রোজা না রাখা, নামাজ না পড়া ও মুখে দাঁড়ি না রাখার দায়ে একে একে ৭৪ জনকে বেত্রাঘাত করেছেন কক্সবাজারের একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা। রমজান মাসে জামায়াত নেতার বেত্রাঘাতের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র একজন আইনের আশ্রয় নেওয়ায় ঘটনাটি চাওর হয়ে গেছে। তাও নামাজ পড়ারত অবস্থায় মসজিদের ভিতরে টানা হ্যাঁচড়া করে ‘আওয়ামী লীগ যারা করে তারা নাফরমান ও ইহুদী-নছরা’ বলে মারধর করায় নির্যাতিত ব্যক্তি জামায়াত নেতার শাস্তি চেয়ে থানার আশ্রয় নিয়েছেন। এমনসব ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নে।

 

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আজ বুধবার কালের কন্ঠকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সংবিধান রয়েছে, রয়েছে প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীনতা রয়েছে নাগরিকের ধর্মীয় অনুশাসন পালনের তাই ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ইচ্ছাপূরণের কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তি আইনের আশ্রয় চেয়েছেন, তাই আইনগতভাবেই মামলা নেওয়ার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

অপরদিকে পেকুয়া-চকরিয়া আসনের এমপি জাফর আলম বলেছেন, করোনাকালের এমন সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কাজ মোটেই ভালো নয়।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল আজম জানিয়েছেন, মসজিদের ভিতর নামাজরত একজন মুসল্লীকে মারধরের ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় আজ বুধবার মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

 

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াতের রাজনীতি করেন তাই তার সাথে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা রয়েছে। শত্রুতার কারনে নুরুল ইসলামকে মসজিদের নামাজের কাতারে দেখেই চেয়ারম্যান তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে হুংকার ছেড়ে বলেন,’আওয়ামী লীগ যারা করে তারা নাফরমান ও ইহদী-নছরা’। এরপরই চেয়ারম্যানের হুকুমে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার সেলিম ও আমানুল্লাহ আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামকে নামাজের কাতার থেকে টানা-হ্যাঁচড়া করে মসজিদের বারান্দায় নিয়ে আসে। মসজিদের বারান্দায় তাকে ফেলে চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরা তাকে বেদম মারধর করেন।

 

আহত আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম কালের কন্ঠকে বলেন, আমি যদি নামাজ না পড়ে থাকি তাহলে আমাকে মসজিদের ভিতর এশার নামাজের কাতারে এভাবে মারধর কেন করা হল? আমাকে রাজীনতিক শত্রুতা হাসিলের উদ্দেশ্যেই মারা হয়েছে। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান বাহিনী নুরুল ইসলামের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া দুই শিশু পুত্র বাচ্চু মিয়া এবং আব্বাছ মিয়াকেও মারধর করেছেন।

জানা গেছে, পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী কট্টর জামায়াত রাজনীতির সাথে সম্পৃত্ত। উক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি দেশের প্রচলিত আইন-কানুনের তোয়াক্কাই করেন না। যখন তখন লোকজনদের ধরে এনে নিজের হাতেই শায়েস্তা করেন। চেয়ারম্যানের প্রকাশ্যে মারধর করার বিষয়টি এলাকায় সবারই জানা। তবে গুরুতর অভিযোগ যেটা উক্ত চেয়ারম্যান নাকি কথায় কথায় বলেন, তিনি দেশের আইন-কানুনের ধার ধারেন না। তিনি নিজের আইনেই এলাকা শাষণ করেন।

 

আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার সময় মোবাইলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী বলেন, আমার কাছে একটি ছোট তার আছে (প্লাষ্টিক কভারের বৈদ্যুতিক তার)। তার দিয়ে আমি মারধর করে থাকি। এটা আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আমি এ পর্যন্ত দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কট্টর জামায়াতপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান জিহাদী অকপটে স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়নটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি বসবাস করেন। এখানকার ফাঁসিয়াখালী নামের একটি বড় গ্রামে ৩টি সমাজ রয়েছে। এসব সমাজে যারা নামাজ পড়েন না, যারা রোজা রাখেন না এবং মুখে দাঁড়ি রাখেন না তিনি তাদের তালিকা করেছেন। এরকম তালিকাভুক্ত ৭৪ জনকে তার কাছে থাকা তারটি দিয়ে একে একে সবাইকে মারধর করেছেন। চেয়ারম্যান জিহাদী মারধরের বিষয়টি জায়েজ বলে জানান।

 

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম এ প্রসঙ্গে বলেন, পেকুয়ার বারবাকিয়া ইউনিয়নটিতে জামায়াত-শিবিরের জন্য একটি উর্বর এলাকা। জামায়াতপন্থী ইউপি চেয়ারম্যান করোনাকালের এমন পরিস্থিতিতে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির মাধ্যমে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, এমন সুযোগ কিছুতেই দেওয়া হবে না।

কালের কণ্ঠ






মতামত দিন।

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*